প্লাস্টিক থেকে পেট্রল, লিটার ৪০
প্রতিনিয়ত বিশ্বে তেলের দাম বাড়ছে। এ ছাড়া জ্বালানি তেলের যে মজুদ আছে তাও শেষ হবে একদিন। জ্বালানির চাহিদা পূরণ করতে বিকল্প খোঁজা হচ্ছে। এদিকে প্লাস্টিকের ব্যবহার বৃদ্ধি পরিবেশ দূষিত করছে। তাই বাংলাদেশের কৃষকের পর এবার ভারতের এক অধ্যাপক অপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিক থেকে প্রেট্রল আর ডিজেল তৈরির পদ্ধতি আবিস্কার করেছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, প্লাস্টিক থেকে পেট্রল ও ডিজেল তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করা ওই অধ্যাপক হলেন হায়দারাবাদের। তার তৈরি করা পেট্রল বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ৪০ রুপিতে। আর এই প্রক্রিয়ায় কোনো দূষণ হচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সতীশ কুমার নামেরও ৪৫ বছর বয়সী ওই অধ্যাপক আদতে একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তিনি দাবি করছেন, তিন ধাপের রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিক থেকে তিনি পেট্রল বানাতে সক্ষম।
প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে তা থেকে ডিজেলে আর পেট্রলের মতো জ্বালানি তৈরির এই পক্রিয়ার নাম ‘প্লাস্টিক পাইরোলাইসিস’। চারটি ধাপে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। প্রথমে ভ্যাকুয়ামে প্লাস্টিক গরম করার পর ডিপলিমেরাইজেশন, তৃতীয় ধাপে গ্যামিফিকেশন করে শেষে কন্ডেনসেশন করলেই তৈরি হবে জ্বালানি।
পলিথিন পুড়িয়ে পেট্রল বানাচ্ছেন নওগাঁর কৃষক ইদ্রিস আলী
ভারতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে সতীশ কুমার ‘হাইড্রক্সি সিস্টেমস প্রাইভেট লিমিটিড’ নামের একটি কোম্পানির মাধ্যমে এই কাজ করছেন। তার এই কোম্পানিতেই বাতিল প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাত করে পেট্রল তৈরি করা হয়।
সতীশ কুমার বলেন, ‘প্লাস্টিককে প্রথমে ডিজেলে পরিণত করা হয়। তারপর সেটিকে অ্যাভিয়েশন ফুয়েল এবং শেষ ধাপে সেটিকে পেট্রলে রুপান্তর করা হয়। আনুমানিক ৫০০ কেজি পুনর্ব্যবহার অনুপোযোগী (নন-রিসাইকেল্যাবল) প্লাস্টিক থেকে ৪০০ লিটার জ্বালানি তৈরি করা যায়।’
তিনি আরও জানান, ‘আর এই প্রক্রিয়ায় পানির কোনো প্রয়োজন হয় না। তাই কোনো বর্জ্যও তৈরি হয় না। যেহেতু প্রক্রিয়াটা ভ্যাকুয়ামে হয় তাই বায়ুদূষণেরও সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ২০১৬ সালের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত আমি ৫০ টন প্লাস্টিককে পেট্রলে পরিণত করেছি।’
গোটা ভারতে প্রতি লিটার পেট্রল এখন বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৭৫ রুপিতে। আর সতীশ নামের ওই অধ্যাপকের তৈরি করা পেট্রলের দাম হচ্ছে মাত্র ৪০ রুপি। তার এমন উদ্ভাবনের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। সতীশের আগেই বাংলাদেশের নওগা জেলার এক কৃষক চলতি বছরের শুরুতে প্লাস্টিক থেকে জ্বালানি এবং কালি তৈরি করেন।
পরিত্যক্ত পলিথিনকে কাজে লাগিয়ে জ্বালানি তৈরি করা ৫৫ বছর বয়সী ওই কৃষকের নাম ইদ্রিস আলী। নওগাঁর জেলার মান্দা উপজেলার বাসিন্দা তিনি। পলিথিনকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় কাজে লাগিয়ে তিনি তৈরি করেছেন পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাস এবং ফটোকপি মেশিনের কালি।
এসএ/এমকেএইচ