‘দ্য বয় অ্যান্ড দ্য সি’
প্রখ্যাত মার্কিন লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ‘দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’ উপন্যাসের কথা মনে আছে? লেখক তার এই ফিকশানধর্মী রচনায় সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া এক বৃদ্ধ জেলের সংগ্রামের কাহিনী তুলে ধরেছেন। যেখানে ছোট্ট একটি জেলে নৌকা ভাসিয়ে একাকী মাছ ধরে বেড়ায় বুড়ো সান্তিয়াগো। ৮৪ দিন ধরে ঘুরছে সে সমুদ্রের বুকে, কিন্তু কোনো মাছ পায়নি। তার সঙ্গে যে ছোট ছেলেটা কাজ করতো। তার বাবা মা মনে করে বুড়োটা ‘অপয়া’। তাই তাদের ছেলেকে অন্য নৌকায় পাঠিয়ে দেয়। প্রতিদিন বুড়ো লোকটিকে সমুদ্র থেকে খালি নৌকা নিয়ে ফিরতে হতো। দিনের পর দিন তিনি নৌকা নিয়ে আরও গভীর সমুদ্রে যাতেন ভলো কিছুর আসায়। শেষ পর্যন্ত তিনি বিশাল এক মারলিন মাছ ধরতে সক্ষম হন। তবে আবারও অন্য ধরনের প্রতিকূলতা নেমে আসে তার জীবনে। সেটা অন্য প্রসঙ্গ।
বাস্তবে বুড়ো সান্তিয়াগোর মতই সগরে ৪৯ দিন করে সংগ্রাম করে টিকে আছে এক কিশোর। সতেরো-আঠারো বছরের এই কিশোরও সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল। এ সময় তার প্রতি মুহূর্ত মনে হয়েছে, এই বুঝি জীবনের অবসান ঘটে গেল। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে উদ্ধার করা হয়েছে।
ইন্দোনেশিয় এই কিশোরের নাম আলদি। কিন্তু কীভাবে সাগরে এতদিন টিকে ছিল সে?
আলদির মতে, ‘আমি ভাবিনি যে, কখনও আর ফিরে আসতে পারবো। কিংবা বাবা মাকে আবার দেখতে পাবো। এমন অনেক মুহূর্ত এসেছে এই ৪৯ দিনে, যখন মনে হয়েছে এই বুঝি জীবনের অবসান ঘটে গেল। কখনও কখনও মাথায় আত্মহত্যার চিন্তাও এসেছে।’
কাঠের ভেলার ওপর বানানো মাছ ধরার একটি ফাঁদ স্থানীয়ভাবে যার নাম রমপং এবং সেখানেই কাজ করতো এই কিশোর। এই ভেলায় একজন বার্জের সাথে সংযোগ রশিটি ধরে রাখতো। আরও তিনটি রশি দিয়ে ভেলাটিকে নির্দিষ্ট জায়গায় আটকে রাখা হতো।
আলদি যে ভেলাটিতে ছিল তার অবস্থান ছিল ইন্দোনেশিয়ার একটি দ্বীপের উপকূল থেকে ১২৫ কিলোমিটার দূরে। সে এটি চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিল তার মূল অবস্থান থেকে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরে।
আলদি জানায়, বেঁচে থাকার জন্য আমি মাছ ধরেছি। কাঁচা কিংবা সেদ্ধ যেভাবে পারি খেয়েছি। সবই খেয়েছি সাগরে ভেসে থাকার সময়। বাবা-মা, ভাই-বোনের কথা ভাবতাম। এরপর শুধু কাঁদতাম। প্রার্থনা করতাম, বাইবেল পড়তাম। ওই ভেলায় সাথে একটা বাইবেল আমি রাখতাম।
আলদিকে উদ্ধার করে পানামার পতাকাবাহী একটি জাহাজ। যদিও আরও অনেকগুলো নৌকা তাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেছে।
এই কিশোরের দাবি, ‘আমি তাদের সাহায্য চাওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি।’
আলদি বলেন, উদ্ধারের পর বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলি। তখন কিছুই বলতে পারিনি আমি। শুধু কেদেঁছি। উদ্ধার হওয়ার পর আমি দারুণ খুশি। আমি আর সাগরে কাজ করতে চাই না।
যদিও সাগরে প্রতিকূল অবস্থা থেকে উদ্ধারের ঘটনা এবারই তার প্রথম নয়। কাজের জন্যই এর আগেও অন্তত তিন দফায় সাগরে এভাবে আটকা পড়েছিল সে।
এমবিআর/পিআর