প্রেসিডেন্ট সিসির সাক্ষাৎকার প্রচারে মিসরের না, নেপথ্যে কী?
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সিবিএস টেলিভিশন নেটওয়ার্ককে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাত্তাহ আল-সিসি। তবে সে সাক্ষাৎকার প্রচার না করার জন্য সিবিএস টেলিভিশন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছে মিসর।
তবে সিবিএস কর্তৃপক্ষ বলছে, মিসরের নিষেধ সত্ত্বেও তারা সাক্ষাৎকারটি প্রচার করবে। আজ রোববার রাতে ‘দ্য সিক্সটি মিনিটস’ নামের অনুষ্ঠানটি প্রচারের কথা রয়েছে।
বিবিসি বাংলার অনলাইন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনুষ্ঠানটিতে দেয়া সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে প্রেসিডেন্ট সিসি নিশ্চিত করেন যে, মিসরীয় সেনাবাহিনী সিনাই পর্বতমালায় জিহাদি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কাজ করছে।
২০১৩ সালে মিসরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে চালানো সহিংস অভিযানকেও সমর্থন করেন সিসি। এ ছাড়া মিসরে কোনো রাজনৈতিক বন্দী থাকার বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি।
সিবিএস জানিয়েছে, সাক্ষাৎকারটি রেকর্ড করার কিছুক্ষণ পরই যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত মিসরীয় রাষ্ট্রদূতের পক্ষ থেকে তাদেরকে অনুরোধ করা হয় যেন সেটি প্রচার না করা হয়। তবে এ বিষয়ে তৎক্ষণাৎ কোনো মন্তব্য করেনি মিসর সরকার।
প্রেসিডেন্ট সিসি কী বলেছেন
প্রেসিডেন্ট সিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারের অনুলিপি প্রকাশ না করলেও সিবিএস বলেছে, ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট সিসির নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর যেই অভিযানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় আসা মোহাম্মদ মোরসির সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে, সেই অভিযানকে সমর্থন করেছেন সিসি।
২০১৩ সালের ১৪ অগাস্ট নিরাপত্তা রক্ষীদের দ্বারা কায়রোর রাবা আল-আদাউইয়া স্কয়ার আর নাহদা স্কয়ারে বিক্ষোভরত মানুষকে ছত্রভঙ্গ করার সময় ৯০০ এর বেশি মানুষ মারা যায়। দুইদিন পর রামসেস স্কয়ারে মারা যায় আরও ১২০ জন। সেসময় প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা সিসিকে সিবিএস জিজ্ঞাসা করে, বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ছোঁড়ার নির্দেশ তিনিই দিয়েছিলেন কিনা?
জবাবে তিনি বলেন, ‘৪০ দিনের বেশি সময় ধরে সেখানে হাজার হাজার সশস্ত্র বিক্ষোভকারী অবস্থান নিয়েছিল। আমরা তাদের ছত্রভঙ্গ করতে সব ধরনের শান্তিপূর্ণ পদ্ধতি ব্যবহারের চেষ্টা করেছি।’
এই ঘটনা সম্পর্কে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, সেখানে কিছু সশস্ত্র মানুষ ছিল আর বিক্ষোভ দমনের পদ্ধতি দেখে ধারণা করা যায়, ওই সহিংসতা পূর্ব-পরিকল্পিত ছিল এবং এটিকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।
২০১৩ সাল থেকে মিসরে অন্তত ৬০ হাজার মানুষকে রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে আটকে রাখা হয়েছে-এই প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট সিসি বলেন, ‘আমি জানি না তারা এই সংখ্যা কোথা থেকে পেল।’ এ কথা বলার পরপরই তিনি বলেন, ‘যখনই সংখ্যালঘু কোনো গোষ্ঠী তাদের চরমপন্থী মতবাদ সাধারণ মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে তখনই আমরা তাদের দমন করি।’
কেন সাক্ষাৎকারটি প্রচার করতে দিতে চায় না মিসর
সিবিএস কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘দ্য সিক্সটি মিনিটস’ নামের অনুষ্ঠানটির কর্মীদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত মিসরীয় রাষ্ট্রদূতের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয় যেন সেটি প্রচার না করা হয়। তবে সিবিএস রোববার রাতে অনুষ্ঠানটি প্রচার করবে বলে জানিয়েছে।
রাষ্ট্রদূতের নাম প্রকাশ না করলেও সিবিএস বলেছে, সরকারবিরোধী মতবাদে বিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে মিসরে যে ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়, ওই ধরনের খবর প্রচারিত হোক তা সিসির সরকার চায় না।
উত্তর সিনাই পর্বতমালায় জঙ্গি দমনের উদ্দেশ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করার খবরটিও মিসরে বিতর্ক তৈরি করতে পারে। ১৯৭৯ সালে শান্তিচুক্তি করার আগে চারটি যুদ্ধ হয় মিসর ও ইসরায়েলের মধ্যে।
এসআর/এমএস