সৌদি এত অস্ত্র পাচ্ছে কোথায়
২০১৫ সালে ইয়েমেনে বিমান হামলার পর থেকে কয়েকটি দেশ সৌদির কাছে অস্ত্র বিক্রি করা থেকে বিরত রয়েছে। ইয়েমেনের সঙ্গে সৌদির এ যুদ্ধকে ‘বিশ্বে মানবসৃষ্ট সবচেয়ে নিকৃষ্টতম মানবিক দুর্যোগ’ বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ।
গত মাসে তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যাকে কেন্দ্র করে ইউরোপের কয়েকটি দেশ সৌদির কাছে অস্ত্র রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তবে সৌদির পাশে থাকতে সৌদিতে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ড সৌদির সঙ্গে নতুন অস্ত্র চুক্তি স্থগিত করেছে। ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, খাশোগি হত্যা ও ইয়েমন সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে তারা সৌদির সঙ্গে নতুন অস্ত্র চুক্তি স্থগিত করেছে। পাশাপাশি সৌদির মিত্র বলে পরিচিত সংযুক্ত আরব আমিরাতেও অস্ত্র চুক্তি স্থগিত করেছে দেশটি। তবে ফিনিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী অস্ত্র চুক্তি স্থগিতের কারণ হিসেবে শুধু ইয়েমেন ইস্যুকে উল্লেখ করেছে। জার্মানি সৌদিতে সব ধরনের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করছে- এমন ঘোষণার দুইদিন পরেই দেশটি থেকে এই ঘোষণা এলো।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদিও ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ড সৌদির মূল অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ নয়; জার্মান সৌদির অন্যতম অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। ইতোমধ্যে দেশটি সৌদির সঙ্গে নতুন অস্ত্র চুক্তি বাতিল করেছে।
সোমবার দেশটি বলেছে, এই নিষেধাজ্ঞা শুধু নতুন অস্ত্র চুক্তির ক্ষেত্রে নয়, বিদ্যমান অস্ত্র সরবরাহের আদেশও অন্তর্ভুক্ত হবে।
কাদের কাছ থেকে অস্ত্র পাচ্ছে সৌদি
বলা হয়ে থাকে, অস্ত্র চুক্তি সাধারণত গোপনে হয়। কখনও সেটা প্রকাশ্যে হলেও খুব কমই তা প্রকাশ পায়। প্রধান প্রধান অস্ত্র চুক্তি বিষয়ে একটি জরিপ চালায় স্টকহোমভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট (এসআইপিআরআই)।
গত এক দশকে সৌদি আরবে আমদানি হওয়া অস্ত্র চুক্তির একটি ডাটার সূত্র ধরে সংস্থাটি বলছে, সৌদিকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপরই রয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন ও জার্মান।
সংগঠনটি আরও বলছে, যদিও একাধিক দেশ এখনও সৌদিকে অস্ত্র সরবরাহ করে যাচ্ছে, তারপর তারা অস্ত্র সরবরাহের পরিমাণ আগের তুলনায় নাটকীয়ভাবে কমিয়ে দিয়েছে। উদাহরণ দিতে গিয়ে এসআইপিআরআই বলছে, ২০১৬ সালে সৌদিতে ৮৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অস্ত্র সরবরাহ করে। কিন্তু গত বছর দেশটি মাত্র ৪৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অস্ত্র সরবরাহ করে।
ফ্রান্স ২০১৫ সালে ১৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অস্ত্র সৌদিতে সরবরাহ করে। তা কমে গিয়ে ২০১৬ সালে ৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ও গত বছর আরও কমে ২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়।
একইভাবে একই সময়ে স্পেন আগের তুলনায় কম অস্ত্র সরবরাহ করছে। তবে চলতি বছর দেশটির সরকার নিশ্চিত করেছে যে, যদিও তারা আগে বলেছিল সৌদির সঙ্গে অস্ত্র চুক্তি বাতিল করা হবে, তারপরও তারা দেশটিতে অস্ত্র সরবরাহ করতে চায়।
তবে মজার ব্যাপার হলো এসব দেশ আগের তুলনায় অস্ত্র সরবরাহ কমিয়ে দিলেও তার ঠিক উল্টোটা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে সৌদিতে ৩৮ শতাংশ অস্ত্র সরবরাহ বেড়েছে। আর এর মূল সরবরাহকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র উল্লেখিত সময়ে (২০১৫, ২০১৬) অস্ত্র সরবরাহ করে ১.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ। পরে এটা বেড়ে দাঁড়ায় ৩.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ। একইভাবে জার্মান আগের তুলনায় প্রায় সাড়ে সাতগুণ অস্ত্র সরবরাহ বাড়িয়েছে। দেশটি ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ১০৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অস্ত্র সরবরাহ বাড়িয়েছে। তবে সম্প্রতি দেশটি বলছে, তারা এ পরিমাণটা কমিয়ে দেবে।
তবে সৌদিতে মেজর অস্ত্র সরবরাহে কোনো দেশই যুক্তরাষ্ট্রের ধারেকাছেও যেতে পারেনি। গত পাঁচ বছরের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র একাই সৌদিতে ৬১ শতাংশ মেজর অস্ত্র সরবরাহ করেছে, যেখানে যুক্তরাজ্য শেয়ারসহ করেছে ২৩ শতাংশ (দ্বিতীয়)। অপরদিকে ফ্রান্স ৪ শতাংশ মেজর অস্ত্র সরবরাহ করে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, সৌদির সঙ্গে মেজর অস্ত্র সরবরাহের চুক্তি বাতিল করলে ‘বোকামির’ পরিচয় দেখা হবে। আমরা যদি সত্যিই বন্ধ করে দিই তাহলে সবচেয়ে ‘লাভবান’ হবে রাশিয়া ও চীন।
এসআইপিআরআই ডাটা বিশ্লেষণ করে দেখেছে, চীন খুব সামান্য পরিমাণে সৌদিকে মেজর অস্ত্র সরবরাহ করে থাকে। তারা পরিমাণটা বাড়ায়নি, বরং আগের অবস্থায় আছে। একইভাবে রাশিয়াও স্বল্প পরিসরে অস্ত্র সরবরাহ করলেও সংস্থাটির ডাটাবেজে তা স্থান পায়নি।
এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন এসআইপিআরআই সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ গবেষক পিটার ওয়েজম্যান। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া গত ১০-১৫ বছর ধরে সৌদির অস্ত্র বাজার ধরার চেষ্টা করেছে। তবে তাতে সফল হয়নি দেশটি। সৌদি রাশিয়ার কাছ থেকে রাইফলসহ আরও কয়েক ধরনের অস্ত্র কিনলেও তার পরিমাণ খুবই কম।’
ওয়েজম্যান আরও বলেন, ‘রাশিয়া এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলেও সৌদির অস্ত্র বাজার কিছুটা ধরতে সক্ষম হয়েছে চীন। বিশেষ করে আর্মড ড্রোনের ক্ষেত্রে।’
এসআর/এমএস