পুকুরে ইলিশ চাষ করে দেখিয়ে দিলেন তিনি
পুকুরেও ইলিশ মাছ চাষ করা সম্ভব। এটাই প্রমাণ করলেন হুগলির চন্ডীচরণ চট্টোপাধ্যায়। কলকাতা থেকে মাত্র দু'ঘন্টার দূরত্বে হুগলি জেলার মগরায় প্রায় ৫৯ একর জমিতে রুই, কাতলা, চিংড়ির সঙ্গেই ইলিশ চাষ করছেন তিনি। সেখানেই বড় হচ্ছে ইলিশ। একেকটির বয়স প্রায় আঠারো মাস। ওজন হয়েছে প্রায় পাঁচশ গ্রাম।
হুগলি জেলার মগরার বাসিন্দা চন্ডীচরণ চট্টোপাধ্যায়ের রয়েছে প্রায় ৫৯ একরের একটি হ্যাচারি। সেই হ্যাচারিতেই ডিম থেকে ইলিশের পোনার জন্ম। এখন সেই পোনাগুলোই বড় হচ্ছে।
রাজ্যের প্রথম সারির কয়েকজন ইলিশ বিশেষজ্ঞকে সঙ্গে নিয়ে মগরায় হাজির হয়েছিলেন রাজ্যের মত্স্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা। জাল ফেলে তোলা হয় পুকুরে জন্মানো ইলিশ মাছ। হাতে নিয়ে একেবারেই অবাক হয়ে যান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, এটা সত্যিই অন্যরকম ব্যাপার। ইলিশ মাছ পুকুরেই বড় হতে পারে তা এই প্রথম দেখলাম। দপ্তর সূত্র বলছে, এই বর্ষার আগে এই হ্যাচারিতে ডিম ফুটে প্রায় দশ লাখ ইলিশ মাছের পোনা হয়েছে।
রাজ্যের দুই জায়গায় গঙ্গার মোহনায় এই পোনা ইলিশগুলো ফেলা হবে। প্রাথমিকভাবে, ঠিক করা হয়েছে ডায়মন্ডহারবার ও খড়গপুরের কাছে গঙ্গায় ইলিশ ছাড়া হবে। আগামী ১০ জুলাই মত্স্যমন্ত্রী ইলিশ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ডায়মন্ড হারবারে যাবেন ইলিশের পোনা ফেলতে।
রাজ্যের ইলিশ বিষেশজ্ঞরা বলছেন, গঙ্গায় যেহেতু জোয়ার-ভাটা হয়, তাই ইলিশের ওজনও দ্রুত বাড়ে। গঙ্গায় আঠারো মাসে একটি ইলিশের ওজন হয় প্রায় এক কেজির কাছাকাছি। এই হ্যাচারিতে ইলিশের ওজন হয়েছে মাত্র পাঁচশো গ্রাম।
কিভাবে এটা সম্ভব হলো? সেটাই জানিয়েছেন চন্ডীচরণ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, তিন বছর আগে অর্থাৎ ২০১৬ সালের জুলাই মাসের এক দুপুরে তিনি হাজির হলেছিলেন সল্টলেকের মীন ভবনে। মত্স্য দফতরের কর্মকর্তাদের তিনি একটি প্রস্তাব দেন।
সে সময় তার কথা শুনে কেউ তেমন গুরুত্ব দেননি। তবে কথাটা কানে আসতেই চন্ডীবাবুকে নিজের ঘরে ডেকে নেন চন্দ্রনাথ সিনহা। সব শুনে সরকারি সাহায্যর প্রতিশ্রুতি দেন। আর ফিরে তাকাতে হয়নি চন্ডীবাবুকে।
সরকারি সহায়তা আর অদম্য সাহস নিয়ে পুকুরের মিঠা পানিতেই নোনা ইলিশ চাষ করে দেখিয়েছেন তিনি। স্বাদ আর গন্ধেও কোন পার্থক্য নেই বলে দাবি তার। চন্ডীবাবু বলেন, ‘ইলিশ উত্পাদনে স্বাবলম্বী হতে হবে। এমনটাই জেদ চেপেছিল মাথায়। আজ আমি সেটা করে দেখিয়েছি। সত্যিই আমি খুব খুশি।’
টিটিএন/পিআর