অস্ত্রোপচারের সময় নিজের রক্তেই বাঁচলেন তরুণী
রোগীকে বাঁচাতে দরকার ছিল ‘সময়’ এবং ‘ও’ নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত। তরুণী রোগীকে হাসপাতালে যখন আনা হয়, তখন চিকিৎসকদের হাতে দু’টির কোনোটিই ছিল না। তবু হাল ছাড়েননি চিকিৎসকরা। তখনও রক্তক্ষরণ হয়ে যাওয়া ২১ বছরের সঙ্কটাপন্ন ওই রোগীকে বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়েই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন তারা।
শেষ পর্যন্ত তারই ক্ষরণ হওয়া রক্ত ব্যবহার করে অস্ত্রোপচার হয় আমেনা বিবি নামে ওই তরুণীর। অস্ত্রোপচারের পর চার দিন পেরিয়ে গেছে। সুস্থ হয়ে ওঠা আমেনাকে বুধবার ছুটি দেয়া হবে। পশ্চিমবঙ্গের বারাসত জেলা হাসপাতালে এমন অস্ত্রোপচার আগে হয়েছে বলে মনে করতে পারছেন না চিকিৎসকরা।
হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘ওই অবস্থায় এই পদ্ধতি অবলম্বন ছাড়া আমাদের আর কিছু করার ছিল না। রোগীর রক্ত ব্যবহার করা না গেলে তাকে বাঁচানো যেত না।’
আরও পড়ুন : নাম পাল্টালেন সৌদির ধর্মত্যাগী সেই তরুণী
দত্তপুকুরের ময়না এলাকার বাসিন্দা আমেনার স্বামী আলামিন মণ্ডল রাজমিস্ত্রি। তাদের সাড়ে তিন বছরের একটি ছেলে রয়েছে। পরিবার বলছে, গত শুক্রবার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন অন্তঃসত্ত্বা আমেনা। রক্তক্ষরণ ও পেটের যন্ত্রণা নিয়ে তাকে বারাসত জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সুব্রত বলেন, হাসপাতালে আনার পর আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করে দেখা যায়, জরায়ুর বদলে ফ্যালোপিয়ান টিউবে ভ্রূণ তৈরি হয়েছিল আমেনার। ভ্রূণ বড় হতেই ফ্যালোপিয়ান টিউব ফেটে বিপত্তি বাধে। রক্ত পরীক্ষায় দেখা যায়, হিমোগ্লোবিন তিনে নেমে এসেছে। তাদের নিজস্ব ব্লাড ব্যাঙ্কেও ‘ও’ নেগেটিভ রক্ত ছিল না। এমনকি বারাসতের অন্য এক বেসরকারি হাসপাতালেও তা মেলেনি।
হাসপাতালের এই সুপার বলেন, ‘আমেনার পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি বুঝিয়ে বললে, তারা অস্ত্রোপচার করতে বলেন।’
তিনি জানান, অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে তখনও রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সেই রক্ত জমাট বাঁধেনি। সিদ্ধান্ত হয়, ওই রক্ত সংগ্রহ করে আমেনাকে দেয়া হবে। ‘অটো ট্রান্সফিউশন’ পদ্ধতিতে প্রায় ৫০০ মিলিলিটার রক্ত পাওয়া যায়। তাই দিয়েই অস্ত্রোপচার হয়। ঘণ্টা দু’য়েক পরে কলকাতার ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে দুই ইউনিট রক্ত আসে।
হেমাটোলজিস্ট প্রান্তর চক্রবর্তী বলছেন, ‘এমন ঘটনায় রোগীর রক্ত ব্যবহার করা ছাড়া আর উপায় থাকে না। যেখানে জটিল অস্ত্রোপচারে প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেখানেও রোগীর রক্ত সংগ্রহ করে তাকে দেয়া হয়।’ আমেনা বলেন, ‘চিকিৎসকদের জন্য নতুন জীবন পেলাম।’ আনন্দবাজার।
এসআইএস/এমকেএইচ