ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ নামটি যেভাবে এলো
অস্বাভাবিক আকার ধারণ করে বঙ্গোপসাগরে প্রবল শক্তি সঞ্চয় করছে ঘূর্ণিঝড় ফণী। শক্তি সঞ্চয় করে ধীর গতিতে বঙ্গোপসাগরে ঘোরপাক খাওয়া এই ঝড়ের তাণ্ডবে একেবারে ধ্বংসাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে ভারতের তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ। ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে আঘাত হানার পর কিছুটা দুর্বল হয়ে আগামী ৪ মে (শনিবার) বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে।
যেভাবে নামকরণ হলো ‘ফণী’
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ নাম দিয়েছে বাংলাদেশ। এর অর্থ সাপ বা ফণা তুলতে পারে এমন প্রাণি। ইংরেজিতে (Fani) লেখা হলেও এর উচ্চারণ ‘ফণী’।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা আঞ্চলিক কমিটি একেকটি ঝড়ের নামকরণ করে। উদাহরণস্বরূপ- ভারত মহাসাগরের ঝড়গুলোর নামকরণ করে এই সংস্থার আটটি দেশ। দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং ওমান, যাদের প্যানেলকে বলা হয় WMO/ESCAP।
একসময় ঝড়গুলোকে নানা নম্বর দিয়ে শনাক্ত করা হতো। কিন্তু সেসব নম্বর সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য হতো। ফলে সেগুলোর পূর্বাভাস দেয়া, মানুষ বা নৌযানগুলোকে সতর্ক করাও কঠিন মনে হতো। এ কারণে ২০০৪ সাল থেকে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের উপকূলবর্তী দেশগুলোয় ঝড়ের নামকরণ শুরু হয়। সে সময় আটটি দেশ মিলে মোট ৬৪টি নাম প্রস্তাব করে। সেসব ঝড়ের নামের মধ্যে এখন ‘ফণী’ ঝড়কে বাদ দিলে আর সাতটি নাম বাকি রয়েছে।
এর আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বা অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলে ঝড়ের নামকরণ করা হতো। ভারত মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড়কে সাইক্লোন বলা হলেও আটলান্টিক মহাসাগরীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় ‘হারিকেন’, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বলা হয় ‘টাইফুন’।
বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর উপকূলের আটটি দেশের প্রস্তাব অনুসারে একটি তালিকা থেকে একটির পর একটি ঝড়ের নামকরণ করা হয়। আঞ্চলিক এই আটটি দেশ একেকবারে আটটি করে ঝড়ের নাম প্রস্তাব করেছে। প্রথম দফায় মোট ৬৪টি নাম নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন ‘ফণী’ নামটি বাংলাদেশের দেয়া। এরপরের ঝড়ের নাম হবে ভারতের প্রস্তাব অনুযায়ী ‘ভায়ু’। তারপরে আরও ছয়টি ঝড়ের জন্য এখনো নাম তালিকায় রয়েছে। সেগুলো হলো হিক্কা, কায়ার, মাহা, বুলবুল, পাউয়ান এবং আম্ফান।
এই নামগুলো শেষ হয়ে যাওয়ার পর তারা আবার বৈঠকে বসে নতুন নামকরণ করবে। ফণীর মাধ্যমে শেষ সাইকেল শুরু হলো। এরপরে আরও সাতটি ঝড়ের পর বাংলাদেশ আবার চারটি ঝড়ের জন্য নাম দেবে। এর আগে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা নামগুলো ছিল হেলেন, চাপালা ও অক্ষি। তবে বেশির ক্ষেত্রে ঝড়ের নামকরণে মেয়েদের নামের প্রাধান্য দেখা গেছে।
ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, ‘বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার বৈঠকে বাংলাদেশের এক বা একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অংশ নিয়ে থাকেন। আগে থেকে তারা আলোচনা করে নেন যে, কী নাম হবে।’
আবহাওয়া দফতরের সাবেক পরিচালক শাহ আলম বলেন, ‘এখন ঝড়ের যেসব নাম আসছে, সেগুলো অনেক আগে ঠিক করা হয়েছিল। এমনকি আমি যতদিন দায়িত্বে ছিলাম, তখন আমাদের কোনো নাম প্রস্তাব করতে হয়নি। আগে ঠিক হওয়া নামগুলোই এখনো শেষ হয়নি।’
তিনি জানান, আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক বা সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অংশ নিয়ে থাকে। তারা ঝড়ের নামগুলো করে থাকেন। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সেই তালিকা থেকে ঝড়ের নাম বাছাই করা হয়।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলছেন, ঝড়ের নাম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হয়, যাতে সেটি ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক বা সামাজিকভাবে কোনোরকম বিতর্ক বা ক্ষোভ তৈরি না করে। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালে একটি ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়া হয়েছিল ‘মহাসেন’। নামটি প্রস্তাব করেছিল শ্রীলঙ্কাই। কিন্তু সেখানকার সাবেক একজন রাজার নাম ছিল ‘মহাসেন’, যিনি ওই দ্বীপে সমৃদ্ধি নিয়ে এসেছিলেন। ফলে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। এমনকি শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যমে সেটিকে ‘নামহীন ঝড়’ বলে বর্ণনা করা হয়। পরবর্তীতে রেকর্ডপত্রে ঝড়টির নতুন নাম নির্ধারণ করা হয় ‘ভিয়ারু’।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এসআর/এমকেএইচ