টানা ৪২ দিন কথা বলেন না এই গ্রামের বাসিন্দারা
কথা যোগাযোগের মাধ্যম। মানুষ ভেদে কেউ কম কথা বলেন, আবার কেউ বেশি। তবে বেঁচে থাকার জন্য কথা বলা লাগেই। কিন্তু কখনো কথা না বলে আপনি কয়টা দিন কাটিয়ে দিতে পারবেন, চিন্তা করেছেন? এভাবে কথা না বলে কয়টা দিন চালিয়ে নিতে পারবেন-এটা একান্ত আপনার এবং আপনার সক্ষমতার ওপর সেটি নির্ভর করছে। তবে কখনো কি শুনেছেন মানুষ টানা ৪২ দিন কথা না বলে থাকতে পারে?
তা-ও একজন, দুজন নয়, পুরো একটি গ্রামের লোক টানা ৪২ দিন কথা না বলে দিব্যি কাটিয়ে দিতে পারে। এমনই একটি গ্রামের কথা জানিয়েছে ভারতীয় বাংলা জনপ্রিয় দৈনিক আনন্দবাজার।
ভারতের হিমাচল প্রদেশের মানালির কুলু জেলার গোশাল গ্রাম। এই গ্রামের বাসিন্দারা জানুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ থেকে ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখ পর্যন্ত কোনো কথা বলেন না। গোশাল ছাড়াও বুরুয়া, শানাগ ও কুলাং গ্রামেও এই প্রথা রয়েছে।
হিমাচল প্রদেশের মাঝাচ, পালচান, কোঠি, রুয়ার গ্রামের বাসিন্দারাও বিশ্বাস করেন এই ৪২ দিন নীরবতা পালনের বিষয়টি। সোলাং ও রুয়ার মতো গ্রামে আবার চুপ থাকার পাশাপাশি বন্ধ থাকে কৃষিকাজও।
মাঘ মাসে মকর সংক্রান্তির সময় থেকে এই রীতি চালু হয়। কিন্তু ৪২ দিন একটানা কেন চুপ করে থাকেন এই গ্রামগুলোর বাসিন্দারা? এ নিয়ে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মত। কারও মতে, এই সময় গভীর ধ্যান করে ঈশ্বর স্বর্গের পথে ফিরে যান। স্বর্গে যাওয়ার পথে অসুবিধার মুখে যাতে না পড়েন, তাই নাকি এই নীরবতা। তবে এই নিয়ে পৌরাণিক মতও রয়েছে।
বিপাশা নদীর পাশে ঋষি গৌতম তপস্যা করছিলেন। তার তপস্যা যাতে ভঙ্গ না হয়, তাই নাকি এই ব্যবস্থা। বহু প্রাচীন একটি মন্দিরও রয়েছে এখানে। মকর সংক্রান্তির দিন লোহ্রিতে পূজার্চনার পর বন্ধ করে দেয়া হয় মন্দির।
গৌতম ঋষি ছাড়াও বেদব্যাস ও কাঞ্চন নাগের মূর্তিও রয়েছে এই মন্দিরে। মানালির গোশাল গ্রামের এই মন্দিরটি এই সময়ে পর্যটকের জন্য বন্ধ থাকে। মন্দিরে কোনো রকম পূজাও করা হয় না, সংবাদ সংস্থাকে এমনটাই জানিয়েছেন মন্দিরের পুরোহিত।
ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখের পর মন্দির খোলে। তা নিয়েও রয়েছে একটি মিথ। সেই সময়ে একটা ফুল যদি পড়ে থাকে মন্দিরের মেঝেতে, তাহলে তা গ্রামগুলোর জন্য শুভ বলে মনে করা হয়। আর তা যদি না হয়? যদি কয়লার টুকরো পড়ে থাকে, ধরে নেয়া হয় গ্রামে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে পাঁচদিনের মধ্যেই।
বৈজ্ঞানিক মত বলছে, বরফ ঢাকা এই জায়গাগুলোতে রোদের আভাস মিললে খোলে মন্দির। এতটাই বেশি বরফ পড়ে জায়গাগুলোতে যে, শীতকালে কর্মক্ষমতাই থাকে না স্থানীয় বাসিন্দাদের। বেশিরভাগ সময়টাই ক্লান্ত লাগে। তাই কথা বলার বা বাড়ি থেকে বেরোনোর সুযোগ প্রায় মেলে না।
তবে চুপ করে থাকলেও গ্রামের মানুষ এই সময়ে হেডফোনে গান শোনেন, বেড়াতে যান, বাড়ির কাজ করেন। এ ছাড়া কোনো পর্যটককেও কথা বলার সুযোগ দেন না গ্রামের বাসিন্দারা।
এসআর/এমএস