দলীয় প্রধানের পদ ছাড়লেও জামার্নির চ্যান্সেলর থাকছেন মেরকেল
জার্মানির ক্ষমতাসীন দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন-সিডিইউর প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন দেশটির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। তবে দলীয় প্রধানের পদ ছাড়লেও জামার্নির চ্যান্সেলর থাকছেন তিনি।
ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের নতুন প্রধান আনেগ্রেট ক্রাম্প-কারেনবাউয়ার ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমটিই জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি চািই অ্যাঙ্গেলা মেরকেল চ্যান্সেলর হিসেবে তার মেয়াদের বাকি তিন বছর শেষ করুন।
রোববার দলের সম্মেলন পরপরই এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি ফেডারেল সরকার রয়েছে। এই সরকার একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। দলের সম্মেলনেও সবার একই মনোভাব উঠে এসেছে, আমার ব্যক্তিগত ইচ্ছাও তাই।’
তিনি বলেন, ‘সরকারে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পূরণের ব্যবস্থা করে দেয়াও ক্ষমতাসীন দলের প্রধান হিসেবে আমার দায়িত্ব।’
আগামী বছর জার্মানিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উগ্র জাতীয়তাবাদী এবং শরণার্থী-বিরোধী হিসেবে পরিচিত অলটারনেটিভ ফর জার্মানি- এএফডি এই অঞ্চলে আগের নির্বাচনগুলিতে বেশ সাফল্য দেখিয়েছে। ফলে সিডিইউয়ের নতুন প্রধানের কাছে স্বভাবতই প্রশ্ন ছিল, ‘এই ভোটারদের ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা কী?’
উত্তরে কারেনবাউয়ার বলেন, ‘নিজেদের শক্তিতে। প্রথমত, অন্যসব দল কী করছে, তা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাবো না। আমরা জানি, রাজ্য নির্বাচনগুলোর প্রচারণা খুব কঠিন হবে। কিন্তু আমরা সিডিইউয়ের নিজস্ব শক্তি তৈরি করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় অনেক ইস্যু রয়েছে, অনেক অঞ্চলে আমাদের অবস্থান ভালো। যেসব রাজ্যে আমরা বিরোধী দলে রয়েছি, সেখানেও সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের যৌক্তিক সমালোচনা রয়েছে। এ ছাড়া সামাজিক বিভিন্ন ইস্যু ও পেনশনের মতো সাধারণ ইস্যুও রয়েছে। আমাদের নিজেদের সুসংগঠিত হতে হবে। তবে আগে যেমনটি বলেছি, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হবে নিজেদের শক্তিতে এমনভাবে মানুষের মন জয় করা, যাতে ভোট আমরাই পাই।’
স্থানীয় সময় শুক্রবার হামবুর্গে রান-অফ ভোটে কারেনবাউয়ার ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসকে হারান। এর আগে প্রথম রাউন্ড ভোটে ৯৯৯ ভোটের মধ্যে ৪৫০ ভোট পেয়েছিলেন কারেনবাউয়ার। ম্যার্ৎস পেয়েছিলেন ৩৯২ ভোট। আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান পেয়েছিলেন ১৫৭ ভোট। পরে কারেনবাউয়ার আর ম্যার্ৎসের মধ্যে রান-অফ হলে কারেনবাউয়ার পান ৫১৭ ভোট আর ম্যার্ৎস ৪৮৭ ভোট।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে মেরকেল তার উত্তরসূরি বিবেচনা করে কারেনবাউয়ারকে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে নিয়ে আসেন। মেরকেলের নীতির প্রতি কারেনবাউয়ারের সমর্থনের কারণে মাঝেমধ্যে তাঁকে ‘মিনি-মেরকেল' হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।
দলের অনেকেই চাচ্ছিলেন পপুলিজমের উত্থান ঠেকাতে সিডিইউ আরো রক্ষণশীল ভূমিকা নিক। কিন্তু দলীয় প্রধানের পদে ‘মেরকেলের শিষ্য' কারেনবাউয়ারের জয়ে সে পথ অনেকটাই রুদ্ধ হয়ে গেছে।
তবে তিনি বলছেন, ‘ব্যক্তিগত পর্যায়ে দলের সম্মেলন বিভক্ত হয়ে পড়েছিল সত্যি। কিন্তু ভোটাভোটির আগেই এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, প্রতিদ্বন্দ্বীদের চিন্তা-ভাবনায় অনেক মিলও রয়েছে।’
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস এবং ইয়েন্স স্পানের মতো আমিও মনে করি, রাষ্ট্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময়েই এটা উপলব্ধি করতে পেরেছি। আসছে বসন্তে আমরা অভিবাসন এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা শুরু করতে চাই।’
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি মনে করি জার্মানি (অন্য দেশের চেয়ে) একটি অন্যরকম পরিস্থিতিতে রয়েছে। আমাদের সোশাল মার্কেট ইকোনমি এবং সোশাল পার্টনারশিপের কারণে আমাদের এমন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, যেখানে সব সমস্যা ও বিরোধ আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলা যায়। আমি আশা করি, আমরা এই শান্তি বজায় রাখতে পারবো।’
কারেনবাউয়ার বলেন, ‘ফ্রান্স বা অন্যান্য দেশে দেখবেন, একমত হওয়া সত্ত্বেও যখন কোনো নিয়ম ভেঙে পড়ে, তখন বিরোধ অবশ্যম্ভাবী হলেও তা খুব দ্রুত সহিংসতায় রূপ নেয়।’
গত বছর সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে চরম ডানপন্থি অলটারনেটিভ ফর জার্মানির উত্থানে ব্যাপক সমর্থন হারায় সিডিইউ। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, সিডিইউয়ের পরের অবস্থানে থাকা গ্রিন পার্টির দিকেও ঝুঁকেছেন দলটির অনেক সমর্থক।
অক্টোবরে হেসে রাজ্যের ভোটে ১০ শতাংশেরও বেশি সমর্থন হারায় সিডিইউ। এরপরই অ্যাঙ্গেলা মেরকেল ঘোষণা দেন দলীয় প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর। আঠারো বছর তিনি তার দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আর পরপর চার মেয়াদে দেশটির চ্যান্সেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এমবিআর/এমকেএইচ