আদালত বললো, ধর্ষণ করার মতো চেহারা তার নেই
২০১৫ সালে পেরু থেকে ইতালির অ্যানকোনায় আসেন ২২ বছর বয়সী এক তরুণী। কিছুদিন পর তিনি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ তোলেন। ডাক্তারি পরীক্ষায় তার অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়। কিন্তু ওই তরুণী দেখতে ‘পুরুষালি’ এবং ‘অসুন্দর’, তাই তাকে ধর্ষণ করা যায় না— এমন যুক্তি দিয়ে আসামীদের মুক্তি দেয় ইতালির আপিলকোর্ট।
ভুক্তভোগীর আইনজীবী সিনজিয়া মোলিনারো দেশটির সুপ্রিম কোর্টে এই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেন। গত শুক্রবার এই মামলার রায় পুনর্বিচারের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এর পরই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
সিনজিয়া মোলিনারোর দাবি, ঘটনার দিন বিকেলে ক্লাস শেষে স্থানীয় এক পানশালায় যান ওই তরুণী। সেখানে পানীয়তে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয় অভিযুক্ত দুজন। এরপর ওই তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়।
ডাক্তার জানায়, ভুক্তভোগীর রক্তে ঘুমের ওষুধের উপাদান মিলেছিল। তাকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর পর ধর্ষণ করা হয়েছে। তাছাড়া পরীক্ষা করে ধর্ষণের সব আলামত পাওয়া গেছে।
২০১৬ সালে অভিযুক্ত দুজনকে আটক করা হয়। ইটালির অ্যানকোনার এক আপিল কোর্টে ধর্ষণ মামলার বিচারকাজ চলতে থাকে। মামলার শুনানিতে তিন নারী বিচারকের বেঞ্চে ধর্ষণে অভিযুক্তদের মধ্যে একজন বলেন, ‘ওই তরুণী দেখতে সুন্দরী নয়। তাছাড়া সে পুরুষদের মতো। তাকে আমরা কেন ধর্ষণ করবো?’
আশ্চর্যের বিষয়, এই ‘অদ্ভূত যুক্তি’র জোরেই ২০১৭ সালে মামলা থেকে অভিযুক্ত দুজনকে খালাস দেয়া হয়। ভুক্তভোগীর আইনজীবী বলেন, অভিযুক্তদের মুক্তি দেয়ার পক্ষে যে সব যুক্তি দেখানো হয়েছে, তার সবগুলোই ন্যাক্কারজনক।
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর নারী বিচারকদের বেঞ্চ এই ‘অদ্ভূত যুক্তি’ কেন মেনে নিল— প্রশ্ন তুলে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন দেশটির কয়েক হাজার মানুষ। গত সপ্তাহ থেকে এই রায়টি বিচারকার্যের জন্য লজ্জাজনক আখ্যা দিয়ে গত সোমবার অ্যানকোনা কোর্টের সামনে বিক্ষোভ করে তারা।
বিক্ষোভের নেতৃত্ব আছে দেশটির নারী সংগঠন। এক টুইটে ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শুধু যৌনসুখের চাহিদার জন্যই ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে না। বরং নির্যাতিতার প্রতি অদম্য ঘৃণাই তার কারণ। ফলে ধর্ষিতা কত সুন্দর, বিষয়টি তার উপর নির্ভর করে না।’
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, ফক্সনিউজ
এমএসএইচ/জেআইএম