সিরীয় বাবা-ছেলেকে দিয়ে দাফন শুরু ক্রাইস্টচার্চে
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলার ঘটনায় নিহতদের মধ্যে দু'জনকে দাফন করা হয়েছে। বুধবার সিরীয় শরণার্থী খালেদ মুস্তাফা এবং তার ছেলে হামজাকে দাফনের মাধ্যমে ক্রাইস্টচার্চে নিহতদের দাফন প্রক্রিয়া শুরু হলো। যদিও হামলার ঘটনার পর নিহতদের দাফন প্রক্রিয়া শুরু হতে পাঁচদিন সময় লেগে গেছে।
মঙ্গলবার মসজিদে হামলায় নিহতদের মরদেহ হস্তান্তর শুরু করে কর্তৃপক্ষ। গত শুক্রবারের হামলার চারদিন পর মাত্র ছয়জনের মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির পুলিশ।
মসজিদে হামলায় নিহতদের বেশিরভাগেরই পরিচয় শনাক্ত করা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে এখন পর্যন্ত মোট ১২ জনের মরদেহ শনাক্ত করতে পেরেছে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। আর চিহ্নিত বারোটি মরদেহের মধ্যে ছয়টি তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তবে ইসলামিক রীতি অনুযায়ী কেউ মৃত্যুবরণ করলে যত দ্রুত সম্ভব দাফন সম্পন্ন করতে হয়। বিশেষ করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করার নিয়ম আছে। কিন্তু পাঁচদিন পরেও প্রিয়জনের মরদেহ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহত অনেকের পরিবার।
বুধবার দাফন প্রক্রিয়ায় নিহতদের পরিবারকে সব ধরনের সহায়তা দিতে ক্রাইস্টচার্চে পৌঁছান স্বেচ্ছাসেবীরা। তবে দাফন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে কঠোর নির্দেশিকা দিয়েছেন ক্রাইস্টচার্চের কর্মকর্তারা। তারা নিহতদের পরিবারের লোকজনকে নিজেদের মতো থাকতে দিতে এবং তাদের যেন বার বার এ বিষয়ে জানতে চেয়ে অস্বস্তিতে ফেলা না হয় সেজন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। নিহতের পরিবারের লোকজন জানাজা শেষে মরদেহ দাফনের জন্য কবরস্থানে নিয়ে গেছেন।
শুক্রবার হামলা চালানো দু'টি মসজিদের একটি লিউনউড মুসজিদ। বুধবার ওই মসজিদের কাছেই জানাজা শুরু হয়। সেখানে শত শত মুসল্লি অংশ নিয়েছেন। জানাজার নামাজে নিহত খালেদ মুস্তাফা এবং তার ১৫ বছর বয়সী ছেলে হামজার রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয়েছে।
গত বছর সিরিয়া থেকে শরণার্থী হিসেবে নিউজিল্যান্ডে আশ্রয় নেন মুস্তাফা। তিনি এবং তার ছেলে শুক্রবার মসজিদ আল নুরে জুম্মার নামাজ আদায় করতে গিয়েছিলেন। সেখানেই ভয়াবহ হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তারা।
অপরদিকে মুস্তাফার ছোট ছেলে জাইদ (১৩) হামলা থেকে বেঁচে গেলেও তিনি আহত হয়েছেন। হুইলচেয়ারে বসে তিনি বাবা এবং ভাইয়ের জানাজায় অংশ নেন।
শুক্রবার জুমার নামাজের সময় উগ্র-ডানপন্থী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট নামে অস্ট্রেলিয়ার এক নাগরিক মুসল্লিদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৫০ জনকে হত্যা করে। শুক্রবারের ওই হামলায় বাংলাদেশ, ভারত, তুরস্ক, কুয়েত, সোমালিয়া এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকরা নিহত হয়েছে। আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কমপক্ষে ৪৯ জন। এদের মধ্যে ১২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদ ও লিউনউডের ইসলামিক সেন্টারের মসজিদে হামলার নেপথ্যে কাজ করেছিল ঘাতক ট্যারান্টের শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী মনোভাব। তিনি মসজিদে হামলা চালানোর আগে ৭৩ পৃষ্ঠার একটি কথিত ইশতেহারে প্রকাশ করেন অনলাইনে। যেখানে তার মুসলিম বিদ্বেষের মনোভাব স্পষ্ট। পুরো হামলার ঘটনা তিনি ফেসবুকে লাইভ করেছেন। হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
টিটিএন/জেআইএম