ভারতের কলঙ্কিত ছয় রাজনৈতিক পরকীয়া
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পদচ্যুত মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় ও তার প্রেমিকা বৈশাখীকে নিয়ে কলকাতার রাজনীতি বেশ সরগরম। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত কাছের মানুষ ও আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত এই শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন কলকাতা নগরের প্রাক্তন মেয়র। তাছাড়া রাজ্য মন্ত্রিসভার দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও ছিল তারা কাঁধে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতার ধমকে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন।
প্রাক্তন মেয়র ও মন্ত্রী হয়তো এক মুহূর্তের জন্যে ভাবেননি ও পদত্যাগে বাধ্য হতে হবে তাকে। শোভনের এই সর্বস্ব ত্যাগ আদপে তার প্রেমিকা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য। শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলছে তার স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের। এসবের মধ্যে শোভন চট্টোপাধ্যায় বৈশাখী নামে ওই অধ্যাপিকার সঙ্গে বন্ধুত্বে জড়িয়ে পড়েন। এটা মেনে নিতে পারেননি শোভনের স্ত্রী। বিষয়টি চলে গেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতার কান পর্যন্ত। তিনি শোভনকে ডেকে উপদেশ দেন, ভর্ৎসনা করেন শেষে তাকে ধমক দিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করেন।
কলকাতার সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার বলছে, কাল‘বৈশাখী’তেই নাকি উড়ে গেছে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিবাহিত জীবন। তবে ভারতীয় রাজনীতিতে কিন্তু শোভনই প্রথম নন যিনি বিবাহবর্হিভূত সম্পর্কে জড়িয়ে সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন, হারিয়েছেন মন্ত্রিত্ব। এইতো কয়েকদিন আগে নারী সহকর্মীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর। তাছাড়া ভারতীয় রাজনীতির হোমরা চোমরা নেতা ও মন্ত্রিদের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের তালিকাটাও ছোট নয়। কাশ্মীরের সাবেক মূখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা থেকে উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এন ডি তিওয়ারীর মত অনেকেই রয়েছেন সেই তালিকাতে।
ওমর আব্দুল্লাহ ও নাদিয়া রাজদান
১৯৭৯ সালের ১০ মার্চ যুক্তরাজ্যের এসেক্স-এর রচফোর্ডে জন্মগ্রহণ করেন ওমর আবদুল্লাহ। তিনি ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের একাদশ ও কনিষ্ঠতম মুখ্যমন্ত্রী। তার দাদা শেখ আবদুল্লাহ ও বাবা ফারুক আবদুল্লাহও জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ১৪ বছর বয়সী পায়েল নাথকে বিয়ে করেন। কিন্তু ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদের কথা জানান তিনি। অনেকের মতে, এই বিবাহবিচ্ছেদের পেছনে ছিল টেলিভিশন সাংবাদিক নাদিয়া রাজদান। নাদিয়া ও ওমরের প্রেম নিয়েও ওই সময় কম জল ঘোলা হয়নি।
শশী থারুর ও মেহর তারার
