শ্রীলঙ্কার মুসলিমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব ইস্টার সানডের দিনে গির্জা এবং পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় এমন কয়েকটি হোটেলে ভয়াবহ বোমা হামলার পর এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে শ্রীলঙ্কায়।
দেশটির সরকার এসব হামলার জন্য মূলত দায়ী করছে একটি ইসলামপন্থী গোষ্ঠীকে। ঘটনার দায় স্বীকার করে ভিডিও প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক জঙ্গী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। যদিও সরাসরি সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ তারা দিতে পারেনি এখনো।
শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ আগেই জানিয়েছিল, এই হামলার নেপথ্যে রয়েছে ন্যাশনাল তাওহীদ জামায়াত। তবে তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর যোগসাজশ আছে।
কিন্তু ইসলামপন্থী সংগঠনের নাম আসার পর থেকেই ভয়ভীতি ছড়িয়ে পড়ে দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে। দেশটিতে তারা ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু।
রাজধানী কলম্বো থেকে কিছুটা উত্তরের শহরে নিগম্বোর একটি গির্জায় হামলা হয়েছিল সেদিন। প্রতিশোধমূলক হামলার আশঙ্কায করে এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিগম্বো থেকে অনেক মুসলিম বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।
নিপীড়নমূলক কার্যকলাপের মুখোমুখি হওয়ার কথা জানিয়ে অনেক মুসলিম বলছেন, তারা এখন একটি ভয়ার্ত পরিবেশের মধ্যে আছেন।
আরও পড়ুন>> শ্রীলঙ্কায় হামলার মূল হোতা নিহত
নিগম্বোতে বসবাসরত মুসলিমদের একটি বড় অংশ আহমদীয়া সম্প্রদায়ের। তাদের অনেকে একটি মসজিদে আশ্রয় নিয়েছেন। যার সুরক্ষার দায়িত্বে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রানিল বিক্রমাসিংহেও স্বীকার করেছেন যে আহমদীয়া সম্প্রদায়ের অনেকে হামলার শিকার হচ্ছেন।
দক্ষিণ এশিয়ার ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার মোট জনসংখ্যা দুই কোটি ১০ লাখ। যার মধ্যে ১০ শতাংশ মুসলমান। বিবিসি বলছে, প্রায় ছয় শতাধিক আহমদীয়া নিগম্বোর ফায়জুল মসজিদে আশ্রয় নিয়েছেন। এটি শ্রীলঙ্কায় আহমদীয়াদের পাঁচটি মসজিদের মধ্যে একটি।
শ্রীলঙ্কায় আহমদীয়ারা যেসব বাড়িতে বসবাস করেন তার অধিকাংশেরই মালিক ক্যাথলিক খ্রিস্টানরা। একজন মুসলিম বলছিলেন, ‘আমার বাড়ি গির্জার কয়েকটি রাস্তার পরেই। হামলার পর বাড়ির মালিক উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন, আমাকে বললেন নিরাপদ কোনো স্থানে চলে যেতে।’
পাকিস্তান থেকে আসা প্রায় আট শতাধিক আহমদীয়া সম্প্রদায়ের মুসলিম অধিবাসী জাতিসংঘের সহায়তায় নিগম্বোতে বাস করেন। নিপীড়নের কারণেই তারা পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসেছিলেন।
তাছাড়া এর বাইরেও প্রায় ৫ হাজার স্থানীয় আহমদীয়া বাস করেন ওই এলাকায়। অনেকে সেখানে দীর্ঘকাল ধরে বাস করেন এবং তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও আছে। তারা অবশ্য মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের জন্য হুমকির কিছু নেই।
গত রোববার তিনটি গির্জা ও তিনটি বিলাসবহুল হোটেলেসহ মোট আটটি স্থানে প্রাণঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ সেই বোমা হামলার ঘটনায় তিন শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন অন্তত ৫০০ জন।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
এসএ/পিআর