যুক্তরাষ্ট্র পা ফেললে মাথায় আঘাত : ইরান
যুক্তরাষ্ট্র যদি এক পা ফেলে তাহলে মাথায় আঘাত করবে ইরান। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা আর বোমারু বিমান মোতায়েন করে ইরানকে হুমকি দেয়ার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা হুমকি দিলেন ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) এক কমান্ডার।
আইআরজিসির ওই কমান্ডার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র পারস্য উপসাগরে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়ে হুমকি দেয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু এটা এখন একটা সুযোগ হিসেবে তৈরি হয়েছে। আর এই সুযোগে যুক্তরাষ্ট্র যদি একটা পদক্ষেপ ফেলে তাদের মাথায় আঘাত করবে ইরান।
ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কমান্ডার হোসেইন সালামি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে মনস্তাত্বিক যুদ্ধ শরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে মার্কিন চাপ মোকাবিলায় ইরানের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে আইআইরজিসির কমান্ডার সালামিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের কোনো বোমারু বিমান ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে না। তারা শুধু ভয় দেখানোর জন্য এসব মোতায়েন করেছে।
বাহরাইনভিত্তিক মার্কিন নৌবাহিনীর পঞ্চম বহরের কমান্ডার ভাইস অ্যাডমিরাল জিম মালয়ের দেয়া বিবৃতির পর এমন কথা বলেন সালামি। বিবৃতিতে মার্কিন কমান্ডার বলেন, ওয়াশিংটন-তেহরান চলমান উত্তেজনার জেরে প্রয়োজনে কৌশলগত হরমুজ প্রণালীতে বিমানবাহী রণতরী আব্রাহাম লিঙ্কন পাঠানো হবে।
ইরানের সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় রণতরীর পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন প্রযুক্তির প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্যাট্রিক শানাহান নতুন প্রযুক্তির এই ক্ষেপণাস্ত্র মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েনের বিষয়টি অনুমোদন করার একদিন পর এমন বিবৃতি দেয় বাহরাইনভিত্তিক মার্কিন নৌবাহিনীর পঞ্চম বহর।
ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)
মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগন এর আগে জানিয়েছিল, মার্কিন বাহিনীকে বা মার্কিন স্বার্থে আঘাত হানার পরিকল্পনা ইরানের রয়েছে বলে তাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আভাস দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আব্রাহাম লিংকন রণতরী এবং বোমারু বিমান মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন করা হয়েছে।
শনিবার ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ১৯৮০ সালে ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধের সময়ের চেয়েও পরিস্থিতি কঠিন হতে পারে। তাই ইরানের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের দরকার।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র আর ইরানের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন ও ওয়াশিংটন দাবি করছে, মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন করা মার্কিন সেনাদের ওপর ইরানের ‘সম্ভাব্য হামলা’ ঠেকাতেই এমন প্রস্তুতি নিয়েছে তারা।
ইরান অবশ্য বরাবরের মতো যুক্তরাষ্ট্রের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ইরাকে মার্কিন অভিযানের সময় যেরকম ‘ভুয়া গোয়েন্দা তথ্য’ ছড়ানো হচ্ছিল ঠিক সেরকম করে যুক্তরাষ্ট্র গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে হামলার চক্রান্ত করছে বলে দাবি তেহরানের।
গত বছর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে বিশ্বের ছয় পরাশক্তির সম্পাদিত পারমাণবিক কর্মসূচি বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ দেশ ও জার্মানিসহ বিশ্বের ছয় পরাশক্তির সঙ্গে ইরানের ২০১৫ সালে এই চুক্তিটি হয়েছিল।
পারমাণবিক কর্মসূচি বিষয়ক সেই চুক্তি থেকে দেশকে প্রত্যাহার করে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের রফতানি বাজারে ধস আনতে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েকটি দেশকে ইরানের তেল না কেনার নির্দেশ দিয়েছে। এ নির্দেশ না শুনলে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের মুখোমুখি হতে হবে দেশগুলোকে।
এসএ/জেআইএম