ফুলবাড়ী কয়লা খনি নিয়ে লন্ডনে বিক্ষোভ
ফুলবাড়ী কয়লা খনি প্রকল্পের পেছনে থাকা লন্ডনের ব্রিটিশ মাইনিং কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভার বাইরে পরিবেশবাদীরা বিক্ষোভ করেছেন। শুক্রবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে বিক্ষোভ করার সময় পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে। খবর- বিবিসির।
সেন্ট্রাল লন্ডনের অক্সফোর্ড সার্কাসের কাছে ক্যাভেনডিশ স্কোয়ারের একটি ভবনে জিসিএম রিসোর্সেস পিএলসির এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শুরু হওয়ার আগে থেকেই সেখানে কয়েকটি পরিবেশবাদী গোষ্ঠীর সদস্যরা বিক্ষোভ শুরু করেন। সেখান থেকে ‘একস্টিংশন রেবেলিয়ন’ নামে একটি পরিবেশবাদী গ্রুপের তিনজনকে পুলিশ আটক করে।
বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন ভবনটির নিরাপত্তা গেটের সঙ্গে নিজেদের গ্লু বা আঠা দিয়ে আটকে শেয়ারহোল্ডারদের ভেতরে যেতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন। তবে গোলযোগ থামাতে সেখানে পুলিশও তৎপর ছিল।
বিক্ষোভে যোগ দেয়া সংগঠন লন্ডন মাইনিং নেটওয়ার্কের রিচার্ড সলি বলেন, ‘ফুলবাড়ী প্রকল্পের (বাংলাদেশ) প্রভাব নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা মনে করি এই প্রকল্প নিয়ে এগুনো উচিৎ নয়। কারণ, এর বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর দিক থেকে ব্যাপক বিরোধিতা রয়েছে। একটি উন্মুক্ত কয়লা খনি করা হলে সেটি তাদের জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে দেবে। কিন্তু প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে যেতে জিসিএম মনে হচ্ছে দৃঢ়সংকল্প। এখন তারা চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজেদের এই প্রকল্পটিকে বাঁচাতে চাইছে। তারা মনে করছে, চীন এতে যুক্ত হলে এই প্রকল্প হয়তো এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।’
তেল গ্যাস জাতীয় সম্পদ রক্ষা কমিটির যুক্তরাজ্য শাখার নেতা আখতার সোবহান মাশরুর বলেন, ‘জিসিএম এখনো বাংলাদেশে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি তারা চায়না কর্পোরেশনের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। তারা মিথ্যে কথা বলে নতুন করে শেয়ার বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আমরা এখানে এসেছি।’
লন্ডন মাইনিং নেটওয়ার্কের রিচার্ড সলি জানান, তিনি বহু বছর ধরে জিসিএম রিসোর্সের শেয়ার হোল্ডার। এর আগে শেয়ারহোল্ডারদের অনেক সভায় যোগ দিয়ে ফুলবাড়ী প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, কিন্তু এবার তাকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
২০০৬ সালে ফুলবাড়ীতে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলিতে হতাহতের দিন উপস্থিত ছিলেন রুমানা হাশেম। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুমানা হাশেম বলেন, ‘জিসিএমের প্রকল্পটি যদিও স্থগিত, তারপরও তারা মিথ্যে তথ্য দিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের দলে ভেড়াতে চাইছে। আমরা মনে করি, কোনো চুক্তি না থাকার পরও বাংলাদেশের সম্পদ দেখিয়ে অন্য একটি দেশে এভাবে বিনিয়োগ সংগ্রহ করা আইনবিরুদ্ধ।’
জিসিএম তাদের ওয়েবসাইটে দাবি করছে, এশিয়া এনার্জি নামে এটি প্রথম লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট মার্কেটে তালিকাভুক্ত হয় ২০০৩ সালে। তখন তারা সেখান থেকে ১৪ মিলিয়ন পাউন্ডের পুঁজি সংগ্রহ করে। তবে ২০০৫ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ফুলবাড়ী প্রকল্পের ব্যাপারে তারা যে প্রকল্প পেশ করেছিল, সেটির ভিত্তিতে তারা শেয়ার মার্কেট থেকে আরও আরও ৩৩ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিয়োগ সংগ্রহ করেছে।
উল্লেখ্য, জিসিএম লন্ডনে স্টক এক্সচেঞ্জের অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট মার্কেটে (এআইএম) তালিকাভুক্ত একটি মাইনিং কোম্পানি। তাদের দাবি, ফুলবাড়ীতে তারা ৫৭২ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লার মওজুদ শনাক্ত করেছে। এখন তারা এই প্রকল্পের উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এই কোম্পানি আগে এশিয়া এনার্জি নামে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করত।
আরএস/এমএস