রাহুল গান্ধীর মোনাজাতের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল
ভারতে বিরোধী দল কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী ও তার পিতা রাজীব গান্ধীকে মোনাজাত করার ভঙ্গীতে কাউকে শেষ বিদায় জানাতে দেখা যাচ্ছে-এমন একটি পুরনো সাদা-কালো ছবি ভারতের সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়েছে।
ক্ষমতাসীন দল বিজেপির কিছু সমর্থক ওই ছবি ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে পোস্ট করে দাবি করছেন, গান্ধী পরিবার যে আসলে মুসলিম তা এই ছবি থেকেই প্রমাণিত। রোববার বিবিসি বাংলার অনলাইন সংস্করণে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, বিজেপি সমর্থকরা এ-ও বলছেন, ওই ছবিটি নাকি ইন্দিরা গান্ধীকে শেষ বিদায় জানানোর। তবে ভারতে ফেক নিউজ বা ভুয়া খবর শনাক্ত করার পোর্টাল অল্ট নিউজের মতে, ওই ছবিটি মোটেই ইন্দিরা গান্ধীকে শেষ বিদায় জানানোর নয়। বরং তারা বলছে, ছবিটি পাকিস্তানের পাশতুন নেতা খান আবদুল গফফর খান বা সীমান্ত গান্ধীর শেষযাত্রার। তিনি বাচা খান নামেও পরিচিত ছিলেন।
কোনো মুসলিম ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিকে শেষ বিদায় জানানোর সময় অনেকেই মোনাজাতের ভঙ্গী করেন, রাহুল গান্ধী ও তার পিতাও ঠিক একই জিনিস করেছিলেন বলে তাদের ধারণা। তবে ওই একই ছবিতে ভারতের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পি ভি নরসিমহা রাওকে হাত জোড় করে হিন্দু রীতিতে প্রণামের ভঙ্গীতে ওই প্রয়াত ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যাচ্ছে। সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনেকেই আবার কমেন্টসে লিখেছেন, নরসিমহা রাও যেখানে ওনাকে প্রণাম করছেন, সেখানে গান্ধীরা কেন কলমা পড়ছেন-সেটা ওনারাই ভালো বলতে পারবেন!
ইন্দিরা গান্ধীর মরদেহের সামনে রাজীব গান্ধী ও রাহুল গান্ধী কলমা পড়ছেন, অথচ সারা ভারত তাদের না কি ব্রাহ্মণ হিসেবে জানে-এমন মন্তব্যও করা হয়েছে ওই ছবির নিচের ক্যাপশনে।
ভারতে নির্বাচনের আগে রাহুল গান্ধীকে অবশ্য তার ধর্ম নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ার ট্রোলদের আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে। ক্যাথলিক মা সোনিয়া গান্ধীর সন্তান হিসেবে তিনি মোটেই হিন্দু নন-এমন একটা প্রচারের মুখে তার দল কংগ্রেসও রীতিমতো বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, রাহুল গান্ধী একজন উপবীত বা পৈতে-ধারী হিন্দু ব্রাহ্মণ। কিন্তু তারপরও যে রাহুল গান্ধীর ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাস নিয়ে রাজনৈতিক আক্রমণ থামছে না, তা সর্বশেষ এই ঘটনা থেকেই প্রমাণিত।
সম্প্রতি ভারতের সোশ্যাল মিডিয়ায় আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এতে দাবি করা হয়েছে, ভারতে বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের পরিচিত মুখ কানহাইয়া কুমারও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। ওই ভিডিও ক্লিপটিতে তাকে বলতে শোনা যায়, আমি একজন ভারতীয় মুসলিম। আমরা আরব মুলুক থেকে এখানে আসিনি, আমরা এখানকারই লোক আর এ দেশেই থাকব।
কিন্তু পূর্ণাঙ্গ ভিডিওটিতে পরে দেখা গেছে, কানহাইয়া কুমার আসলে তার বক্তৃতায় ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা মাওলানা আবুল কালাম আজাদকে উদ্ধৃত করে তার বক্তব্যেই ওই কথাগুলো বলেছিলেন। কিন্তু সেটিকে এমনভাবে এডিট করা হয়েছে যাতে মনে হয় ওগুলো কানহাইয়া কুমারের নিজের কথা।
ভারতে কংগ্রেস বা বামপন্থী দলগুলোর নেতৃত্বকে এভাবে যারা ধর্ম নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে আক্রমণ করছেন, দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা হিন্দুত্ববাদী বিজেপি বা তাদের শাখা সংগঠনগুলোর সঙ্গে যুক্ত। উদাহরণস্বরূপ রাহুল গান্ধী ও রাজীব গান্ধীর মোনাজাত করার ছবিটি যে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ছড়িয়েছে, সেটি বিজেপির যুব শাখার কর্মী মনোজ কুমার রানার।
এর আগে কানহাইয়া কুমার মুসলিম হয়েছেন বলে যিনি দাবি করেছিলেন তার নাম আদিত্য ওয়াগমার। জানা গেছে, সেও বিজেপি ও আরএসএসের সমর্থনে নিয়মিত টুইট করে থাকেন।
মনোজ কুমার রানার পোস্ট করা গান্ধীদের ছবিটি নিয়ে তদন্ত করতে নেমে অল্ট নিউজ অবশ্য প্রমাণ পেয়েছে, ছবিটি কোনো মতেই বরং ইন্দিরা গান্ধীর শেষ বিদায়ের নয়। বরং তারা বলছে, ১৯৮৮-তে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী সুইডেন সফরে যাওয়ার সময় ঘণ্টা দুয়েকের জন্য পাকিস্তানের পেশোয়ারে নেমে প্রয়াত সীমান্ত গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন। ছবিটি তখনকারই।
এর সমর্থনে পাকিস্তানের একাধিক ওয়েবসাইট ও নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদন থেকেও প্রমাণ দাখিল করেছে তারা। ইন্দিরা গান্ধীর শেষকৃত্যের সময়কার ছবির সঙ্গে এই বিতর্কিত ছবিটি মিলিয়ে দেখে আরও জানানো হচ্ছে, পরের ছবিটিতে রাহুলের বয়স অনেক বেড়ে গেছে বলেও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। কাজেই তাদের যুক্তি, দুটো ছবি কিছুতেই এক সময়ের হতে পারে না!
এসআর/এমকেএইচ