কংগ্রেসের জয়জয়কারের নেপথ্যে রাহুল গান্ধীর গোপন হাতিয়ার
ভারতের পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন শেষ হয়েছে। এর মধ্যে তিন রাজ্যে দেশটির বিরোধী দল কংগ্রেস জয়ী হয়েছে। এখন মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী এবারের নির্বাচনে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য প্রার্থী বাছাই থেকে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনে একটি গোপন হাতিয়ার ব্যবহার করেছেন। যা নিয়ে ইতোমধ্যে বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে। কংগ্রেসের জয়জয়কারের নেপথ্যে রাহুলের এই গোপন হাতিয়ার বিশাল ভূমিকা পালন করেছে বলেও অনেকে মনে করেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, নির্বাচনী মৌসুমে এটাই মনে হয় কংগ্রেসের গোপন হাতিয়ার এবং সত্যিকারের গণতান্ত্রিক শক্তির চাবিকাঠি। বুধবার কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিশগরের প্রায় দুই লাখ কর্মীর কাছে একটি অডিও বার্তা পাঠান।
দেশটির বিরোধীদল কংগ্রেসের বানানো ‘শক্তি অ্যাপস’ নামের একটি অ্যাপসের মাধ্যমে এই অডিও বার্তা পাঠানো হয়। এতে দলের কর্মীদের কাছে, নিজ নিজ রাজ্যের একজন করে মুখ্যমন্ত্রীর নাম প্রস্তাবের আহ্বান জানানো হয়।
আরও পড়ুন : আম্বানি কন্যার বিয়ের ছবি
শক্তি অ্যাপসের নিবন্ধনকৃত ব্যবহারকারী রয়েছে ৪৫ লাখ। গত এক বছর ধরে কংগ্রেসের কর্মীদের অভ্যন্তরীণ মতামত প্রদানের ক্ষেত্রে একমাত্র ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে এই অ্যাপস ব্যবহৃত হচ্ছে। কংগ্রেসের শীর্ষ এক নেতা বলেছেন, ছত্তিশগড়ে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন করা হয়েছে এই অ্যাপসের মাধ্যমে পাওয়া কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে। কংগ্রেসের নেতারা এই অ্যাপসকে বলছেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে।
শীর্ষ নেতারা কী আসলেই তৃণমূলের কর্মীদের মতামত শোনেন; এমন এক প্রশ্নের জবাবে দলটির এক নেতা বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এই বিষয়টি বিবেচনা করি। তবে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনে দলের প্রধান রাহুল গান্ধীর সঙ্গে রাতে বসে সিদ্ধান্ত নেয়ার পুরনো সেই প্রক্রিয়া এখনো ফুরিয়ে যায়নি।
আরও পড়ুন : চিতাবাঘের হামলায় জঙ্গলে ধ্যানরত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর মৃত্যু
শক্তি অ্যাপসে পাঠানো অডিও বার্তায় রাহুল গান্ধী বলেন, আমি আপনাদের (দলীয় কর্মী) কাছে এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করছি। আপনার রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী কার হওয়া উচিত বলে মনে করেন? দয়া করে একজনের নাম জানাবেন।
অডিওতে তিনি আরো বলেন, এই প্রক্রিয়ায় আপনি কাকে বেছে নিলেন সেটা শুধু আমি জানব। দলের আর কারো কাছে সেই খবর পৌঁছাবে না। এরপর একটি আওয়াজ হয় ফোনে। এই আওয়াজ শেষ হলেই নিজের পছন্দের কথা জানান কর্মীরা।
দলের নেতারা বলেছেন, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে অ্যাপসে পাওয়া মতামত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তারা এই কংগ্রেসই প্রত্যাশা করছেন; যেখানে কর্মীদের কথা আগে শোনা হবে। ভারতের পাঁচ রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচনে তিনটিতে কংগ্রেস জয়ী হলেও এখন পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে কাউকে তুলে ধরেনি।
আরও পড়ুন : বিয়েতে ৪৫২ কোটি টাকার বাংলো পেলেন ঈশা আম্বানি
মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য প্রার্থী নির্বাচনে কর্মীদের মতামতের মূল্যায়নের স্বচ্ছ এই প্রক্রিয়ায় অনেকেই প্রশংসা করেছেন কংগ্রেসের। তবে কংগ্রেসের এই ব্যবস্থা নিয়ে অনেকে সমালোচনাও করছেন। তারা বলেছেন, এই অ্যাপসের মাধ্যমে সব কর্মী কিংবা সদস্যের মতামত নেয়া হয়নি। দলের জন্য একেবারে নিবেদিত হিসেবে পরিচিত মাত্র ১০ শতাংশ সদস্যের মতামত নেয়া হয়েছে।
দল থেকে প্রার্থী নির্বাচনের পর অ্যাপসে তিনজনের নাম পাঠানো হয়। পরে রাজ্য ভেদে সেখান থেকে একজনকে বেছে নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কংগ্রেসের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলেছেন, প্রত্যেকটি আসনে তারা প্রায় ৬ হাজারেরও বেশি কর্মীর কাছে এভাবে মতামত নিয়েছেন।
তারা বলেছেন, এটা শুধুমাত্র একটি ফ্যাক্টরই হয়ে উঠেনি। এর মাধ্যমে দলের বিতর্কিত ও বিবাদমান বিষয়গুলোও সমাধান করছে।
এসআইএস/এমকেএইচ