তালিকার দ্বিতীয় নামটি কংগ্রেসের জনপ্রিয় ও বিতর্কিত সাংসদ শশী থারুর। শশী থারুর ও তার প্রয়াত স্ত্রী সুনন্দা পুষ্করের মধ্যেও একধরনের বিতর্কিত সম্পর্ক ছিল। যখন তারা দু’জন বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন তখন দুজনেরই একবার বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল। সুনন্দার সঙ্গে সম্পর্কে থাকাকালীন পাকিস্তানী সাংবাদিক মেহের দাবি করেন থারুরের সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু শশী থারুর ও সুনন্দা দুজনেই অস্বীকার করেন এই সম্পর্কের কথা। কিন্তু কিছুদিন পরই রহস্যজনকভাবে একটি হোটেলের কক্ষ থেকে সুনন্দা পুষ্করের মৃতদেহ পাওয়া যায়। আজও সেই হত্যা কিংবা মৃত্যুর কোন কূলকিনারা পাওয়া যায়নি।
দিগ্বিজয় সিং ও অমৃতা রাই
প্রবীণ কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংয়ের নাম অবধারিতভাবেই এই তালিকাতে চলে আসে। ২০১৩ সালে স্ত্রী আশা সিং ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর বিধানসভার টেলিভিশন উপস্থাপক অমৃতা রাইয়ের প্রেমে পড়েন দিগ্বিজয়। ২০১৫ সালে ৬৮ বছর বয়সে অমৃতার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন প্রবীণ এই কংগ্রেস নেতা।
নারায়ণ দত্ত তিওয়ারী ও উজ্জ্বলা শর্মা
এই তালিকাতে সবচেয়ে রঙিন ও বহুল আলোচিত নামটি হলো উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নারায়ণ দত্ত তিওয়ারীর। নারায়ণ দত্ত ও তার প্রেমিকার প্রেমের পরিনতি তো শেষ পর্যন্ত ডিএনএ টেস্ট অবধি গড়ায়। বিবাহিত অবস্থাতেই ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকারের মন্ত্রী উজ্জ্বলা শর্মার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। তাদের এক ছেলে সন্তানও হয়। প্রথম থেকেই এই সম্পর্কের কথা অস্বীকার করতেন নারায়ণ দত্ত।
পরে বিষয়টি মিমাংসার জন্য আদালত পর্যন্ত যায়। আদারতের রায়ে রায়ে ডিএন এ টেস্টের মাধ্যমে জানা যায় যে উজ্জ্বলার ছেলে রোহিত প্রকৃতপক্ষে নারায়ণ দত্ত তিওয়ারীর ঔরসজাত। টানা ৪০ বছর ধরে অস্বীকার করার নারায়ণ দত্ত তিওয়ারী অবশেষে ৮৮ বছর বয়সী উজ্জ্বলাকে বিয়ে করেন। অবশ্য তাদের ছেলে রোহিত শেখরকে নিজের পিতৃপরিচয় পেতে অনেক লড়াই করতে হয়েছিল।
অমর সিং ও বিপাশা বসু
ভারতের সমাজতান্ত্রিক দলের সাবেক নেতা অমর সিংও একবার প্রেম জনিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। বলিউডের নামকরা অভিনেত্রী বিপাশা বসুর সঙ্গে তার প্রেমের গুঞ্জণ ওঠে। সে আলোচনা ভারতের রাজনীতিসহ বলিউড পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে। বিপত্তি ঘটে বিপাশা বসুর সঙ্গে তার টেলিফোনে কথোপকথনের রেকর্ডিং ছড়িয়ে পড়লে। সেসময় পরিস্থিতি সামাল দিতে বহুত কাঠখর পোড়াতে হয়েছিল তাকে।
ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ও নম্রতা দত্ত
তালিকার একেবারে শেষের নাম ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। ভারতের কমিউনিস্ট পাটি- মাওবাদির (সিপিএম) এক সময়ের জনপ্রিয় যুবনেতা ঋতব্রত বিধানসভার সাংসদও ছিলেন। শোভন বন্দ্যোপাধ্যায়কে হয়ত মুখ্যমন্ত্রী ও দলের চাপে পদত্যাগ করতে হয়েছে মেয়র এবং মন্ত্রীত্ব থেকে। কিন্তু ঋতব্রতর উশৃঙ্খল জীবনযাপন ও নারীসঙ্গের জন্য দল থেকে তাকে আজীবনের জন্য বহিস্কার করে সিপিএম। বিয়ের পরও নম্রতা দত্ত নামে এক নারীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে ঋতব্রত। যার কারণে শুধু রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নয় পাশাপাশি বিবাহিত জীবনও নষ্ট হয় সাবেক তুখোর এই ছাত্রনেতার।
এসএ/এমএস