ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

সারাবিশ্বে মানুষের মৃত্যুর কারণগুলো কী?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৯:৪৫ এএম, ০৭ মার্চ ২০১৯

সারা পৃথিবীতে মানুষের আয়ুষ্কাল বেড়েছে। ১৯৫০ সালে বিশ্বে মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৬ বছর। ২০১৫ সাল নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭১ এর বেশি। অনেক দেশে অগ্রগতি সবসময় মসৃণ ছিল- তেমনটি নয়। রোগ-বালাই, মহামারী এবং অপ্রত্যাশিত বিভিন্ন ঘটনা এসে যেন স্মরণ করিয়ে দিয়ে যায় যে, চীর-দীর্ঘ জীবন কারো অনুদান নয়।

অন্যদিকে আরও যেসব কারণে মৃত্যু আমাদের অকালে গ্রাস করতে পারে তার মধ্যে আছে সন্ত্রাসবাদ, যুদ্ধ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ- যা থেকে মোট মৃত্যুর শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের কম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

কিন্তু বিশ্বজুড়ে এখনো বহু মানুষ খুব অল্প বয়সে মারা যাচ্ছে এবং তা প্রতিরোধযোগ্য। যখন মানুষ মারা যায় তখন আসলে কীভাবে তিনি মারা যান, এবং এটি সময়ের সঙ্গে কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে- এটি সেই গল্প।

বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর কারণগুলো

২০১৭ সালে বিশ্বে মানুষ মারা গেছে প্রায় ৫৬ মিলিয়ন অর্থাৎ ৫ কোটি ৬০ লাখ। ১৯৯০ সালের তুলনায় যা দশগুণ, কিন্তু যেহেতু বৈশ্বিক জনসংখ্যা বেড়েছে এবং মানুষ আগের চেয়ে গড়ে বেশিদিন আয়ু পাচ্ছে।

৭০ শতাংশের বেশি মানুষ অ-নিরাময়যোগ্য, ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি রোগে মারা যান। এসব রোগ মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয় না এবং সাধারণত আরোগ্য লাভের গতি খুব ধীর।

এককভাবে সবচেয়ে বড় জীবন-নাশকারী রোগ কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ বা হৃদরোগ, যা হৃৎপিণ্ড এবং ধমনীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং প্রতি তিনটি মৃত্যুর জন্য এ রোগ দায়ী।

দ্বিতীয় প্রধান কারণ ক্যান্সার, যা প্রতি ছয়জনের মধ্যে একজনের মৃত্যুর জন্য দায়ী। এ ছাড়া অন্যান্য অ-সংক্রামক রোগ যেমন ডায়াবেটিস, শ্বাসতন্ত্রের নির্দিষ্ট কিছু রোগ এবং ডিমেনশিয়া জীবন কেড়ে নেয়া রোগের তালিকার শীর্ষে রয়েছে।

প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু

এখনও প্রতিরোধযোগ্য রোগে যে সংখ্যায় লোক মারা যাচ্ছে সে বিষয়টি আরও বেশি হতাশার। ২০১৭ সালে ডায়রিয়ার জটিলতা সংক্রান্ত রোগে মারা গেছে প্রায় ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন মানুষ, যা শীর্ষ দশটি মৃত্যুর কারণের একটিতে পরিণত হয়েছে। কোনও কোনও দেশে এটা সবচেয়ে বড় জীবননাশকারী।

একই বছর নবজাতকের অসুস্থতাজনিত জটিলতার কারণে জন্মের পর প্রথম ২৮ দিনের মধ্যে বাচ্চার মৃত্যু হয়-তাতে শুধু ১ দশমিক ৮ মিলিয়ন শিশু প্রাণ হারিয়েছে।

এই মৃত্যুর ধারাবাহিকতা দেশ থেকে দেশে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। জাপানে জন্মের পর ২৮ দিনের মধ্যে ১ হাজার শিশুর মধ্যে একটিরও কম মারা যাচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় বিশ্বের দরিদ্রতম অনেক দেশে প্রতি ২০ জনে একটি শিশু মারা যাচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিরোধযোগ্য রোগে মৃত্যু

ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোতে একইভাবে সড়ক দুর্ঘটনা মৃত্যুর উচ্চহারের জন্য দায়ী। ২০১৭ সালে ১ দশমিক ২ মিলিয়ন প্রাণ গেছে সড়কে। যদিও সাম্প্রতিক দশকগুলোতে অনেক উচ্চ আয়ের দেশে সড়কে মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, তবে বৈশ্বিকভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় একইরকম রয়ে গেছে।

অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে আত্মহত্যা এবং একজনের হাতে অন্যের প্রাণ হারানোর ঘটনা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ব্রিটেনে আত্মহত্যা ১৬ গুণ বেড়েছে এবং ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল এটি।

সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এবং নিজ নিজ দেশের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে লোকজনের মৃত্যুর কারণ হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে কী?

