এরশাদের শৈশব কাটানো কোচবিহারেও শোক
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আর নেই। রোববার সকাল পৌঁনে আটটায় রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এরশাদের মৃত্যুতে তার শৈশবের শহর বর্তমানে ভারতের কোচবিহার জেলার মানুষও শোকাহত।
১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের কোচবিহার জেলায় এরশাদের জন্ম। স্বাধীন বাংলাদেশে সেনা অভূত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের শৈশব কেটেছিল কোচবিহার জেলার দিনহাটায়। দিনহাটা স্কুলের ছাত্র ছিলেন তিনি।
ছেলেবেলার এই শহরেই শিক্ষার প্রাথমিক পাঠ নেন বাংলাদেশের সাবেক এ সেনাপ্রধান। দিনহাটা স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর, ১৯৪৬ সালে রংপুরের কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন এরশাদ। সেখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।
দেশভাগের পর কোচবিহার যুক্ত হয় ভারতের সঙ্গে। এরশাদের বাবা মুহম্মদ মকবুল হোসেন ছিলেন দিনহাটার বাসিন্দা। কিন্তু দেশভাগ হলে দলে দলে মুসলিমদের সঙ্গে তিনিও পৈত্রিক ভিটে ছেড়ে স্থায়ীভাবে চলে আসেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে।
দিনহাটায় এরশাদের মাত্র একজন বন্ধু এখন জীবিত আছে। তার নাম সুধীর সাহা। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সকালেই ওর মৃত্যু সংবাদ পেয়েছি। খুব খারাপ লাগছে। আমি ছিলাম ওর (এরশাদ) সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। দেশ ছেড়ে চলে গেলেও নিয়মিত আমায় চিঠি লিখত। ফোন করে কথা বলতো।’
২০১৭ সালে দিনহাটায় গিয়েছিলেন এরশাদ। তার বন্ধু সুধীর সাহা বলেন, ‘যেদিন ও দিনহাটায় এলো, আমি তাকে আনতে চ্যাংরাবান্ধা সীমান্তে গিয়েছিলাম। আমাকে দেখে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘তোর জন্যই দিনহাটায় এলাম। পরের দিন অনেক উপহার নিয়ে আমার বাড়িতে এসেছিল। আমরা ছোটবেলার গল্প করেছিলাম।’
দিনহাটা স্কুলে একসঙ্গে পড়াশোনা করেছেন সুধীর আর তাল বাল্যবন্ধু এরশাদ। সেই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনে বলেন, ‘একবার লুকিয়ে পুটিমারি বলে একটা বাগানে কুল চুরি করতে গিয়েছিলাম। সেটা জানতে পেরে মকবুল কাকা (এরশাদের বাবা) আমাদের দুজনকে খুব শাসন করেছিলেন।’
সুধীর সাহা সেই ছোটবেলার গল্প শোনালেন, ‘খুব ভাল ফুটবল খেলত এরশাদ। ফরওয়ার্ড আর গোলকিপার দুটোতেই ছিল ও দারুণ। আমার থেকে দুই বছরের ছোট হলেও এরশাদ ছিল আমার একমাত্র প্রিয় বন্ধু।’
দিনহাটার বাড়িতে এখনও এরশাদের চাচাতো ভাই মোসাব্বর হোসেন বসবাস করেন। তিনি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোচবিহার জেলা আইনজীবী। এখন অবসর নিয়েছেন। তার চাচাতো ভাই বলেন, ‘আমাদের পরিবারের প্রধান চলে গেলেন। উনি সারাবিশ্বে আমাদের বংশের নাম উজ্জ্বল করেছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হয়ে। ছোটবেলায় খুব দুরন্ত ছিলেন। ডাকনাম ছিল পেয়ারা। এই নামেই দিনহাটার সবাই তাকে চেনে।’
দাদার জন্ম অবিভক্ত রংপুরের কুড়িগ্রামে মামার বাড়িতে। জন্মের পর দাদাকে নিয়ে মকবুল জ্যাঠা চলে আসেন দিনহাটায়। আজ আমাদের কাঁদিয়ে চলে গেলেন। আল্লাহ উনার বেহস্ত নসীব করুন। আমার ছেলে আহসান হাবিব উনার প্রয়াণের খবর পেয়ে আজ সকালেই বাংলাদেশে গেছেন।
এরশাদের পাশের বাড়িতে থাকেন সাবেক ছিটমহল আন্দোলনের নেতা ও বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির রাজ্যনেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, ছিটমহল বিনিময়ের আন্দোলনে উনার ভূমিকা অতুলনীয়। সবসময় উনি আমায় ব্যক্তিগতভাবে পরামর্শ দিতেন। উনার প্রয়াণে দেশভাগের আরও একটা স্মৃতি মুছে গেল।
দীপ্তিমান বলেন, উনার বাবা মকবুল হোসেন ছিলেন কোচবিহারের রাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ ভূপবাহাদুরের অ্যাডভোকেট। আর আমার দাদু ধীরেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ছিলেন রাজার কবিরাজ। দিনহাটা শহরের ফুলদীঘির ডানদিকে উনার বাড়ি আর বামদিকে আমাদের বাড়ি। দিনহাটার প্রাচীনতম পাওনিয়ার ক্লাবের সক্রিয় সদস্য ছিলেন এরশাদ চাচা। যা তৎকালীন সময়ে রাজার ক্লাব বলে পরিচিত ছিল। উনার প্রয়াণে আজ দিনহাটা শোকস্তব্ধ।
এসএ/এমএসএইচ