ব্রিটেনে ট্রাম্প : চুমু দিতে পারবেন না রানিকে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন। তার এই সফরকে কেন্দ্র করে এমন সব বিতর্ক ও ঘটনা সৃষ্টি হয়েছে; যা অনেক দিক থেকেই নজিরবিহীন।
কয়েকদিন আগে লন্ডনের মেয়র সাদিক খান নারী ও ইসলাম সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভুল ধারণার তীব্র সমালোচনা করে তাকে একবিংশ শতাব্দীর ফ্যাসিস্ট বলে বর্ণনা করেছেন। জবাবে ট্রাম্প বলেছেন, সাদিক খান একজন স্টোন-কোল্ড লুজার।
বিরোধীদল লেবার পার্টি ও লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টির নেতাসহ বেশ কিছু রাজনীতিবিদ ট্রাম্পের সম্মানে দেয়া নৈশভোজ বয়কট করার কথা জানিয়েছেন। লন্ডনে বিক্ষোভকারীরা তার সফরের প্রতিবাদ জানাতে এমন একটি মানবাকৃতির বেলুন ওড়াবেন; যাতে ট্রাম্পকে এক অতিকায় ন্যাপি-পরা শিশু হিসেবে দেখানো হয়েছে।
আরও পড়ুন : ফেসবুক অফিসের সামনে নগ্ন প্রতিবাদ
তবে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে; যিনি আর কয়েকদিন পরই বিদায় নেবেন - এ সফরকে ব্রিটেন ও আমেরিকার বিশেষ সম্পর্ক জোরদার করার এক সুযোগ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম দিনের কর্মসূচির মধ্যে আছে, বাকিংহ্যাম প্রাসাদে রানি এলিজাবেথের সাথে সাক্ষাৎ, ওয়েস্টমিনস্টার গির্জা সফর, অনামী যোদ্ধাদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, প্রিন্স চার্লসের সাথে সাক্ষাত এবং রাতে বাকিংহ্যাম প্রাসাদে নৈশভোজ।
ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও তার কথা ও কাজ দিয়ে বিতর্ক তৈরির ক্ষেত্রে পারদর্শী। অনেক সময়ই তিনি কথা বলার সময় প্রেসিডেন্টসুলভ শিষ্টাচার মেনে চলেন না।
গতবার ব্রিটেন সফরের সময় দেখা গিয়েছিল, ব্রিটিশ রাজপরিবারের সাথে সাক্ষাতের রীতিনীতি মেনে চলার ক্ষেত্রেও ট্রাম্প গোলমাল বাধিয়ে বসেছেন।
আরও পড়ুন : ভারতে দুই সেনা সদস্যকে রাস্তায় বেধড়ক পিটুনি
দেখে নেয়া যাক ব্রিটেনের রানির সাথে সাক্ষাতের সময় অতিথিদের কি কি রীতি মেনে চলতে হয়।
এ ব্যাপারে একজন বিশেষজ্ঞ হচ্ছেন ডায়ানা ম্যাথার। তিনি বলছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি নিয়ম হলো :
১. রানিকে চুমু খাবেন না
কিন্তু ১৯৭৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার এই ভুলটি করেছিলেন। অবশ্য তিনি রানিকে চুমু খাননি, খেয়েছিলেন রানির মা-কে। তিনি ব্যাপারটা একেবারেই পছন্দ করেননি।
বিদেশী অতিথিদের রানির সামনে বাউ বা মাথা ঝোঁকাতে হয় না, তবে মাথা সামান্য নামানোকে শিষ্টাচার সম্মত বলে মানা হয়। রানি যদি অতিথির দিকে হাত বাড়িয়ে দেন- তাহলে তার সাথে আপনি করমর্দন করতে পারেন।
২. রানির আগে হাঁটবেন না
রাজকীয় গার্ড অব অনারের সময় অতিথি রাষ্ট্রপ্রধানকে রানির পাশাপাশি বা একটু পেছনে পেছনে থেকে হাঁটতে হয়। কিন্তু এর আগে দেখা গিয়েছিল রানি এলিজাবেথের আগে আগে হাঁটছেন ট্রাম্প; যা শিষ্টাচার সম্মত নয় এবং রানির দিকে পেছন ফিরে থাকার সামিল।
৩. রানির আগে খাওয়া শুরু করবেন না
রাজকীয় ভোজের সময় রানি খাওয়া শুরু করার আগেই অতিথি খেতে শুরু করা শিষ্টাচারসম্মত নয়। এছাড়া রানি যখন খাওয়া শেষ করবেন, তখন আপনাকেও খাওয়া শেষ করতে হবে। তা না হলে আপনার খাওয়া শেষ হয়েছে কিনা তার অপেক্ষা না করেই আপনার প্লেট সরিয়ে নেয়া হবে।
৪. জাতীয় সঙ্গীত বাজার সময় কথা বলবেন না
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একবার এ নিয়ম ভঙ্গ করে জাতীয় সঙ্গীত বাজছে এমন সময় কথা বলেছিলেন।
৫. যৌনতা, ধর্ম ও রাজনীতির কথা বলবেন না
রাজকীয় ভোজের সময় যৌনতা, ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে কথা বলা নিষেধ। যৌনতার জায়গা শোবার ঘরে, তার বাইরে নয়। আর ধর্ম নিয়ে কথা বলাটা রীতিমত বিপজ্জনক, আর রাষ্ট্রের প্রধানদের জন্য অন্য দেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলাটা শোভন নয়।
আরও পড়ুন : ছেলেকে ফাঁসিতে ঝোলালেন বাবা, ভিডিও করলো মেয়ে
মেগান মার্কেলকে নিয়েও বিতর্কে জড়িয়েছেন ট্রাম্প
এছাড়াও গোল বেধেছে সফরের আগে রাজপরিবারের সদস্য মেগান মার্কেলকে নিয়ে ট্রাম্পের করা একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে।
ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথের নাতি প্রিন্স হ্যারির স্ত্রী, ডাচেস অব সাসেক্স, মেগান মার্কেলকে নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তাকে ন্যাস্টি অর্থাৎ খারাপ বলার একটি টেপ প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ একটি পত্রিকা।
তবে এ রকম কথা অস্বীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাবেক মার্কিন অভিনেত্রী মেগান মার্কেলও ট্রাম্পের একজন কট্টর সমালোচক ছিলেন। ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় তিনি ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিন্টনকে সমর্থন দিয়েছিলেন।
মেগান মার্কেল মে মাসে তার প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। এখনও তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন এবং ট্রাম্পের যুক্তরাজ্য সফরের সময় তিনি তার সাথে সাক্ষাত করবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে। বিবিসি বাংলা।
এসআইএস/পিআর