কাশ্মীরেই আছেন পুলওয়ামা হামলার মূলহোতা?
জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামা হামলার সন্দেহভাজন মূল হোতা পাক মদদপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী জয়েশ-ই-মোহাম্মদের কমান্ডার আব্দুল রশিদ গাজী ওরফে আফগানি এখনও কাশ্মীর উপত্যকায় লুকিয়ে আছেন। রোববার ভারতীয় গোয়ন্দা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, ‘বৃহস্পতিবার পুলওয়ামায় প্রাণঘাতী হামলার কয়েকদিন আগেই কাশ্মীরে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে এনকাউন্টারে স্থানীয় এক জঙ্গি নিহত হয়। ওই দিন এনকাউন্টারে জয়েশ-ই-মোহাম্মদের কমান্ডার আব্দুল রশিদ গাজী ওরফে আফগানি কোনো রকমে পালিয়ে যান। তবে অভিযানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক সদস্যের প্রাণহানি ঘটে।
জয়েশ-ই-মোহাম্মদের কমান্ডার এই আব্দুল রশিদ গাজী আফগানিস্তানে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন এবং তিনি একজন ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিশেষজ্ঞ। পুলওয়ামার অবন্তিপুরায় ভারতের কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) গাড়িবহরে বিস্ফোরক ভর্তি গাড়ি নিয়ে আত্মঘাতী হামলা চালানো জঙ্গি আদিল দারকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন গাজী।
আরও পড়ুন : জম্মুতে কাশ্মীরিদের ওপর হামলায় আহত ৩৭
গত ৩ জানুয়ারি দেশটির প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিায়ার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, জয়েশ-ই-মোহাম্মদের শীর্ষ এই কমান্ডার পুলওয়ামায় আত্মগোপন করেছেন। তার আগে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর পাক সীমান্ত পেরিয়ে কাশ্মীরে প্রবেশ করেন তিনি। পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় ৪০ সিআরপিএফ জওয়ানের প্রাণহানির পর গাজীকে ধরতে ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।
ভারতীয় গোয়েন্দাদের তথ্য বলছে, জয়েশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান মাওলানা মাসুদ আজহারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজনদের একজন আব্দুল রশিদ গাজী। প্রবীণ এই জঙ্গি আফগানিস্তানে যুদ্ধকালীন কৌশল ও আইইডি প্রস্তুতির ব্যাপারে তালেবানের অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। জয়েশ-ই-মোহাম্মদের দক্ষ অস্ত্র বিশেষজ্ঞদেরও একজন তিনি।
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া ও ফেডারেল শাসনাধীন উপজাতীয় এলাকায় ন্যাটো বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন গাজী। পরে ২০১১ সালে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে ফিরে আসেন তিনি।
ভারতীয় গোয়েন্দারা বলছেন, তখন থেকেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জয়েশ ও আইএসআইর দিনি এবং আসকারি প্রশিক্ষণ শিবিরে জিহাদীদের প্রশিক্ষণ দিতেন তিনি। গত বছরের অক্টোবরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযানে মাসুদ আজহারের ভাতিজা উসমান নিহত হওয়ার পর কাশ্মীর উপত্যকায় পাঠানো হয় গাজীকে।
উসমান মারা যাওয়ার পর পর এক ভিডিও বার্তায় শিগগিরই প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দেয় জয়েশ-ই-মোহাম্মদ। ২০১৭ সালে আরেক ভাতিজা তালহা রশিদ মারা যাওয়ার পর থেকেই প্রতিশোধের নেশায় মত্ত ছিলেন আজহার মাসুদ।
গত ডিসেম্বরের শুরুর দিকে গাজী এবং জয়েশ-ই-মোহাম্মদের আরো দুই কমান্ডারকে কাশ্মীর উপত্যকায় মাসুদ আজহার পাঠিয়ে দেন বলে ধারণা করছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। জয়েশের এই শীর্ষ জঙ্গি নেতারাই কাশ্মীরে প্রাণঘাতী হামলা চালানোর ছক আঁকেন। ভারতীয় পার্লামেন্টে হামলার মূলহোতা আফজাল গুরুর মৃত্যুদিনে ওই হামলা চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া।
এসআইএস/পিআর