এলিয়েন দেখতে ফেসবুক ইভেন্ট, যুক্তরাষ্ট্রে সতর্কতা জারি
এ বিশাল মহাবিশ্বে সূর্যের মতো অসংখ্য নক্ষত্র রয়েছে। তাদের কোনোটিতে পৃথিবীর মতো সৌরশক্তি উৎপাদনের ব্যবস্থা থাকতেই পারে। আর সেটা যদি থাকে তাহলে সেখানে প্রাণের অস্তিত্বও আছে। মহাবিশ্ব অনেক বড় হওয়ায় স্টিফেন হকিং এবং কার্ল সেগানের মতে, পৃথিবীর বাইরে কোনো গ্রহে বা অন্য কোথাও প্রাণ থাকার সম্ভাবনা বেশি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণীর সন্ধান করে বেড়াচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কেউ বলছেন, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কোথাও না কোথাও নিশ্চয়ই এলিয়েন আছে। আবার কেউ বলেছেন, এলিয়েন থাকা অসম্ভব। এলিয়েনের ধারণা নিয়ে বিভিন্ন দেশে গল্প, সিনেমা নির্মিত হয়েছে। এসব পড়ে ও দেখে অনেকে বিশ্বাস করেন, সত্যিই এমন কোনো কিছু আছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত ভিনগ্রহ থেকে আসা কোনো প্রাণী বা এলিয়েনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে অনেকেই এলিয়েনের অস্তিত্বের কথা বিশ্বাস করেন। শুধু তাই নয়, তাদের ধারণা যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই কোথাও না কোথাও কোনো এক সময় এলিয়েন এসেছিল। তাদেরকে নেভাডার এরিয়া ৫১ নামের প্রত্যন্ত একটি এলাকায় লুকিয়ে রেখেছে সরকার। এলিয়েন লুকিয়ে রাখার এই ধারণায় বিশ্বাসীদের সংখ্যা বাড়ছে। এলিয়েন দেখার আশায় এখন নেভাডার এরিয়া ৫১ নামের সেই জায়গায় যাওয়ারও পরিকল্পনা করছে তারা।
হাস্যরসের মধ্য দিয়ে ঘটনাটির শুরু। এলিয়েন দেখতে নেভাডার প্রত্যন্ত ওই এলাকাটিতে যাওয়ার জন্য ফেসবুকে একটি ইভেন্টে খোলা হয়। ইভেন্টের নাম- স্টর্ম এরিয়া ৫১, দে ক্যান্ট স্টপ অল অব আস। অর্থাৎ চলো যাই এরিয়া ৫১, আমাদের থামাতে পারবে না তারা। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর তারা নেভাডারে যাবে। গত মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) পর্যন্ত এই ইভেন্টে ১৩ লাখেরও বেশি মানুষ সাইন-আপ করেছে। এছাড়া 'আগ্রহী' হিসেবে চিহ্নিত করেছে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ।
তবে এ রকম পরিস্থিতিতে মার্কিন বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, কেউ যেন এরিয়া ৫১-এর ধারে-কাছেও না যায়। নেভাডার এলাকাটি বিমান বাহিনীর অত্যন্ত গোপনীয় একটি ঘাঁটি। ইভেন্টে সাইন-আপ বেশিরভাগ মানুষেরই বিশ্বাস, সেখানে ভিনগ্রহ থেকে আসা প্রাণীদের লুকিয়ে রাখা হয়েছে।
উৎসাহী ব্যক্তিরা বিমান বাহিনীর সতর্কতাকে মোটেও পাত্তা দিচ্ছে না। কয়েক হাজার মানুষ সেখানে এমনও মন্তব্য করেছেন যে, ‘তাদের বুলেটের চেয়েও দ্রুত গতিতে ছুটতে পারি আমরা। এলিয়েনদের দেখতে দাও।’
নেভাডার এরিয়া ৫১
জ্যাকসন বার্নেস নামে ফেসবুকে এই ইভেন্টের একজন আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উদ্দেশ্যে লিখেছেন, এটা একটা মজার বিষয়। এই পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগুনোর কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। আমি শুধু ভেবেছি এটা খুব মজার বিষয় হবে। এখন লোকজন যদি সত্যিই এরিয়া ৫১-তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে এর জন্যে আমি দায়ী থাকবো না।
কিন্তু মার্কিন বিমান বাহিনী এ ইভেন্টকে এখন আর মজার বিষয় হিসেবে নিচ্ছে না। বিমান বাহিনীর একজন মুখপাত্র ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, তারা এই কর্মসূচি সফল হতে দেবে না। যুক্তরাষ্ট্র তার সম্পদ রক্ষার জন্যে প্রস্তুত।
বিমান বাহিনীর আরেক মুখপাত্র বলেন, এরিয়া ৫১ হচ্ছে মার্কিন বিমান বাহিনীর একটি উন্মুক্ত প্রশিক্ষণ রেঞ্জ। যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর লোকজনকে সেখানে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এ জায়গায় আসার ব্যাপারে আমরা লোকজনকে নিরুৎসাহিত করছি।
২০১৩ সাল পর্যন্ত নেভাডার এরিয়া ৫১ সম্পর্কে জনগণ জানতো না। এর আগে এই এলাকাটিকে গোপন রাখা হয়েছিল। কিন্তু ইউ-টু নামের একটি গোয়েন্দা বিমানের ব্যাপারে গোপন তথ্য প্রকাশ করতে গিয়ে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ প্রথমবারের মতো এরিয়া ৫১-এর কথা স্বীকার করে।
বিশ্লেষকদের ধারণা, এই এলাকাটিকে ঘিরে এতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও গোপনীয়তা রক্ষা করা হয় বলেই সেখানে এলিয়েন লুকিয়ে রাখার মতো ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্বে’র জন্ম হয়েছে। এই তত্ত্বকে ঘিরে গুজবের ডালপালা এতোই বিস্তৃত হয়েছে যে, এই ইভেন্টে যাওয়ার পরিকল্পনা যারা করছেন তাদের অনেকেই ধারণা করছেন, তাদের গতিবিধির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই নজর রাখছে।
‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ বিশ্বাসীদের অনেকেই মনে করছে, এলিয়েনের জীবন ও ইউএফও সম্পর্কে মার্কিন সরকারের কাছে অনেক তথ্য আছে। কিন্তু সেগুলো তারা জনগণের কাছে গোপন রেখেছে।
বব লাজার নামে এক ব্যক্তি নেভাডার এরিয়াতে কাজ করতেন। ১৯৮৯ সালে টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি যখন এ রকম কিছু দাবি করেন, তখনই এই ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ তীব্র হতে শুরু করে। তবে লাজার যেসব দাবি করেছেন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য প্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
এমএসএইচ/জেআইএম