গরু নিয়ে উত্তাল ভারতীয় এক শহর, পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত ২
গো-হত্যার গুজবে ভারতের উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহর জেলা এখন উত্তাল। অবরোধ-বিক্ষোভ-প্রতিবাদ, পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর-গুলি, পুলিশের পাল্টা গুলি, থানায় ভাঙচুর, আগুন ধরানোসহ নানা অরাজকতা চলছে সেখানে।
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছে আরও দুই পুলিশ সদস্য।
পুলিশ জানায়, সোমবার বুলন্দশহরের স্যানা মহকুমা এলাকায় মাহু গ্রামের বাইরে জঙ্গল লাগোয়া একটি মাঠে প্রায় ২৫টি গরুর মাংস পড়ে থাকতে দেখা যায় বলে গুজব রটে। গো-হত্যার প্রতিবাদে সকালে ওই এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। ট্র্যাক্টর ও ট্রলি ভরে ওই মাংস নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ জানায় এলাকার প্রায় ৪শ মানুষ। খবর পেয়ে অবরোধ সরাতে পুলিশ সেখানে গেলে বিক্ষোভকারীদের ছোড়া পাথরে গুরুতর আহত হন ইনস্পেক্টর সুবোধ কুমার সিংহ। পরে হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মারা যান। এ ছাড়া পুলিশের গুলিতে সুমিত নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা নিহত হয়েছেন।
বুলন্দশহরের জেলাশাসক অনুজ কুমার ঝা জানান, বিক্ষোভকারীদের অবরোধ তুলতে অনুরোধ করায় কোনো কাজ হয়নি। বরং অবরোধকারীদের মধ্যে থেকে দুষ্কৃতীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে থাকে। এমনকি এলাকার চিংরাবটি পুলিশ ফাঁড়িতে চড়াও হয় তারা। থানায় ভাঙচুর চালানো ছাড়াও একটি পুলিশ ভ্যানে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। এমনকি পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিও চলে।
এ সময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি চালায় পুলিশ। গুলিতে স্থানীয় বাসিন্দা সুমিত গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীদের ছোড়া পাথরের আঘাতে গুরুতর আহত হন ইনস্পেক্টর সুবোধ কুমার সিংহ। আহত অবস্থায় মেরঠের এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে মারা যান তিনি। নিহত সুবোধ এক সময়ে গোরক্ষকদের হাতে দাদরির মহম্মদ আকলাখের খুনের ঘটনার তদন্তকারী অফিসার ছিলেন।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, বিক্ষোভকারীদের গুলিতে মারা যান সুবোধ। পুলিশ ভ্যানসহ বেশ কিছু গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনটির সদস্যরা। আশপাশের এলাকা থেকে আরও পুলিশ আনা হলেও রাত পর্যন্ত পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
জেলা প্রশাসকসহ পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) আনন্দ কুমার জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে এলাকা উত্তপ্ত হলেও এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালীন সুমিতের গায়ে কীভাবে গুলি এসে লাগল তা তদন্ত করে দেখা হবে। এ ঘটনায় বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে দেশটির বিরোধীদলগুলো উত্তরপ্রদেশের এই পরিস্থিতির নিন্দা জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, একের পর এক জায়গার নাম পাল্টে হিন্দুত্বের জিগির তুলছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। এতে ধর্মীয় উন্মাদনা বাড়ছে। পাশাপাশি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ক্রমশ ভেঙে পড়ছে। খুন-ধর্ষণ-ধর্মীয় সংঘাতের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এমবিআর/জেআইএম