লঙ্কান প্রধানমন্ত্রীকে দেখানোই হয়নি সম্ভাব্য হামলার গোয়েন্দা চিঠি
রোববার ইস্টার সানডে উদযাপনের সময় গির্জা ও হোটেলে ভয়াবহ বোমা হামলার খবর গত ৪ এপ্রিলই পেয়েছিল শ্রীলঙ্কান কর্তৃপক্ষ। কারা হামলা চালাবে এই তথ্যও ছিল তাদের কাছে। ভয়াবহ ওই হামলার একদিন পর চাঞ্চল্যকর এমন কথা জানালেন দেশটির মন্ত্রিসভার মুখপাত্র রজিথ সেনারত্নে।
রজিথ সেনারত্নে বলেন, ‘গত ৪ এপ্রিল আমরা এমন হামলার ব্যাপারে তথ্য পেয়েছিলাম। তাছাড়া গত ৯ এপ্রিল জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান একটি চিঠি লেখেন। যে চিঠিতে তিনি বেশ কিছু সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যদের নামও উল্লেখ করেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহকে এই চিঠি এবং হামলার পূর্বাভাস সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি।
হামলার পর সোমবার সন্দেহভাজন ২৪ জনকে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে। পুলিশের মুখপাত্র রুয়ান গুনাসেকারা বলেছেন, তারা একটি ভ্যান গাড়িসহ চালককে আটক করার পর তা জব্দ করেছে। পুলিশের বিশ্বাস, এই গাড়িতে করেই হামলাকারীদের কলম্বোতে নামিয়ে দেয়া হয়।
তাছাড়া শ্রীলঙ্কান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ হামলাকারীরা আশ্রয় নিয়েছেন সন্দেহে রাজধানী কলম্বোর হাউজিং কমপ্লেক্সের একটি বাড়িতে অভিযান চালায়। হামলাকারীদের আটকেরে লক্ষ্যে চালানো সেই অভিযানে তিন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
মর্মান্তিক বোমা হামলার কবলে পড়ে রাজধানী কলম্বো থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরের শহর নিগম্বোর সেন্ট সেবাস্তিয়ান নামক গির্জা। সেখানে মুখে কালো কাপড় বেধে ঘটনাস্থলে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন তদন্তকারীরা।
ইস্টার সানডের মতো একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দিন এমন ভয়াবহ হামলা নেপথ্যের কারণ কি তা জানতে শুধু শ্রীলঙ্কা নয় গোটা পৃথিবীর মানুষ মুখিয়ে আছে। প্রশ্ন উঠেছে, নিরাপত্তা কিংবা গোয়েন্দা বিভাগ কি হামলা প্রতিরোধ করতে পারতো না?
দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুয়ান বিজয়াবর্ধনে বলেছেন, অপরাধীরা ধর্মীয় চরমপন্থী। তবে এ বিষয়ে সাংবাকিদরা তার কাছে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি কিছু বলেননি। তাছাড়া এখন পর্যন্ত কোনো সন্ত্রাসীগোষ্টী হামলার দায় স্বীকার করেনি।
রোববারের ওই বর্বর হামলায় অন্তত ৩০ জন বিদেশিসহ প্রায় তিনশ মানুষ নিহত হয়েছেন। বিদেশিদের মধ্যে যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, নেদারল্যান্ডস, ভারত, চীন, পর্তুগাল অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক রয়েছেন। নিহত হয়েছে শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ সেলিমের নাতি। গুরুতর আহত হয়েছেন তার মেয়ে-জামাই।
প্রশ্ন উঠেছে এমন একটি ভয়াবহ সিরিজ বোমা হামলা প্রতিহত করার জন্য কি করা যেত। প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহে এর আগে বলেছিলেন, শ্রীলঙ্কান গোয়েন্দা সংস্থা সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে অবহিত ছিল ১০ দিন আগে থেকেই কিন্তু সেই তথ্য তারা কোনো মন্ত্রীকে জানানো হয়নি। তিনি জানান, সরকার তদন্ত করে দেখবে তারপরও কেন পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
হামলার একদিন পর সোমবার সকালে শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা ও প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহে ভয়াবহ এই হামলার তদন্তে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ঊর্ধতন জেনারেলদের নিয়ে বৈঠক করেন।
অবশ্য বিক্রমাসিংহের দাবির পর দেশটির টেলিকমিউনিকেশন মন্ত্রী হারিন ফার্নান্দো তার জবাব দিয়েছেন। তিনি রোববার রাতে দেশটির গোয়েন্দা বিভাগের দেয়া ১১ তারিখের একটি মেমো টুইটারে পোস্ট করেন যেখানে সম্ভাব্য হামলার সব বিস্তারিত তথ্যের উল্লেখ ছিল। সরকার এমন হামলা প্রতিহত করতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানান তিনি।
টেলিকমিউনিকেশন মন্ত্রী হারিন ফার্নান্দো বলেন, ‘আমরা নানাদিক থেকে বিষয়টিকে দেখতে পারি কিন্তু বর্তমানে আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দাবি করে এটা জানা যে প্রকৃতপক্ষে কেন আট-দশ অথবা বারো জন ব্যক্তি এই হামলা চালালো।
এসএ/এমএস