ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড ‘জঙ্গি’ তালিকা
বিভিন্ন সময়ে ভারতে ঘটেছে বেশ কিছু জঙ্গি হামলা। সেসব জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। কখনো ট্রেনে তো কখনো হোটেলের মধ্যে সশস্ত্র জঙ্গিরা ঢুকে হামলা চালিয়ে হত্যা করেছেন সাধারণ মানুষকে। সেসব ঘটনায় অভিযুক্তরা গা ঢাকা দিয়েছে দেশের বাইরে। বিভিন্ন সময়ে ভারতে হামলা চালানো সেসব জঙ্গিকে ভারত মোস্ট ওয়ায়েন্ট তালিকাভুক্ত করেছে।
ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি তালিকায় প্রথমেই আসে দাউদ ইব্রাহিমের নাম। ১৯৯৩ সালের মুম্বাই হামলার মূলহোতা ছিল দাউদ। তাছাড়া ভারতের মাদক ব্যবসার অন্যতম কারিগর তিনি। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকাতেও দ্বিতীয় স্থানে আছে দাউদ ইব্রাহিমের নাম। ভারতের দাবি, পাকিস্তানের নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন তিনি।
মাওলানা মাসুদ আজহার। সশস্ত্র সংগঠন জঈশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান তিনি। ২০০১ সালে ভারতের পার্লামেন্টে হামলা হয় তার নেতৃত্বেই। যদিও কান্দাহারে বিমান অপহরণের ঘটনায় তাকে পাকিস্তানের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয় তৎকালীন ভারত সরকার। পুলওয়ামায় আত্মঘাতী বিস্ফোরণের পিছনেও মাসুদের হাত আছে বলে মনে করছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা।
সাঈদ সালাউদ্দিন। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের প্রধান তিনি। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জঙ্গি ঘাঁটি থেকে ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে তিনি যুদ্ধ চালিয়ে আসছেন বলে দাবি ভারতের। কাশ্মীরে অশান্তি ছড়ানোর দায়ে ২০১১ সাল থেকে তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ।
হাফিজ মোহাম্মদ সাঈদ। লস্কর-ই-তৈয়বা নামের জঙ্গি সংগঠনের প্রধান তিনি। ২৬/১১ মুম্বাই হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড। তার পরিকল্পনাতেই মুম্বাইয়ে ২০০৮ সালে ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলা চালানো হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের মাটিতে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় এই কুখ্যাত জঙ্গি। ২০১৮ সালের পাকিস্তানের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
জাকি-উর-রেহমান লাখভি। জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার এই নেতা বর্তমানে কাশ্মীরে সুপ্রিম কমান্ডার হিসাবে কাজ করছেন। ২০০৮ সালের নভেম্বরে মুম্বাই হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। মুম্বাই হামলায় অংশগ্রহণ করার জন্য আজমল কাসভের পরিবারকে দেড় লাখ টাকা দেয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। ২০০৮ থেকে এনআইএ’র মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় আছে তার নাম।
মোহাম্মদ শাকিল বাবু মিঞা শেখ। তিনি ছোটা শাকিল নামেই পরিচিত। দাউদ ইব্রাহিমের দলের কুখ্যাত সন্ত্রাসী ১৯৯৩ সালের মুম্বাই হামলার একজন সংগঠক। গোয়েন্দাদের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা এই সন্ত্রাসী ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে মারা যান বলে জানা যায়। তবে তার মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ আছে গোয়েন্দাদের মধ্যে।
আব্দুল সুবাহান কুরেশি। ভারতের বিন লাদেন বলেও তিনি পরিচিত। জঙ্গি সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের এই সদস্য বোমা বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। ২০০৬ সালের ১১ জুলাই মুম্বাইয়ের ট্রেন বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়ার মাধ্যমে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন তিনি।
মোহাম্মদ আহমেদ সিদ্দিবাপ্পা। অপরাধ জগতে তার নাম ইয়াসিন ভাটকল। ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন জঙ্গি সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। দীর্ঘদিন ভারতীয় তদন্ত সংস্থার মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকার পর ২০১৩ সালে ভারত-নেপাল সীমান্তে ধরা পড়েন। ২০১৬ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন গোয়েন্দাদের বিশেষ একটি আদালত। পাকিস্তানে বসে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ছিল তার প্রধান কাজ।
আব্দুল রউফ আসগর। জঈশ-ই-মোহাম্মদ জঙ্গি সংগঠনের প্রধান মাওলানা মাসুদ আজহারের ছোট ভাই তিনি। পাকিস্তানে থেকেও ভারত ও আফগানিস্তানে একাধিক জঙ্গি হামলার সঙ্গে যুক্ত আব্দুল রউফ আসগর। কান্দাহারে তার নেতৃত্বেই ভারতীয় বিমান অপহরণ করা হয়। ওই বিমান অপহরণ করে ভারতে বন্দি ভাই মাসুদ আজহারকে মুক্ত করে নিয়ে যান তিনি।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
এসএ/জেআইএম