একটা সময়, এখনকার তুলনায় সংক্রামক রোগ-ব্যাধির এ ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা ছিল। ১৯৯০ সালে প্রতি তিনজনের একজনের মৃত্যুর কারণ ছিল সংক্রামক এবং ছোঁয়াচে রোগ। ২০১৭ সালে এসে তা দাঁড়িয়েছে প্রতি পাঁচজনে একজনে।

শিশুরা বিশেষ করে সংক্রামক রোগের ঝুঁকিতে থাকে। বেশিদিন আগে নয়, এ ১৯ শতকেই বিশ্বে প্রতি পরিবারে তৃতীয় সন্তানটি পাঁচ বছর বয়স হওয়ার আগেই মারা গেছে।

যখন থেকে টিকা কর্মসূচি এবং পরিচ্ছন্নতা, পুষ্টি, স্বাস্থ্য-সুরক্ষা এবং নিরাপদ পানির বিষয়ে উন্নতি হয়েছে তখন থেকে শিশু মৃত্যুর হার তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমে গেছে।

ধনী দেশগুলোতে বর্তমানে শিশুমৃত্যু তুলনামূলকভাবে বিরল, যদিও গরিব অঞ্চলে এখনো শিশু মৃত্যুহার এ বিশ শতকের প্রথমার্ধে ব্রিটেন এবং সুইডেনের সমান এবং তা ধরে রাখার চেষ্টা চলছে।

আধুনিক স্বাস্থ্যব্যবস্থায় একটি বিরাট সাফল্য হচ্ছে বৈশ্বিক শিশু মৃত্যুহার কমিয়ে আনা।

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে প্রতিবছর শিশু মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা গেছে সংক্রামক এবং সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দুর্দান্ত সাফল্যের মাধ্যমে।

অ-সংক্রামক রোগে মৃত্যুর ঘটনা স্থানান্তরিত হয়েছে বয়স্কদের মধ্যে।

বৃদ্ধদের সংখ্যা বাড়ায় এবং দীর্ঘমেয়াদি নানা অসুস্থতার কারণে অনেক দেশে বয়স্কদের আত্মীয়স্বজন ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা সংক্রান্ত ক্রমবর্ধমান বোঝার বিষয়ে অনেক দেশের ভেতরে উদ্বেগ বাড়ছে।

চলমান উন্নয়নকে বিচলিত করে দিতে পারে আকস্মিক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। ১৯৮০ সালের এইচআইভি/এইডস সঙ্কটের ঘটনা এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

এ মহামারী বিশ্বের সব অঞ্চলে দেখা দিয়েছিল, কিন্তু মানুষের আয়ুষ্কালের ওপর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রভাব দেখা যায় সাব-সাহারান আফ্রিকায়।

অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপি, চিকিৎসা এবং এর প্রতিরোধবিষয়ক শিক্ষা- এগুলোর সমন্বয়ে, এইডস-সম্পর্কিত অসুস্থতায় মৃত্যু বিশ্বে গত দশকে অর্ধেকে নেমে গেছে।

এমনকি ধনী দেশগুলোতেও ধারাবাহিক অগ্রগতি কারো দ্বারা প্রদত্ত নয়। গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে আয়ুষ্কাল সামান্য পড়ে গেছে মূলত ওপিওইড মাদক সঙ্কটের কারণে। নতুন মায়েদের ক্ষেত্রেও আয়ুষ্কাল বাড়েনি।

প্রায় ১০টির মতো দেশ রয়েছে যেখানে আজকের দিনেও অল্পবয়সী কোনও মাকে সন্তান জন্মদানের সময় কিংবা পরে মৃত্যুর মুখে পড়তে হতে পারে, এর মধ্যে আমেরিকাও রয়েছে।

এখনো অনেক পথ

বর্তমানে সামগ্রিক চিত্রটি অবশ্য ইতিবাচক। মানুষ আগের চেয়ে বেশিদিন বাঁচতে পারছে- যদিও কিছু মানুষ বিশেষ করে শিশুরা প্রতিরোধযোগ্য অসুখে মারা যাচ্ছে। তবে এটাও সত্য যে এখনো বহু পথ পাড়ি দিতে হবে।

স্যানিটেশন, পরিচ্ছন্নতা, পুষ্টি, টিকাদান কর্মসূচি এবং মৌলিক স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে আরও উন্নতি- এসবই এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চলমান স্বাস্থ্যখাতের উন্নতি চালিয়ে যেতে হলে কী কী কারণে মানুষ মারা যাচ্ছে সেটা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

জেডএ/জেআইএম

আরও পড়ুন