২০ বছরে ২০ লাখ গাছ লাগিয়ে মরুভূমিকে অরণ্য বানালেন এই দম্পতি
চারিদিকে ছিল শুষ্ক খাঁ খাঁ জমি। ধীরে ধীরে সেই জমি ভরে উঠল সবুজে। হয়ে উঠল আস্ত জঙ্গল। গল্পের মতো শোনালেও বাস্তবেই ঘটেছে এরকম এক ঘটনা। ব্রাজিলের বুকেই ইনস্টিট্যুটো টেরা নামের জায়গায় এক ব্রাজিলিয়ান দম্পতির চেষ্টায় গড়ে উঠেছে সবুজ অরণ্য; যা আজ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর ঠিকানা।
ব্রাজিলিয়ান দম্পতি চিত্রসাংবাদিক সেবাস্তিয়াও সালগাদো এবং তার স্ত্রী লেলেয়া ডেলুইজ ওয়ানিক সালগাদোর দীর্ঘ ২০ বছরের চেষ্টায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া জঙ্গল প্রতিস্থাপনের গল্পটি আপনাকেও অনুপ্রাণিত করবে।
বিখ্যাত ব্রাজিলিয়ান এই চিত্রসাংবাদিক ছোটবেলায় অরণ্যের কাছাকাছি অঞ্চলে থাকলেও পরে কাজের সূত্রে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় পাড়ি দেন। বহু বছর পর পরে দেশে ফিরে বন্যপ্রাণী ভরা অরণ্যের জায়গায় শুকনো জমি দেখে হতাশ হন।
কিন্তু কী করে ঘন সবুজ বন একেবারে হারিয়ে গেল? সেবাস্তিয়াও জানান, এর জন্য অনেকটাই দায়ী তাদের পরিবার। পারিবারিক ও আর্থিক কারণে এলাকার বেশির ভাগ গাছ কেটে ফেলেন তার বাবা। সেই ‘পাপ’ ঢাকতে মনস্থির করেন সস্ত্রীক সেবাস্তিয়াও। এ ভাবেই শুরু হয় এই দম্পতির বন প্রতিস্থাপনের আশ্চর্য যাত্রা।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সেবাস্তিয়াও বলেন, ‘জমিটির সব কিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। মাত্র ০.৫ শতাংশ জমিতে গাছ ছিল। এরপর আমি ও আমার স্ত্রী মিলে এই বনের একটি প্রতিলিপি কল্পনা করে কাজ শুরু করলে ধীর ধীরে কীটপতঙ্গ, পাখি, মাছ ফিরে আসতে শুরু করে।’
এই দম্পতি ‘ইনস্টিট্যুটো টেরা’ নামের একটি ছোট সংস্থার প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংস্থার মাধ্যমে তারা প্রায় চার লাখ গাছ রোপণ করেন।
সেবাস্তিয়াও বলেন, ‘পরিবেশকে সুস্থ এবং সুন্দর রাখতে বনের পুনরুত্থান করা অবশ্যই প্রয়োজন। তবে এই বন্য পরিবেশ, যেখানে বন্য পশুরা আবার ফিরে আসতে পারে তা গড়ে তুলতে সাধারণ গাছের পাশাপাশি, বন্য উদ্ভিদের বীজ রোপণ করাও প্রয়োজন।’
গত ২০ বছর ধরে সেবাস্তিয়াও এবং তার স্ত্রী লেলেয়া ডেলুইজ এই জায়গাটির যত্ন নেন। এখন এই জঙ্গলে ১৭২ প্রজাতির পাখি, ৩৩ রকমের স্তন্যপায়ী, ২৯৩ প্রজাতির গাছপালা এবং ১৫টি প্রজাতির সরীসৃপ রয়েছে। সেবাস্তিয়াও এবং তার স্ত্রী লেলেয়া ডেলুইজ এই জায়গাটির যত্ন নেন। আনন্দবাজার।
এসআইএস/জেআইএম