যে বিতর্ক উস্কে দিলেন টিউলিপ
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের ব্রেক্সিট চুক্তিতে ভোটে অংশ নিতে বিরোধী লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক নির্ধারিত সময়ের পর তার সন্তান জন্মদানের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তার সন্তান জন্মদান দু’দিনের জন্য পিছিয়ে দিয়েছেন।
নীল রংয়ের পোশাকে, হুইল চেয়ারে বসে হাউস অব কমন্সে ভোট দিতে আসেন লেবার পার্টির এই এমপি। উত্তর লন্ডনের হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডে থাকার বদলে তিনি পার্লামেন্টে তার গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করেছেন। মঙ্গলবার তার স্বামী ক্রিস পার্সি হুইলচেয়ারে করে তাকে পার্লামেন্টে নিয়ে যান। টিউলিপের দুই বছরের একটি মেয়ে আছে। প্রথম সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় তার গর্ভকালীন জটিলতা দেখা দিয়েছিল।
দ্বিতীয় সন্তান জন্মদানের জন্য আগামী ৪ ফেব্রুয়ারিতে তার অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এবারও কিছু জটিলতা দেখা দেওয়ায় হ্যাম্পস্টেডের রয়্যাল ফ্রি হাসপাতালের চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের তারিখ এগিয়ে সোমবার বা মঙ্গলবার করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
পরে টিউলিপ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে তারিখ দুই দিন পিছিয়ে বৃহস্পতিবার করার অনুরোধ জানান। তিনি জানিয়েছেন, তিনি যেন ভোটে অংশ নিতে পারেন সেজন্যই এই সপ্তাহের শেষে সন্তান জন্মদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তার এই সিদ্ধান্তের কারণে পার্লামেন্টের প্রক্সি ভোটিংয়ের পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে এমন কোন পদ্ধতিতে নেই যার মাধ্যমে কোন এমপি তার পক্ষে ভোট দেয়ার জন্য কাউকে মনোনীত করতে পারবেন। তারা সদ্য বাবা-মা হলেও বা কোন নারী গর্ভবতী হলে বা সন্তান জন্মদানের সময় হলেও তারা তাদের পক্ষে ভোট দেয়ার জন্য কাউকে নির্বাচন করতে পারেন না।
অবশ্য সেখানে বিকল্প একটি পদ্ধতি আছে যাকে ‘পেয়ারিং’ বলা হয়। এই পদ্ধতিতে কোনো একটি দলের একজন এমপি ভোট দিতে অংশগ্রহণ করতে না পারলে তিনি প্রতিপক্ষ দলের একজনকে ভোট থেকে বিরত থাকতে রাজি করানোর সুযোগ নিতে পারেন। অর্থাৎ দু'দল থেকে দুজন ভোটে অংশ নেবেন না।
তবে এই পদ্ধতিকে বিশ্বাস করেন না বলে জানিয়েছেন টিউলিপ। কারণ এর আগে ট্রেড বিলের বিষয়ে একটি ভোটে এই নিয়ম ভঙ্গে অভিযুক্ত হয়েছিলেন টোরি চেয়ারম্যান ব্র্যান্ডন লিউয়িস। লিব ডেম জো সুইনসনের সঙ্গে পেয়ারিং করে তার ভোট না দেয়ার কথা ছিল। সে সময় মাতৃত্বকালীন ছুটি কাটাচ্ছিলেন লিব ডেম। তবে এই ঘটনার জন্য পরে ক্ষমা চেয়েছেন ব্র্যান্ডন লিউয়িস।
নির্ধারিত সময়ের পর সন্তান জন্মদানের সিদ্ধান্তের বিষয়ে টিউলিপ বলেন, চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের একদিন পরও যদি আমার ছেলে পৃথিবীতে আসে এবং এতে যদি ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ার ভালো সুযোগ আসে, তবে তাই হোক।
তবে ব্রিটেনের পার্লামেন্টে প্রক্সির কোন সুযোগ না থাকায় এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে ব্রিটেনের এই ঘটনাকে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক বা প্রাচীন পদ্ধতি বলে উল্লেখ করেছেন। জর্জিয়া হিকস এক টুইটবার্তায় বলেন ‘প্রক্সি পদ্ধতি না থাকায় একজন মাকে সন্তান জন্মদানে বিলম্ব করতে হবে। এরপরেও লোকে তর্ক করবে এটা বৈষম্য নয় এবং সেখানে লিঙ্গ সমতা আছে।’
অন্য একজন বলেছেন, ২০১৯ সালেেএকজন নারীকে এমন পরিস্থিতিতে পড়াটা সত্যিই অবিশ্বাস্য। তবে অনেকেই আবার টিউলিপের সমালোচনা করে বলছেন, তিনি তার সন্তানের স্বাস্থ্যের বিষয়টি উপেক্ষা করছেন।
টিটিএন/পিআর