নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্রেই ধ্বংস ভারতীয় হেলিকপ্টার
পাক-ভারত উত্তেজনার সময় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় বিমান বাহিনীর ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ১২ সেকেন্ডের মধ্যে নিজেদেরই একটি হেলিকপ্টারে আঘাত হানে। এতে মুহূর্তের মধ্যে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে এক বেসামরিক-সহ বিমানবাহিনীর ছয় সদস্যের প্রাণহানি ঘটে। এ ঘটনা তদন্তে বিমানবাহিনীর একটি কমিটি কাজ করছে। আগামী ২০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করবে তারা।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভির বিশেষ এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শ্রীনগর বিমান ঘাঁটিতে থেকে ইসরায়েলের তৈরি ভূপৃষ্ঠ থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র স্পাইডার নিক্ষেপ ও তার প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে কোনো ধরনের সন্দেহ নেই। এই দুর্ঘটনায় দায়ীদের শনাক্ত করার ব্যাপারে ভারতীয় বিমান বাহিনী দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। যে কারণে তদন্তে বেশি সময় লাগছে।
বিমানবাহিনীর ওই সূত্র বলছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি নিক্ষেপ এবং নিজেদের হেলিকপ্টারে আঘাত হানার পুরো ঘটনাটি ঘটেছে মাত্র ১২ সেকেন্ডের মধ্যে। ওই ঘটনার পর ভারত দাবি করে, আকাশসীমা লঙ্ঘন করে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করেছিল ২৫টি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান। এ সময় প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে একটি ক্ষেপণাস্ত্র পাক যুদ্ধবিমান লক্ষ্য করে ছোড়া হয়। কিন্তু টার্গেট মিস করে এই ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে ভারতীয় হেলিকপ্টারেই।
আরও পড়ুন : মক্কা ও জেদ্দায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
দেশটির দৈনিক ইকোনমিক টাইমস বলছে, রুটিন মিশনের সময় এমআই-১৭ ভি-৫ একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার কিছুক্ষণ আগে ওই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল ভারতীয় বিমানবাহিনী। এতে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে, ভারত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে দুর্ঘটনাবশত নিজেদের হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত করেছে। আক্রান্ত হতে যাচ্ছে; এমন আগাম কোনো ইঙ্গিত পাওয়ার কোনো উপায় নেই এমআই-১৭ হেলিকপ্টারের।
ভূপৃষ্ট থেকে আকাশে এই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার সিদ্ধান্ত ভুলভাবে নেয়া হয়েছিল বলে দেশটির বিমানবাহিনীর ওই সূত্র এনডিটিভিকে জানিয়েছে। ওইদিন সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান এফ-১৬ সহ ২৫টির বেশি যুদ্ধবিমান কাশ্মীরের আকাশসীমা অতিক্রম করে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর ৮টি বিমান পাক যুদ্ধবিমানকে ঠেকানোর চেষ্টা করে।
কাশ্মীরের পশ্চিমাঞ্চলের আকাশে দুই দেশের বিমানবাহিনীর বিমানের লড়াই চলে। এমন সময় শ্রীনগর বিমানবন্দরে বিমানবাহিনীর রাডারে দেখা যায়, একটি হেলিকপ্টার একেবারে নিচু দিয়ে উড়ছে। ওই সময় টার্মিনাল উইপন্স পরিচালক (টিডব্লিউডি) পদের বিমানবাহিনীর জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বিমানঘাঁটিতে প্রধান অপারেশন অফিসারের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
আরও পড়ুন : ইফতারে চাইলেন পানি, ট্রেতে খাবার দিলেন বিমান সেবিকা
ওই হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের চূড়ান্ত নির্দেশ দেন বিমানবাহিনীর এই কর্মকর্তা। হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্তের চূড়ান্ত মুহূর্তে আইএফএফ (আইডেন্টিটি, ফ্রেন্ড অথবা ফো) সিস্টেমের সুইচ অন আছে কি-না তা অত্যন্ত সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। তবে খুব কম উচ্চতায় উড়তে থাকা মনুষ্যবিহীন অ্যাটাক ভেহিক্যাল টার্গেট করা হলেও তা ভুলে লক্ষচ্যুত হয়।
তবে বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম থেকে টিডব্লিউডির ওই কর্মকর্তাকে শত্রুর বিমান ঢুকে পড়েছে; তাৎক্ষণিকভাবে জানিয়েছিল কি-না সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। ১৭ মিলিয়ন ডলারের শক্তিশালী এমআই-১৭ ভি-৫ হেলিকপ্টারটিতে কোনো ধরনের গুরুতর যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল না। কপ্টারটির সরঞ্জামাদিও নতুন। ২০১২ সালে ভারতীয় বিমানবাহিনীর বহরে রাশিয়ার তৈরি এ হেলিকপ্টার যুক্ত হয়।
আরও পড়ুন : মক্কা ও জেদ্দায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
গত ফেব্রুয়ারিতে আকাশসীমা লঙ্ঘন করে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ঢুকে জঙ্গিগোষ্ঠী জয়েশ-ই-মোহাম্মদের আস্তানায় ভারতীয় বিমানবাহিনীর অভিযানের একদিন পর ওই হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। তার আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পুলওয়ামায় ভারতের কেন্দ্রীয় আধা সামরিক পুলিশ বাহিনীর (সিআরপিএফ) গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলায় ৪৪ জওয়ানের প্রাণহানির পর পাকিস্তানের বালাকোটে অভিযান চালায় ভারত।
তবে পাকিস্তান বলছে, বালাকোটের যে স্থানে ভারত অভিযান চালানোর দাবি করেছে সেখানে জয়েশের কোনো ঘাঁটি নেই।
এসআইএস/পিআর