আমরা এখন কাশ্মীরি মেয়ে আনতে পারব : মুখ্যমন্ত্রী
ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্ম-কাশ্মীরকে দিখণ্ডিত করেছে মোদি সরকার। ভারতীয়রা মোদির এমন সিদ্ধান্তের পর উদযাপন করেছেন উৎসবের সঙ্গে। গুগল বলছে গত কিছুদিনে ভারতের মানুষ সবচেয়ে বেশি ‘সার্চ’ করেছে ‘কাশ্মীরি গার্ল’। এবার দেশটির এক মুখ্যমন্ত্রী বললেন বিয়ের জন্য তারা এখন কাশ্মীরি মেয়ে ‘আমদানি’ করতে পারবে।
মন্তব্যটি করে ইতোমধ্যে সমালোচনার শিকারও হয়েছেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টা। সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘এখন আমরা বিয়ের জন্য কাশ্মীরি মেয়ে আনতে পারব। তার এ আহ্বানের পরপরই গুগলে ‘কাশ্মীরি গার্ল’ ও ‘ম্যারি কাশ্মীরি গার্ল’ সার্চ আরও বেড়ে গেছে।
ভারতীয় সংবিধানে দেয়া কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা গত ৫ আগস্ট বাতিল করে বিজেপি সরকার। সংবিধানের অনুচ্ছেদ বাতিল উদ্যাপনের এক অনুষ্ঠানে উত্তর প্রদেশের মোজফফরনগরের বিজেপির বিধায়ক বিক্রম সাইনি ফরসা কাশ্মীরি মেয়েদের বিয়ে করার আহ্বান জানান। তার এমন আহ্বানের পরপরই গুগলে ‘কাশ্মীরি গার্ল’ ও ‘ম্যারি কাশ্মীরি গার্ল’ সার্চ শুরু হয়।
প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি নেতা রাহুল গান্ধী হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর কাশ্মীরি মেয়েদের নিয়ে করা মন্তব্যকে ‘জঘন্য’বলে আখ্যা দিয়েছেন। গত কয়েক দিনে ভারতে গুগল সার্চের সবচেয়ে বেশি খোঁজা হয়েছে কাশ্মীরি গার্ল শব্দটি। এরপরই ম্যারি কাশ্মীরি গার্ল সার্চ হয়েছে।
কাশ্মীর ইস্যুর মধ্যে সেখানকার মেয়েদের বিয়ে করা ও তাদের ছবি ইন্টারনেটে খুঁজে দেখার প্রসঙ্গ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বাংলার মানুষের সন্ধানের ৮৭ শতাংশ খুঁজছেন কাশ্মীরি নারীদের। ১৩ শতাংশ মানুষ কাশ্মীরি মেয়েদের বিয়ের নিয়মকানুন সম্পর্কে জানতে চায়।
ভারতের গত কয়েকদিনের গুগল সার্চে যত বার ‘ম্যারি কাশ্মীরি গার্ল’ সার্চ করেছেন তার মধ্যে প্রথমে স্থানে রয়েছে কেরালা। দ্বিতীয় স্থানে আছে কর্নাটক। এই দুই রাজ্যের মানুষ পড়ি মরি খুঁজছেন কাশ্মীরি মেয়েদের বিয়ের সুলুকসন্ধান।
তার পরেই রয়েছে দিল্লি, মহারাষ্ট্র এবং তেলেঙ্গনা। তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে পশ্চিমবঙ্গ। সপ্তম ও অষ্টম স্থানে যথাক্রমে তামিলনাড়ু ও উত্তরপ্রদেশ। ঝাড়খণ্ড ও উত্তরাখণ্ড থেকে সব থেকে বেশি গুগ্ল সার্চ এসেছে কাশ্মীরি মেয়েদের নিয়ে। সেই তালিকায় ১৬ নম্বর স্থানে আছে পশ্চিমবঙ্গ।
সংবিধানের ৩৭০ও ৩৫ (ক) অনুচ্ছেদ বাতিলের আগে বিশেষ মর্যাদাপ্রাপ্ত জম্মু-কাশ্মীরের মেয়েরা তাদের রাজ্যের বাইরে বিয়ে করতেই পারতেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে বিয়ের পরে তারা বাপেরবাড়ির সব সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হতেন। জম্মু-কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হয়ে গেলে এই বঞ্চিত হওয়ার পর্বও বাতিল হবে।
গত ৫ আগস্ট কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা প্রদানকারী ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। শুধু বিশেষ মর্যাদা বাতিল নয় কাশ্মীরকে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ নামে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করা হয়।
গোটা ভারতের রাজনীতি এখন কাশ্মীর নিয়ে উত্তাল। বিজেপিসহ ভারতীয়রা কাশ্মীরের মর্যাদা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্ত উদযাপন করছেন। কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলো কিছুটা প্রতিবাদ জানালেও তা বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতার তুলনায় খুবই নগণ্য।
কাশ্মীরিরা যাতে এর কোনো প্রতিবাদ করতে না পারে তাই সেখানে নেয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেখানকার মানুষ এখন সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ। মোদি সরকারের মাস্টারে প্ল্যানের কাছে হেরে বিক্ষোভে ফুঁষে উঠেছে কাশ্মীর মানুষ।
কারফিউ জারি থাকার কারণে সেখানে মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করতে পারছে না। এ ছাড়া সেখানকার সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী এবং পাঁচ শতাধিক প্রভাবশালী স্থানীয় নেতাসহ সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম সামরিকায়িত এলাকাগুলোর একটি কাশ্মীর। ভারতীয় সংবিধোনের ৩৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এতদিন কাশ্মীর প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়া কোনো কিছুতেই ভারতীয় আইন মানতে বাধ্য ছিল না। কিন্তু মোদি তা বাতিল করেছে। এ ছাড়া রাজ্যের মর্যাদাও হারিয়েছে কাশ্মীর।
এসএ/এমএস