ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

রাখিতে বোনদের শৌচাগার উপহার দিলেন ভাইয়েরা

প্রকাশিত: ০৪:৪৮ এএম, ২৯ আগস্ট ২০১৫

ভারতের বীরভূমের খয়রাশোল ব্লকের নাকড়াকোন্দা পঞ্চায়েত এলাকার ৫০ জন ভাই রাখি উৎসবে বোনদের শাড়ি, গয়না বা প্রসাধনী উপহার দেননি। এবার তারা উপহার দিলেন শৌচাগার। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

অনেকেই বোনেদের শ্বশুরবাড়িতে শৌচাগার তৈরি করে দিয়েছেন। শুক্রবার নির্মল বাংলা প্রকল্পে শৌচাগার নির্মাণের দায়িত্বে থাকা স্যানেটারি মার্টে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা দিয়ে রসিদ বোনের হাতে তুলে দেন ভাইয়েরা।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বিডিও, যুগ্ম বিডিও-সহ ব্লক প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ যেন উপহার হিসেবে ফ্লাটের চাবি তুলে দেয়ার মতো ঘটনা।

এতকিছু থাকতে উপহার হিসেবে কেন শৌচাগার? উদ্দেশ্য, বোনেদের সম্ভ্রম বাঁচানো ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ঘরে শৌচাগার না থাকায় বহু মেয়েকেই সংসারে অশান্তির মুখে পড়তে হয়েছে।

বিহারের কাটিহার জেলার সীমাপুর-সাকরেইলির বধূ পূজা বিয়ের ছ’মাস পরে শ্বশুরবাড়ি ছাড়েন শৌচাগার নেই বলে। বৈশালীর সুনীতা বিয়ের চার বছর পরেও বাড়িতে শৌচাগার না হওয়ায় ফিরে আসেন বাপের বাড়িতে। পাটনার পারো শৌচাগার না থাকায় শ্বশুরবাড়ি ছাড়ার পর স্বচ্ছ ভারত অভিযানের মুখ হয়ে ওঠেন।

নদিয়ার রিঙ্কু মণ্ডলও শৌচাগার না থাকায় স্বামীর বাড়ি ছাড়েন। পরে আদালতের নির্দেশে পঞ্চায়েত তার বাড়িতে শৌচাগার বানিয়ে দেয়। ফলে শখের জিনিসের চাইতেও শৌচাগার যে ঢের বেশি মনের মতো উপহার হবে মেয়েদের কাছে, তা আশ্চর্য নয়।

হুমেরা বিবির বাড়ি নাকড়াকোন্দার নওপাড়া গ্রামে। বিয়ের ১২ বছর পরেও শ্বশুরবাড়িতে শৌচাগার ছিল না। ভাই শেখ আজিজুল বলেন, ‘শৌচাগার না থাকায় দিদির অসুবিধা হত। ছোট্ট ভাগ্নে-ভাগ্নীগুলোর কষ্ট হত। তাই শৌচাগারই উপহার দিলাম।’

আনন্দিত হুমেরা বলেন, ‘এবার অসুবিধা দূর হবে, মানও বাঁচবে।’ একাদশ শ্রেণির ছাত্রী শুকতারা খাতুনকেও একই উপহার দিলেন দাদা শেখ রবিউল। নওপাড়া গ্রামেই তাদের বাড়ি। বোন বড় হচ্ছে, শৌচাগার বানাতেই হত। সেটা রাখি উপলক্ষেই না হয় হল, বলছেন রবিউল। শুকতারা বলেন, ‘সেরা উপহার।’

স্কুলের পকেট খরচ ও বাবার কাছ থেকে কিছু নিয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়া বোনের জন্য শৌচাগার দিল নবম শ্রেণি পড়ুয়া রাহুল বাগদি। তারাপুর গ্রামের দিনমজুর বিলাস বাদ্যকর, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রামপদ মণ্ডলেরা বোন নেহা বাদ্যকর, মাধবী মণ্ডলের জন্য শৌচাগার উপহার দিলেন।

স্যানেটারি মার্টের দায়িত্বে থাকা সুভাষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘যতদিন ধরে শৌচাগার নির্মিত হচ্ছে ততদিন কাজ করছি। আজকে একেবারে অন্য অভিজ্ঞতা হল।’

কিন্তু রাখির উপহার হিসেবে শৌচাগার দেওয়ার ধারণা এল কোথা থেকে? প্রশাসনের কর্তাদের থেকে জানা গেল, উন্মুক্ত স্থানে শৌচ আটকানোর কাজে বীরভূমের সেরা ব্লক খয়রাশোল। কিন্তু নাকড়াকোন্দা গ্রাম পঞ্চায়েতে বেশ কিছু পরিবারে শৌচাগার না থাকায় চিন্তা ছিল, কী ভাবে নির্মল হবে পঞ্চায়েতটি। এ নিয়ে প্রচারও চলছিল। তারই অঙ্গ হিসেবে রাখিকে সামনে রেখে ভাইদের বোঝানো হল, বোনেদের জন্য এটাই দামী উপহার। এগিয়ে এলেন ভাইয়েরা।

এসএইচএস/এমএস