অনিশ্চিত বাড়ি ফেরা, মৃত সন্তান নিয়ে অপেক্ষায় কাশ্মীরি বাবা
হাসপাতালের মেঝেতে শুকনো মুখে বসেছিলেন বিলাল মাণ্ডু। ডান হাতে আঁকড়ে রেখেছেন ছোট্ট একটি বাক্স। দুঃখ করে বললেন, ‘আমাদের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। সবই ঈশ্বরের ইচ্ছা। তবে এমনটা হবে ভাবিনি।’
বাক্সের গায়ে সস্নেহে হাত বুলিয়ে বিড়বিড় করে উঠলেন এই কাশ্মীরি যুবক। জানালেন এখানেই রয়েছে তাদের আদরের সন্তানের দেহ। চারদিন আগে শ্রীনগরের লাল দেদ হাসপাতালে মৃত সন্তান প্রসব করেন তার স্ত্রী। কার্ফুর কবলে থাকা কাশ্মীরে সেই দুঃসংবাদ পৌঁছায়নি বিলালের বাড়িতে। যেখানে প্রথম নাতি-নাতনির মুখ দেখতে অধীর আগ্রহে বসে আছেন বৃদ্ধ দাদা-দাদি।
গত ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপ এবং রাজ্যকে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে থেকে উপত্যকার বিভিন্ন জয়গায় দফায় দফায় চলছে কার্ফু। মোবাইল, ল্যান্ড ফোন, ইন্টারনেটসহ যোগাযোগের যাবতীয় মাধ্যম বন্ধ রাখা হয়েছে।
এই অবস্থায় ৮ আগস্ট শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় বিলালের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রাজিয়ার। স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে কুপওয়ারার একটি হাসপাতালে যান বিলাল। অর্ধেকের বেশি রাস্তাই পায়ে হেঁটে যেতে হয়েছে। সেখান থেকে রাজিয়াকে শ্রীনগরে নেয়া হয়। সন্তানহারা বিলাল বলেন, ‘এখানে আসতেই অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। ততক্ষণে সব শেষ।’
সন্তানের মরদেহ নিয়ে এবার বাড়ি ফিরতে চান বিলাল। তিনি বলেন, ‘বাবা-মা সদ্যোজাত নাতিকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষা করছেন। ওদের হাতে এই মৃতদেহ তুলে দেব কীভাবে? হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে একমাত্র অ্যাম্বুল্যান্স ছাড়া বাড়ি ফেরার উপায় নেই। তাও পাওয়ার জন্য রীতিমতো লড়াই করছি।
একটি নির্দিষ্ট জেলা থেকে রোগী নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স এলে ঘোষণা করা হয়। এরপর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া ওই জেলার রোগীরা লাইন দেন ওই অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য। শুক্র শনিবার ঈদের তোড়জোড়ের জন্য শ্রীনগরের রাস্তায় হাতেগোনা গাড়ির দেখা মিললেও গ্রামাঞ্চলে এখনও যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ স্তব্ধ। কবে নাগাদ সন্তানের মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফেরা হবে তাও জানেন না বিলাল আর তার স্ত্রী।
টিটিএন/জেআইএম