ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হচ্ছে?
এক সময় বিশ্লেষকরা মনে করতেন যে, সিরিয়া বা লেবাননের পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল আর ইরানের মধ্যেকার উত্তেজনা যতই তীব্র হোক বা বিক্ষিপ্ত আক্রমণের ঘটনা যতই ঘটুক না কেন একেবারে সরাসরি যুদ্ধ বেধে যাওয়া সেটা হয়তো হবে না। কিন্তু ইসরায়েলের উত্তর সীমান্ত এলাকার কৌশলগত প্রেক্ষাপট দ্রুত বদলাতে শুরু করেছে।
সোমবার রাতে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের আশপাশে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১১ জন সরকারপন্থী যোদ্ধা নিহত হবার ঘটনা যেন সেই কথাই বলছে। ইসরায়েল সাধারণত সিরিয়ার ভেতরে তাদের আক্রমণ চালানোর কথা খুব একটা স্বীকার করে না। কিন্তু এবার তারা অভিযানের শুরু থেকেই তা টুইট করে জানিয়ে দিয়েছে।
বিবিসির বিশ্লেষক জোনার্থন মার্কাস লিখছেন, সেখানে সক্রিয় যেসব প্রধান শক্তি তারা নতুন পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলতে চেষ্টা করছে।
দামেস্কের আশপাশে ইসরায়েলের মিসাইল আক্রমণ
ইসরায়েলের জন্য এই অঞ্চলে ইরানি প্রভাব মোকাবেলা বহু পুরনো এজেন্ডা। ইরানের নেতারা ইহুদি রাষ্ট্রটির ঘোরতর বিরোধী এবং তারা ইসরায়েলকে পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেবার কথা বলেছেন। ইসরায়েলবিরোধী অনেক উগ্র গোষ্ঠীকে সমর্থনও দিচ্ছেন। তাদের পরমাণু কর্মসূচিই যে শুধু ইসরায়েলের মাথাব্যথার কারণ তা নয়, ইরানের হাতে আছে দীর্ঘপাল্লার এবং জাহাজ ধ্বংসকারী ক্ষেপণাস্ত্রের মতো উন্নত অস্ত্রও। এসব অস্ত্র লেবাননের হিজবুল্লাহকে দিয়েছে ইরান।
সিরিয়ায় ইরানের নিয়মিত বাহিনীর সৈন্য, কর্মকর্তা ও সামরিক উপদেষ্টা ছাড়াও ‘কুদস’ নামে মিলিশিয়া বাহিনীও আছে যারা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে। সিরিয়া যুদ্ধে আসাদের সমর্থনে ইরানসমর্থিত একাধিক বাহিনী এখন সেখানে সক্রিয় আর তাই তারা এখন ইসরায়েলের সীমান্তের খুব কাছে চলে এসেছে, যা ইসরায়েলের মাথাব্যথার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদ সিরিয়ার ক্ষমতায় এখনো টিকে রয়েছেন এবং সেটা প্রধানত ইরানের সমর্থনেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিরিয়ার মাটি থেকে হাজার দুয়েক মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে রাশিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ আছে। গত সপ্তাহেও রুশ কর্মকর্তারা ইসরায়েল সফর করেছে।
সিরিয়ার ভেতরে ইসরায়েল এরকম হাজার হাজার স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে
রাশিয়া যদিও বাশার আসাদের সমর্থক কিন্তু তারা সিরিয়ায় ইরানি প্রভাব কমাতে বা উচ্ছেদ করতে কোনো চাপ প্রয়োগ করছে না।
ইসরায়েলিরা বলছে, সিরিয়ার ভেতরে সম্প্রতি অস্ত্রগুদাম, ব্যারাক, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইত্যাদি তৈরি করেছে ইরান। গত এপ্রিলে পালমাইরার কাছে ইসরায়েল একটি ড্রোন পরিচালনা কেন্দ্রের ওপর বিমান আক্রমণ চালায় তাতে কয়েকজন ইরানি সামরিক উপদেষ্টা নিহত হন। এর পাল্টা জবাব দেয়া হবে বলে অঙ্গীকার করে ইরান। এরপর দু’পক্ষ থেকেই বিক্ষিপ্ত আক্রমণের ঘটনা ঘটে চলেছে।
ইসরায়েলের সাবেক সামরিক প্রধান লে জেনারেল গাদি আইসেনকোট সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকাকে বলেছেন, ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী সিরিয়ার হাজার হাজার লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ চালিয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনী ‘আইডিএফ’-এর টুইট
সোমবার রাতের ঘটনা তার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত। ইসারয়েলি বাহিনী বলছে, ইরানি কুদস বাহিনী সিরিয়ার ভেতর থেকে গোলান উপত্যকা লক্ষ্য করে একটি রকেট নিক্ষেপ করেছিল যা আটকে দেয় ইসরায়েলের আয়রন ডোম নামের প্রতিরোধী ব্যবস্থা। এর আগে মূলত হিজবুল্লাহকে দেয়া ইরানি অস্ত্রের চালান বহনকারী যানগুলোতে আক্রমণ চালাতো ইসরায়েল।
তবে ইরান এখন কৌশল বদলে ফেলেছে। তারা পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরাক থেকে শিয়া যোদ্ধাদের এনে ১ লাখ সদস্যের এক বাহিনী গড়ে তুলছে। তাছাড়া সিরিয়ান বিমানবাহিনীর ঘাঁটিগুলোয় গড়ে তুলছে গোয়েন্দা কেন্দ্র। আর এরপর থেকে ইসরায়েল সরকার তার সেনাবাহিনীকে প্রায় প্রতিদিনই সিরিয়ায় আঘাত হানার অনুমতি দিয়েছে, বলছেন জেনারেল আইসেনকোট।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব ঘটনা সহসাই এমন এক যুদ্ধের জন্ম দিতে পারে যার ফলে এক ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে যেতে পারে। জোনাথন মার্কাস বলছেন, ইসরায়েলের এ যুদ্ধ চলতে থাকবে বলেই মনে হচ্ছে এবং ইসরায়েলের সর্বশেষ এ আক্রমণের তীব্রতায় বোঝা যায় যে পরিস্থিতি কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এসআর/জেআইএম