চাঁদের মাটির নিচে হবে বাঙ্কার, মিলতে পারে জ্বালানিও
পৃথিবীতে আর বসবাসের জো নেই। বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, প্লাস্টিক দূষণ, আলো দূষণের মতো নানা ধরনের দূষণে এর পরিবেশ পুরোপুরি নষ্টের পথে। এ পরিস্থিতিতে পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোনো গ্রহ কিংবা উপগ্রহে বসবাসের পরিকল্পনা করা ছাড়া উপায় নেই। আর এক্ষেত্রে চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহের নাম আসে সবার আগে।
বিশ্বখ্যাত পদার্থবিদ ও মহাকাশ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলে গেছেন, আগামী ৫০ বছরের মধ্যে চাঁদের বসতি গড়বে মানুষ। আর যদি এই সময়ের মধ্যে নতুন গ্রহে বসতি গড়তে মানুষ সফল না হয়, তাহলে পৃথিবী এতটাই ঘন জনবসতিপূর্ণ হয়ে উঠবে যে, মানবজাতির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।
চাঁদে যাওয়ার পরিকল্পনা চলছে। সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সেখানে পাড়ি দিয়েছে ভারতের চন্দ্রযান-২। গত সোমবার কাউন্টডাউন শেষে স্থানীয় সময় ২টা ৪৩ মিনিটে এ যানটি যাত্রা শুরু করে। বাহুবলী নামের রকেটে চেপে চাঁদের অন্ধকার দিকের রহস্য উদ্ঘাটন করবে চন্দ্রযান-২।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলে গেলে কোন কোন বাধার মুখে পড়তে হবে, কোন ধরনের পরিবেশ পেতে হবে আর তাতে কীভাবে মানিয়ে নিয়ে লড়াই করে টিকে থাকতে হবে, সেটাই বুঝে ও শিখে নিতে চাঁদে নামতে রওনা দিয়েছে চন্দ্রাভিযান-২।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, চাঁদের মাটিতে সৃষ্টির আদি সময়ের ফসিল (কঙ্কাল) অবিকৃত অবস্থায় থাকতে পারে। তবে সব জায়গায় থাকতে পারে না। চাঁদের যেসব জায়গায় সূর্য বিমুখ শুধু সেখানেই থাকতে পারে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে যেহেতু বেশকিছু এলাকায় সূর্য রশ্মি সরাসরি এসে পড়ে না, সেহেতু সূর্যের বিকিরণগত পরিবর্তনও সেখানে কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর তাতেই ফসিল অবিকৃত থাকবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
চন্দ্রযান ২-এর অভিযাত্রী যান প্রজ্ঞান আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সেসব তথ্যই খুঁজে বের করবে- এমন আশা নিয়েই ৮৫১ কোটি টাকার এই প্রকল্প পরিকল্পনা করেছে ইসরো। সেই সঙ্গে চাঁদের মাটিতে চন্দ্রযান-১ যে জলকণার সন্ধান পেয়েছিল তা নিয়ে আরও বিশদ গবেষণা করবে।
আরও পড়ুন > ৫০ বছর আগে প্রথম চাঁদে যাওয়ার ছবি দেখুন
বসবাস উপযোগী কিছু উপাদানের সন্ধান পেলেও পাকাপাকিভাবে চাঁদে থাকার কথা বিজ্ঞানীরা খুব একটা যে ভাবছেন, তা না। তবে অল্প কিছুদিনের জন্যে সেখানে গিয়ে থাকতে হবে। সে জন্য চাঁদের পৃষ্ঠের (লুনার সারফেস) এক থেকে দুই মিটার নিচে বাঙ্কার বানাতে হবে। কারণ, অল্প সময়ের জন্যেও চাঁদে থাকা সম্ভব নয়। তার বায়ুমণ্ডল নেই।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল আমাদের অনেক রকমের ঝড়-ঝাপটা থেকে বাঁচায়। বায়ুমণ্ডল থেকে সৌরবায়ু, সৌরঝড়, করোনাল মাস ইজেকশানের মতো ভয়ঙ্কর সব শত্রুরা ধেয়ে আসে। বায়ুমণ্ডল না থাকলে এদের দাপটে মানুষের জন্ম বা টিকে থাকা আদৌ সম্ভব হতো না।
কিন্তু চাঁদের বায়ুমণ্ডল বা শক্তিশালী কোনো চৌম্বক ক্ষেত্র নেই। ফলে, সূর্য থেকে ধেয়ে আসা কণা আর মহাজাগতিক রশ্মি (কসমিক রে) প্রতি মুহূর্তেই চাঁদের বুকে আছড়ে পড়ছে। এসব এড়িয়ে টিকে থাকতে হলে চাঁদের পিঠের নিচে কিছুটা গভীরতায় বাঙ্কার বানাতে হবে। বাঙ্কারের উপরটা এমন কোনো পদার্থ দিয়ে বানাতে হবে, যাতে তা ধেয়ে আসা শত্রুদের পুরোপুরি শুষে নিতে পারে। চাঁদে বাঙ্কার বানিয়ে ফেলার অভিজ্ঞতাটাই মঙ্গলে মানবসভ্যতার দ্বিতীয় উপনিবেশ গড়ে তোলার সময় কাজে লাগবে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, তরল পানির সবচেয়ে বড় ভাণ্ডারটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে রয়েছে। ফলে, বসবাসের জন্য সেখানে পানির অভাব হবে না। আবার সেই পানির একটি অংশকে সহজে ও কম খরচে তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন গ্যাসে ভেঙে নিতে পারলে ওই দুটি গ্যাস দুই ভাবে প্রয়োজন মেটাতে পারে। ওই অক্সিজেন গ্যাস যেমন শ্বাসের বাতাস জোগাতে পারে, তেমনই হাইড্রোজেন গ্যাস জ্বালানি হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে।
এমএসএইচ/জেআইএম