ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্যই ভয়াবহ ঠান্ডা যুক্তরাষ্ট্রে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৮:৫৪ এএম, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

যুক্তরাষ্ট্রে যে ভয়াবহ ঠান্ডা পড়েছে তার সঙ্গে হয়তো জড়িয়ে রয়েছে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির মতো বিষয়। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো অনেকেই প্রশ্ন তুলবেন, তাহলে কেন এরকম মানুষ মারা যাওয়ার মতো ঠান্ডা পড়েছে?

আসলে উষ্ণতা বৃদ্ধি মানে এটাই নয় যে, আমরা সব সময় সব জায়গায় শুধু গরম আবহাওয়াই দেখতে পাব। এই শব্দগুলোর প্রচলন হয়েছিল এটা বোঝাতে যে, বিশ্বের তাপমাত্রা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে এবং সেটা চরম আবহাওয়ার তৈরি করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে জমে যাওয়ার মতো যে প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়েছে, সেটাও হয়তো তারই একটি উদাহরণ। একই সময়ের এরকম আরো উদাহরণ হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায় সেদ্ধ হয়ে যাওয়ার মতো প্রচণ্ড গরম পড়া আর আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলের খরা।

যুক্তরাষ্ট্রে অনেক এলাকায় প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে যে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে, সেটার ব্যাপারে অনেক আগে থেকেই জলবায়ু বিজ্ঞানীরা পূর্বাভাস দিয়ে আসছেন। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে, এর আসল উপাদান সৃষ্টি হয়েছে মেরু অঞ্চলের উষ্ণতা বৃদ্ধির মাধ্যমে।

তারা বলছেন, এর ফলে বরফবিহীন সমুদ্রের সৃষ্টি হচ্ছে, যার ফলে অনেক বেশি তাপ ছড়িয়ে পড়ছে। তখন সেটি মেরু অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঠান্ডা বাতাসের পরিচালন দুর্বল করে ফেলছে এবং সেটিকে দক্ষিণ দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

যখন মেরু এলাকা ঠান্ডা থাকে, তার তুলনায় ঠান্ডা তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং তুষারপাতের ঘটনা অনেক বেশি নিয়মিত ঘটে যখন সেটি উষ্ণ হয়ে ওঠে। গত বছর ন্যাচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় এই তথ্য তুলে ধরা হয়।

তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে সেটি বায়ুমণ্ডলের কয়েকটি স্তরে ছড়িয়ে পড়ে, ফলে মধ্য শীত বা শীতের শেষের দিকে ভয়াবহ ঠান্ডার মতো পরিস্থিতি তৈরির সম্ভাবনা দেখা যায়।

এই অবস্থায় আইসি পোলার এয়ার বা পোলার ভোরটেক্স নামে চরম ঠান্ডা বাতাস দক্ষিণ এলাকাগুলোয় ছড়িয়ে পড়ে।মেরুর উত্তরাঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পরিবর্তে বায়ু মণ্ডলের এই ঠান্ডা বাতাস আস্তে আস্তে ঘুরতে ঘুরতে যুক্তরাষ্ট্র, আটলান্টিক আর ইউরোপের ওপর দিয়ে বয়ে যেতে থাকে। এই চক্রের দক্ষিণ অংশ কিছুদিনের জন্য চরম ঠান্ডা আবহাওয়ার তৈরি করে, যা অনেক এলাকায় গিয়ে স্থির হয়ে থাকে।

তবে কিছু গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, কেন পোলার ভোরটেক্স তৈরি হয়, সেই রহস্য এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
২০১৭ সালে আমেরিকান আবহাওয়া বিদ্যা সমিতি জানিয়েছে, শীতের সময়কার ঠান্ডা বাতাস এবং সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রার জন্য যদিও পোলার ভোরটেক্সের গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। তবে সাম্প্রতিক চরম ঠান্ডার পেছনে তার অবদান কতটুকু সে বিষয়ে এখনো যথেষ্ট তথ্য উপাত্তের অভাব রয়েছে।

ইস্ট অ্যানলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক বেন ওয়েবের বলেন, উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে যে অনেক এলাকায় তাপ দাহ আরো তীব্র করে তোলে, সেটা এর মধ্যেই নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ঠান্ডা আবহাওয়ার তীব্রতাও যে এটি বাড়িয়ে দিতে পারে, কিন্তু সেটা বলতে হলে আরো গবেষণার দরকার হবে। কিন্তু একটা বিষয়ে অন্তত বিজ্ঞানীরা একমত হয়েছেন যে, বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে নিয়মিতভাবেই চরম আবহাওয়ার সৃষ্টি হচ্ছে।

এর বাইরে আরো কিছু উপাদান শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা এরকম চরম আবহাওয়া সৃষ্টির পেছনে ভূমিকা রাখে। এর একটির নাম ইদানীং আমরা প্রায়ই শুনে থাকি, সেটি হলো এল নিনো অ্যাফেক্ট অথবা ইকুয়েডরের কাছাকাছি প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণতা বৃদ্ধি। যখন সেটি ঘটে, জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলেন না যে, বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণেই এটার সৃষ্টি হয়েছে।

টিটিএন/পিআর

আরও পড়ুন