ভেঙে পড়ল হোয়াটসঅ্যাপের সুরক্ষা, নেপথ্যে ইসরায়েলি সাইবার ডিলার!
আপনার অজান্তেই অন্য কেউ মোবাইল ফোন থেকে প্রতি মুহূর্তে তথ্য চুরি করছে। আপনার ফোনালাপ, ক্যামেরায় তোলা ছবি, লোকেশন, সবই মুহূর্তের মধ্যে চলে যাচ্ছে অন্য কারও কাছে। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপের সমস্ত কথোপকথন, শেয়ার করা ছবি, ভিডিও-অডিও, সবই বেহাত হয়ে যাচ্ছে এক পলকে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে ‘সফটওয়্যারে’ ঢুকে ইসরায়েলি একটি হ্যাকার গোষ্ঠী হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের তথ্য এভাবে হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে স্বীকার করেছে ফেসবুকের সহযোগী জনপ্রিয় এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কর্তৃপক্ষ।
হ্যাকারদের হানার ব্যাপারে জানার পর বিশ্বের ১৫০ কোটি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীকে অ্যাপটি ‘আপডেট’ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। অভিযোগের আঙুল উঠছে একটি ইসরায়েলি একটি সংস্থার দিকে, যারা আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় পরিচিত ‘সাইবার অস্ত্রের ডিলার’ হিসেবে।
হোয়াটসঅ্যাপের সুরক্ষা বলয় ভাঙতে ব্যবহার করা হয়েছিল এই অ্যাপের ‘ভয়েস কলিং’ ফিচার। কোনো একটি নির্দিষ্ট মোবাইল সেটে ‘ভয়েস কল’ করে এই সফটওয়্যার ‘ইনস্টল’ করে দিচ্ছিল হ্যাকাররা। কল না ধরলেও ‘ইনস্টল’ হয়ে যাচ্ছিল এই নজরদারি সফটওয়্যার। এমনকি তা উধাও হয়ে যেত মোবাইলের ‘কল লিস্ট’ থেকেও। এর পরই ওই নির্দিষ্ট মোবাইল থেকে সব তথ্য পাচার শুরু করে সফটওয়্যারটি।
চলতি মাসের শুরুতে বিষয়টি জানার পরই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ। সঙ্গে সঙ্গেই আক্রান্ত হওয়ার খবর তারা জানায় মার্কিন আইন মন্ত্রণালয় এবং কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থাকে। একই সঙ্গে এই ‘নজরদারি সফটওয়্যারে’র হামলা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়া শুরু করে। শেষ পর্যন্ত সোমবার তারা ব্যবহারকারীদের অ্যাপটি ‘আপডেট’ করার অনুরোধ জানিয়েছে।
হোয়াটসঅ্যাপ বলছে, ‘আমাদের মনে হয়, এই হামলার পেছনে আছে কোনো বেসরকারি সংস্থা, যাদের বিভিন্ন সরকারের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে।’ যদিও পৃথিবীর কোন অঞ্চলের কতজন ব্যবহারকারীর কী তথ্য চুরি করা হয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ।
ফিনান্সিয়াল টাইমস বলছে, এ ঘটনার পেছনে আছে ইসরায়েলি নিরাপত্তা সংস্থা ‘এনএসও গ্রুপ’, যাদের এক সময় সারা দুনিয়া চিনতো ‘সাইবার অস্ত্রের ডিলার’ হিসেবে। এই সংস্থাই বানিয়েছিল কুখ্যাত ‘পেগাসাস’ সফটওয়্যার, যা যে কোনো মোবাইল ফোন থেকে মাইক্রোফোন, ক্যামেরা আর অবস্থানের তথ্য চুরি করে নিতে সক্ষম।
তবে এক বিবৃতিতে এনএসও বলছে, ‘সন্ত্রাস ও অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আমরা বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করি। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’ একই সঙ্গে তাদের দাবি, ‘আমাদের প্রযুক্তি কোনো বেসরকারি সংস্থা ব্যবহার করতে পারে না। আমরা শুধু বিভিন্ন দেশের সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কাজ করি।’
এর আগে অ্যাপলের দুর্ভেদ্য সুরক্ষা বলয়ও ভেঙে ফেলেছিল ইসরায়েলি সাইবার হ্যাকারদের এই গোপন সংস্থা। ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিব থেকে মূল কর্মকাণ্ড চালালেও কোম্পানি হিসেবে তা নথিভুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
বিভিন্ন দেশকে গোপনে ‘সাইবার অস্ত্র’ সরবরাহ করার অভিযোগও আছে এই কোম্পানির বিরুদ্ধে। এই সাইবার অস্ত্রের মাধ্যমে যে কোনো শত্রু দেশের সমস্ত পরিকাঠামো ধ্বংস করে দিতে পারে ইসরায়েলের এ হ্যাকাররা। আনন্দবাজার।
এসআইএস/এমকেএইচ