সু চির ভিত নাড়াতে একাট্টা বিরোধীরা
আগামী বছর মিয়ানমারের পরবর্তী নির্বাচনে নতুন রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দীর মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন দেশটির বেসামরিক নেত্রী অং সান সু চি। জাতিগত সংঘাত এবং ধীরগতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জেরে ইতোমধ্যে দেশটিতে তার অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ছে। আসন্ন নির্বাচনে সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট কয়েকটি রাজনৈতিক দল বিভিন্ন আঞ্চলিক গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ে নতুন জোট গঠনে একাট্টা হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচনে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও তারা সরকার গঠনে প্রয়োজনে জোট বাঁধবেন জানিয়েছেন।
গত বছরের নভেম্বরে দেশটির আঞ্চলিক এক উপনির্বাচনে দেশটির সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট দলগুলো ১৩টি আসনের মধ্যে ছয়টিতে জয়লাভ করে। সু চির নেতৃত্বাধীন দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেতাদের অদক্ষতার কারণে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর কাছে বেশ কাঠ-খড় পোড়াতে হয়।
মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের কাচিন প্রদেশের এনএলডির নেতা দেশী লা স্যাং বলেন, এখন ওই জাতিগত দলগুলো পরস্পরের সঙ্গে জোট বেঁধেছে, প্রস্তুত হচ্ছে। আমরা দলের শক্তির ওপর ভরসা রাখতে পারছি না। জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য অামাদের আরো কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। কাচিনে নভেম্বরের উপ-নির্বাচনে আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হেরে যায় সু চির এনএলডি।
মিয়ানমারের গণতন্ত্রের পালা বদলের ভবিষ্যৎ এখন সঙ্কটাপন্ন। ২০১৫ সালের নির্বাচনে ভূমিধস জয়ে ক্ষমতায় আসে এনএলডি। দেশটির পার্লামেন্টে সেনাবাহিনীর ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় সু চির এই রাজনৈতিক দল।
অন্যান্য দলগুলোর চেয়ে আগামী নির্বাচনে এনএলডি ভালো ফলের প্রত্যাশা করলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তাগং ইনস্টিটিউট অব পলিটিক্যাল সায়েন্সের বিশ্লেষক ইয়ে মিও হেইন বলেন, সরকার গঠনের জন্য এনএলডি প্রয়োজনীয় আসনে জয় পাবে কি-না সেটা এখন প্রশ্নসাপেক্ষ। যদি তারা ব্যর্থ হয় তাহলে জোট গঠন অথবা অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে নতুন বোঝাপড়া করতে হবে এনএলডিকে।
সম্প্রতি সু চির বিরুদ্ধে দেশটিতে বিক্ষোভ করেছে বিরোধী দলের নেতা-সমর্থকরা। সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর দাবি-দাওয়া পূরণ ও সঠিক ব্যবস্থা নিতে এবং রাজনৈতিক চাওয়া-পাওয়া বুঝতে সু চি নেতৃত্বাধীন সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে সমালোচকরা দাবি করেছেন। তারা বলছেন, ধীরগতির সংস্কার নিয়েও বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন : ‘মোদি শাড়ি’তে ব্যাপক আলোড়ন ভারতে
গত মাসে ইয়াঙ্গুনের একটি মুসলিম স্কুলে যান সু চি। সেখানে তিনি দেশটির বিনিয়োগ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এই সম্মেলন থেকেই মিয়ানমারের সেনারচিত সংবিধান সংশোধনের দাবি তোলেন এনএলডির নেতারা। কিন্তু বিরোধীরা ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন বিরোধী জোট গঠনে।
দেশটির নিম্নকক্ষের সাবেক স্পিকার ও জান্তা শিয়ে ম্যান দীর্ঘদিন ধরে সু চির রাজনৈতিক মিত্র হিসেবে কাজ করে আসছেন। কিন্তু গত সপ্তাহে তিনি নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। নতুন এই দলের নাম দিয়েছেন ইউনিয়ন বেটারমেন্ট পার্টি (ইউবিপি)।
২০১৫ সালে দেশটির সেনা নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট পার্টির প্রধানের পদ থেকে অপসারিত হন। তৎকালীন শাসকদের থেকে নিজেকে মডারেট হিসেবে তুলে ধরেন তিনি।
১৯৮৮ সালের জান্তা শাসনবিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তি ছাত্র নেতা কো কো গি পিপলস পার্টি নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তিনি বিভিন্ন আঞ্চলিক ও জাতিগত গোষ্ঠীগুলোকে নিজ দলে টানার চেষ্টা করছেন।
কো কো গি বলেন, এমনকি যদি কোনো দল এককভাবে জয়ী হতে না পারে তাহলে আমরা জোটগতভাবে পার্লামেন্টে যাবো। আমরা একজনের পাশে দাঁড়াবো, আমাদের ভোট বিভাজন হতে দেব না।
তবে দেশটির পশ্চিমাঞ্চল রাখাইনের সঙ্কটের চেয়ে বেশি অন্য কোনো বড় সঙ্কট এই মুহূর্তে এনএলডির সামনে নেই। কেননা ওই রাজ্যে ২০১৭ সালের আগস্টে দেশটির সেনাবাহিনী সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন অভিযান শুরু করে। অভিযানের মুখে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছে। রোঙ্গিা সঙ্কট নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রয়েছের দেশটির ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি।
এই সঙ্কটের জেরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্লক ইউরোপ মিয়ানমারের পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার বাতিল করছে।
সূত্র : রয়টার্স।
এসআইএস/পিআর