ভারতের কাছে অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিসাইল কেন গুরুত্বপূর্ণ
আমেরিকা, রাশিয়া ও চীনের পর মহাকাশে চতুর্থ শক্তিশালী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে ভারত। বুধবার (২৭ মার্চ) অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে একটি লো-আর্থ অরবিট কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংস করে দেশটি। মিশন শক্তি নামে এই প্রজেক্টের সফলতায় বিশ্বের প্রথম সারির কয়েকটি দেশের তালিকায় জায়গা পেল ভারত।
অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিসাইল আসলে এক ধরনের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন নিয়ন্ত্রিত (গাইডেড) ক্ষেপণাস্ত্র, যা দিয়ে মহাকাশে অবস্থিত কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংস করা যায়। এই মিসাইলের প্রাথমিক উদ্দেশ্য, মহাকাশে নিজের দেশের যে সমস্ত কৃত্রিম উপগ্রহ রয়েছে এবং গবেষণামূলক কাজকর্ম চলছে, সেগুলোকে নিরাপত্তা দেয়া। সেই সঙ্গে, মহাকাশ থেকে কোনো শত্রু দেশের আক্রমণ মহাকাশেই যেন প্রতিহত করা যায়, তা নিশ্চিত করা।
অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিসাইলের সঙ্গে প্রয়োজনে পরমাণবিক অস্ত্রও যুক্ত করা যায়। পৃথিবী থেকে ৩ হাজার ১০০ নটিক্যাল মাইল (৫ হাজার ৭৪১ কিমি) পর্যন্ত এলাকাকে লো-আর্থ অরবিট বলা হয়। সাধারণত সব দেশেরই মহাকাশে অবস্থিত সামরিক গবেষণা এবং কার্যকলাপ ওই এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। ভারতের তৈরি অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিসাইলও ওই লো আর্থ অরবিটেই সফলভাবে কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংস করেছে।
অবিভক্ত সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র পাল্লা দিয়ে মহাকাশে নিজেদের ক্ষমতা বাড়াচ্ছিল। ঠিক এই সময় দুই দেশই অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিসাইল নিয়ে গবেষণা শুরু করে। ১৯৫৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে উপগ্রহ ধ্বংসকারী ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে। তবে সেই ক্ষেপণাস্ত্র আকাশ থেকে ছুড়তে হতো। এর কয়েক বছর পর ১৯৬৭ সালে সফলভাবে মাটি থেকে ছোড়া যায়, এমন উপগ্রহ ধ্বংসকারী ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা করে সোভিয়েত ইউনিয়ন।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পর তৃতীয় শক্তি হিসেবে ২০০৭ সালে সফলভাবে ওই প্রযুক্তির ব্যবহার করে চীন। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মতো চীনও প্রথম সফল উৎক্ষেপণের পর থেকে অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিসাইল প্রযুক্তি আরও উন্নত করে চলেছে।
কিন্তু চীনের সাফল্য মহাকাশে ভারতের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। এর পর ভারতও সেই একই প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা শুরু করে। ২০১২ সালের মধ্যেই অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিসাইল তৈরির প্রযুক্তি তৈরিতে সক্ষম হন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। এ দিন ওড়িশা সৈকত থেকে ওই মিসাইল সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়।
বুধবার জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানান, এর মাধ্যমে ৩০০ কিলোমিটার দূরে থাকা স্যাটেলাইট ধ্বংস করা হয়েছে। এই অভিযানে কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করা হয়নি। এছাড়া এতে কোনো দেশের ক্ষতি করা ভারতের উদ্দেশ্য নয় বলে জানান তিনি।
তবে এই মিশনে নতুন কোনো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহৃত হল, নাকি ভারতের হাতে থাকা কোনো ক্ষেপণাস্ত্রকেই অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিসাইল হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা সরকারের তরফ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়নি।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
এমএসএইচ/জেআইএম