জম্মু-কাশ্মীর ঘোষণার আগে যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে বিজেপি
জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সংক্রান্ত ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিলের আগে থেকে পরিকল্পনা ছিল ক্ষমতাসীন বিজেপি দল। প্রায় ১১ দিন আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জম্মু ও কাশ্মীরের কর্মকর্তাদের একটি ডেডলাইন দিয়েছিল। সে সময়ই ৫ আগস্ট বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানানো হয়।
এর আগেই রাজ্যে বিপুল পরিমাণে আধা-সামরিক সেনা মোতায়েন করার কথা বলা হয়েছিল যেন ৩৭০ ধারা বাতিল করায় কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনও অসন্তোষ প্রদর্শিত হলে তার মোকাবিলা করা যায়। ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি-কে একটি সূত্র এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। জম্মু ও কাশ্মীরের বর্ষীয়ান কর্মকর্তারা আগে থেকেই জানতেন যে, কী হতে চলেছে। তারা কেবল এই ঘোষণার অপেক্ষায় ছিলেন।
জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গৃহীত পদক্ষেপ অভূতপূর্ব এবং ১৯৭১ সালের পর থেকে এমন পদক্ষেপ আর নেয়া হয়নি। সেবছর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তান থেকে জন্ম হয়েছিল স্বাধীন দেশ বাংলাদেশের।
এই প্রক্রিয়া শুরু হয় কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী বা সিআরপিএফ সেনা মোতায়েনের মধ্য দিয়ে। রোববার সন্ধ্যার মধ্যে অন্তত ৪৩০ কোম্পানি অর্থাৎ ৪৩ হাজার সিআরপিএফ সেনা মোতায়েন করা হয়।
সম্প্রতি প্রাপ্ত জি-১৭ গ্লোবমাস্টার বিমানে করে ওই সেনাদের নিয়ে আসে বিমানবাহিনী। কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় এক সপ্তাহেরও কম সময়ে একশোটিরও বেশি পদক্ষেপ নিয়েছে বিমানবাহিনী। সারা দেশ থেকে জওয়ানদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরে।
রোববার গভীর রাতে মোবাইল ব্রডব্যান্ড পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রোববার রাত এগারোটার পরে শ্রীনগরের অধিকাংশ অঞ্চলের মোবাইল ব্রডব্যান্ড পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। মোবাইল ফোনের পরিষেবাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সোমবার ভোর ৪টার মধ্যে ল্যান্ডলাইন পরিষেবাও বন্ধ হয় শ্রীনগরের বেশ কিছু অঞ্চলে। কোনও প্রতিহিংসামূলক প্রতিক্রিয়া যেন তৈরি না হয় সেজন্যই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
শুক্রবার অমরনাথ যাত্রা স্থগিত করে দেওয়ার পর সমস্ত তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের রাজ্য ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তারপর থেকেই রাজ্যের সব অতিথি নিবাস বন্ধ রাখা হয়। তাছাড়া এই প্রথমবার শ্রীনগরের রাজ্য প্রশাসন ভিনরাজ্যের সাংবাদিকদের তাদের হোটেল থেকে বেরিয়ে এসে সরোবর পোর্টিকো হোটেলে উঠতে বলেছে যা মধ্য শ্রীনগরে অবস্থিত কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থাসম্পন্ন।
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সাংবাদিকদের সুরক্ষা দিতে। রেডিও কাশ্মীর ও নিশাত গার্ডেনসের মধ্যবর্তী এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণে টাকা রাখা হয়েছে। জ্বালানিও মজুত রাখা হয়েছে। কতদিন এমন চলবে, সে সম্পর্কে কিছুই বলা যাচ্ছে না। তবে এটা দীর্ঘ সময় ধরে চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
টিটিএন/এমএস