ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

বন্ধুর জন্য নিজের কিডনি দান!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৯:৫৭ পিএম, ০১ ডিসেম্বর ২০১৮

বন্ধু তো জীবনের মতো। চারপাশের এতসব সম্পর্কের মধ্যে আমাদের বাস। কিন্তু বন্ধুর মতো কেউ হতে পারে না। যাকে অনায়াসেই মনের খুব গোপন কথাটা বলে দেয়া যায়, পাশে থাকা যায় বিপদে-আপদে। তাছাড়া বন্ধুতার চেয়ে স্বাধীন সম্পর্ক তো আর হয় না। বন্ধু মানেই একটা ডানামেলা গাঙচিলের দল। বন্ধু মানেই অযতনেও হয়ে ওঠা আপনজন। বন্ধুর জন্য সব করা যায়। যদি বন্ধুর প্রয়োজন হয়। ঠিক তেমনি সংকটাপন্ন বন্ধুর জীবন বাঁচাতে নিজের কিডনি দিয়ে অনন্য নজির তৈরি করলেন আরেক বন্ধু।

ঘটনাটি ভারতের কাশ্মিরের। প্রতিহিংসা আর জাতিবিদ্বেষে পঙ্গু জম্মু ও কাশ্মীরে বন্ধুত্বের এই মর্মস্পর্শী ঘটনা সবাইকে নাড়া দিয়েছে। মরণাপন্ন বন্ধুকে বাঁচাতে মানবতার নতুন গান যেন গাইলেন উধমপুর জেলার ২৩ বছরের শিখ তরুণী মনজ্যোৎ সিংহ কোহলি। প্রাণের বন্ধু ২২ বছরের সমরিন আখতারকে নিজের একটি কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

কিন্তু তরুণীর এই সিদ্ধান্তে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তার পরিবার। তাছাড়া কিডনি নিতে বিলম্ব করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাই কিডনি দেওয়ার ছাড়পত্র জোগাড় করতে শেষ পর্যন্ত আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ওই তরুণী।

মনজ্যোৎ সিংহ কোহলি বলেছেন, ‘সমরিন আমার চার বছরের পুরনো বন্ধু। ও খুব ভালো বন্ধু হলেও ভেতরে ভেতরে এতটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে, তা জানায়নি আমাকে। অন্য একজন বন্ধু আমাকে বিষয়টি জানায়। আমার খারাপ সময়ে পাশে ছিল সমরিন। এখন ওর খারাপ সময়। তাই পাশে দাঁড়ানোটা আমার কর্তব্য। ওর অসুস্থতার কথা শোনার পরই আমি সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।’

কঠিন সিদ্ধান্ত এই সহজে নিলেও বাকি কাজটা খুব একটা সহজ হচ্ছে না মনজ্যোতের জন্য। প্রথম বাধা এসেছে পরিবারের কাছ থেকে। কিন্তু তাতেও থামানো যায়নি ২৩ বছরের শিখ তরুণীকে। বন্ধুকে বাঁচানোর রাস্তায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। তার কথায়, ‘আমাকে কিডনি দিতে বাঁধা দিচ্ছে হাসপাতালের কর্তাব্যক্তিরা। কিডনি দেযার প্রাথমিক ছাড়পত্র পেলেও সেই প্রক্রিয়া কিছুতেই শুরু করছে না হাসপাতাল তারা। তাই আমি আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

মনজ্যোতের কাছ থেকে বন্ধুত্বের এই উপহার পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন সমরিনও। গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘মনজ্যোতকে ধন্যবাদ জানানোর কোনও ভাষা আমার জানা নেই। ওর কথা শুনে প্রথমে আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। তারপর ওই আমাকে নিয়ে যায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। ওর এই সিদ্ধান্তে আমার সবকিছু পাল্টে গেল। নতুন জীবন পেলাম।’

মনজ্যোত আপাতত চিন্তা, মেডিকেল ছাড়পত্র থাকলেও কেন কিডনি দান করা যাচ্ছে না। কারণ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে সমরিনের শারিরিক অবস্থা। অবশ্য বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন শের-ই-কাশ্মীর ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সের প্রধান ওমর শাহ।

তবে কেউ কেউ বলছেন, এক জন শিখ নারী তার মুসলিম বন্ধুকে কিডনি দিচ্ছেন, তা মেনে নিতে পারছেন না চিকিৎসকদের একাংশ। তাই পরিকল্পনা করে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করছেন তারা। কেউ আবার বলছেন, পরিবারের কাছ থেকে অনুমতি না পাওয়ার কারণেই কিডনি দিতে পারছেন না মনজ্যোত।

যদিও এতসব বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছেন না মনজ্যোত। তিনি বলছেন, ‘আমি জানি যে, আমার পরিবার হাসপাতালে নোটিশ পাঠিয়েছে। আমার পরিবার কোনোদিনই অনুমতি দিবে না। কিন্তু আমি এক জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। আমার পরিবারের অনুমতি নেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।’

এসএ/জেআইএম

আরও পড়ুন