বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষে রণক্ষেত্র কলকাতা
গত ১১ এপ্রিল শুরু হয়েছে ভারতের লোকসভা নির্বাচন। সাত ধাপের এই ভোট উৎসব চলবে ১৯ মে পর্যন্ত। ৩৯ দিনব্যাপী এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। যা থেকে বাদ যায়নি মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস শাসিত পশ্চিমবঙ্গও।
আগামী সেপ্টেম্বরে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মের দ্বিশতবর্ষ পূর্তি হবে। তার আগে মঙ্গলবার (১৪ মে) সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিধান সরণিতে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের নির্বাচনী প্রচারণা (রোড শো) থেকে দলটির কর্মী-সমর্থকরা বিদ্যাসাগর কলেজে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস।
ওই হামলার সময় শুধু দরজা-জিনিসপত্র ভাঙচুর নয়, অফিসঘরে স্থাপিত ঈশ্বরচন্দ্রের মূর্তিও বিজেপির সমর্থকেরা আছাড় মেরে ভেঙে দেন বলে অভিযোগ করেছে তারা (তৃণমূল কংগ্রেস)। তবে বিজেপির দাবি অমিত শাহ’র রোড শোতে তৃণমূলের কর্মীরা ইটের টুকরা ছুড়ে মারায় এই সহিংসতার সূত্রপাত হয়। গোলমাল বাঁধিয়েছে ।
এদিকে খবর পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজেশ কুমার রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
মমতা ব্যানার্জি জানান, উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিয়ে পুরো ঘটনার তদন্ত করা হবে। আর পুলিশ কমিশনার রাজেশ কুমার রাতে জানিয়েছেন ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঘটনার সময় অন্যত্র নির্বাচনী প্রচারণা ব্যস্ত ছিলেন মমতা। এরই মধ্যে খবর পান মূর্তি ভাঙার। খবর পেয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে ফোনে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে কঠোর নির্দেশ দেন।
পুলিশ কমিশনারকে তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষা রাজ্যের বিষয়। বিজেপির কিছু লোক এই ঘটনা ঘটিয়েছে। যে কোনো মূল্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে হবে।’ পুলিশ জানিয়েছে এ ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে রাতেই ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অমিত শাহ’র ‘রোড শো’ চলাকালে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা; বিদ্যাসাগর কলেজে বিজেপি সমর্থকদের হামলা থেকে বাদ যায়নি ঈশ্বর চন্দ্রের মূর্তিও
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে মঙ্গলবার (১৪ মে) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিধান সরণিতে অমিত শাহ’র রোড শো চলছিল। আচমকা এক দল সমর্থক পাঁচিল টপকে বিদ্যাসাগর কলেজের বিধান সরণি ক্যাম্পাসে ঢুকে হামলা চালায় এ সময় তারা সেখানে একটি মোটরসাইকেল ও একটি সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) নেতা অভিষেক মিশ্রের অভিযোগ, ‘আমরা কিছু করিনি। ক্যাম্পাসের ভিতরে ‘মোদি গো ব্যাক’ লেখা পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ওরা পাঁচিল টপকে ঢুকে ইট ছুড়তে শুরু করে।’ হামলায় তার কান ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে।
ঘটনার পর কলেজের অধ্যক্ষ গৌতম কুণ্ডু বলেন, ‘বিজেপির মিছিল থেকেই হাঙ্গামা হয়েছে। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে ওরা। পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছি’। কলেজ পরিচালন সমিতির সদস্য দেবাশিস কর্মকার জানান, অফিসে রাখা তার ল্যাপটপও ভাঙা হয়েছে।
এছাড়া একই দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা এলাকা। এ সময় টিএমসিপি-সমর্থকদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয় পুলিশ। বিজেপি-সমর্থকেরা গালিগালাজ করতে করতে ইট ছুড়তে থাকেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএমসিপি নেতা মণিশঙ্কর মজুমদারের দাবি, ‘ওরা ইট, পেরেক লাগানো লাঠি দিয়ে হামলা করেছে। আমাদের অনেকে আহত হয়েছে।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এই হামলা ও শিক্ষার্থীদের আহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে ফোন করা হলেও উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় রিসিভ করেননি, মেসেজ পাঠানো হলেও তার উত্তর দেননি মে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পার্থিব বসু গোটা ঘটনার নিন্দা করেছেন।
এমএমজেড/জেআইএম