নেতাজীর গোপন ফাইল প্রকাশ করবে পশ্চিমবঙ্গ
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু সংক্রান্ত যাবতীয় গোপন ফাইল প্রকাশ্যে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাজ্য প্রশাসনের হেফাজতে থাকা এসব নথি মানিকতলা মোড়ের কাছে কলকাতা পুলিশের ডিসি (উত্তর) অফিসের মহাফেজখানায় রাখা থাকবে। আগামী শুক্রবার থেকে সাধারণ মানুষ তা দেখতে পারবেন।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর গোপন ফাইলের সংখ্যা ৬৫। মুখ্যমন্ত্রী জানান, এর মধ্যে কলকাতা গোয়েন্দা পুলিশের (এসবি) কাছে ৫৫টি ফাইল আছে। রাজ্য পুলিশের কাছে ৯টি। এছাড়া অন্য আরেকটির কোনো হদিস এখনো পাওয়া যায়নি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, ভাবতে অবাক লাগে, আমরা তাঁর জন্মদিন জানি, মৃত্যুদিন জানি না। আদৌ মারা গিয়েছেন কি না, সেটাও জানি না।
ফাইল প্রকাশের কারণ হিসেবে মমতার এই যুক্তি আখেরে ফরওয়ার্ড ব্লক এবং মুখোপাধ্যায় কমিশনের ‘বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়নি’ গোছের তত্ত্বকেই স্বীকৃতি দিলো বলে মনে করছেন অনেকে। তাদের মতে, নিজের যুক্তি তুলে ধরতে গিয়ে তৃণমূলেরই ইতিহাসবিদ-সাংসদ সুগত বসু, প্রাক্তন সাংসদ কৃষ্ণা বসু, এমনকি নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোর তত্ত্বও এ দিন মাথায় রাখেননি মুখ্যমন্ত্রী।
ফাইল প্রকাশ নিয়ে সুগত বসু বলেন, সঠিক সিদ্ধান্ত। তথ্য জানার অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হল। আমি সংসদেও বলেছি, ৫০ বছরের পুরনো সব তথ্য ও নথি প্রকাশ্যে আনা উচিত। অনেক দেশ আজকাল তারও আগে নথিপত্র জনসাধারণের জন্য বের করে দিচ্ছে।
সুগত বসু ‘হিজ ম্যাজেস্টিজ অপোনেন্ট’ বইয়ে বিমান দুর্ঘটনার তারিখ উল্লেখ করেছেন ১৮ অগস্ট, ১৯৪৫। নেতাজির মৃত্যু রহস্যের অনুসন্ধানে গঠিত শাহনওয়াজ কমিশন, খোসলা কমিশন এবং মুখোপাধ্যায় কমিশন নিয়ে আলোচনাও ছিল বইয়ের শেষ অধ্যায়ে।
একমাত্র মুখোপাধ্যায় কমিশন বলেছিল, নেতাজির ডেথ সার্টিফিকেট নেই। তাইওয়ান সরকারের বক্তব্য ছিল, ওই দিনে বিমান দুর্ঘটনার কোনো রেকর্ড তাদের হাতে নেই। এবং সুগত তার বইয়ে পরিষ্কার দেখিয়েছিলেন, ঘটনার দুদিন আগে জাপান আত্মসমর্পণ করে, জাপানের অধীনে তাইওয়ানও ছিল টালমাটাল।
সুগত বসু বলেন, ইতিহাসবিদ হিসেবে আমার যা লেখার ছিল, ওই অধ্যায়ে লিখে দিয়েছি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছেন, ফাইলগুলো খতিয়ে দেখা হয়েছে। তবে এসব ফাইলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার কোনো যোগাযোগ পাওয়া যায়নি।
কেউ কেউ অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে গণতান্ত্রিক ভাবনার চেয়ে আসন্ন ভোটের বাজারে বিজেপিকে টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। মমতা নিজেই বলেছেন, কাগজগুলি প্রকাশ্যে আনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে অনেক বার অনুরোধ করেছি। কিন্তু কিছু হয়নি। তাই আমরাই ওই বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীর সমস্ত নথি প্রকাশে উদ্যোগী হয়েছি।
প্রাক্তন সাংসদ কৃষ্ণা বসু বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে নেতাজিকে নিয়ে ৩০টি গোপন ফাইল আছে। ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদি সেগুলি প্রকাশ করবেন বলেছিলেন, কিন্তু এখনো করে উঠতে পারেননি। বস্তুত, মমতার ঘনিষ্ঠ মহল মনে করছে, রাজ্যের কাছে থাকা সমস্ত ফাইল প্রকাশ করে অত্যন্ত সাহসী সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার।
এদিকে সাংসদ সুগত বসু বলেন, ফাইলগুলি যত অন্ধকারে থাকবে, লোকে তত বেশি নেতাজির মৃত্যুরহস্য নিয়ে কথা বলবে। তাঁর জীবন ও কাজ নিয়ে নয়।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা।
এসআইএস/আরআইপি