দক্ষিণ এশিয়ার সফল নারী রাজনীতিবিদরা
উন্নত দেশগুলোর তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ায় নারীর ক্ষমতায়নের হার কম। তবে এ অঞ্চল থেকেও উঠে এসেছেন অনেক নারী রাজনীতিবিদ। তাদের কারো কারো সাফল্য খুব উল্লেখযোগ্য।
শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ
বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কন্যা। ২০১৬ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের করা বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাশালী নারী তালিকায় ছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হাসিনা। সবচেয়ে বেশি সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকার রেকর্ডও তার দখলে।
ইন্দিরা গান্ধী, ভারত
স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর কন্যা ইন্দিরা গান্ধী ১৯৬৬ সালে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া ইন্দিরা ভারতের ‘লৌহমানবী’ নামে খ্যাত। ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা ও পরে ১৯৮৪-তে ‘অপারেশন ব্লু স্টার’-এর মতো স্পর্শকাতর বিষয়ের জন্য সমালোচিত হলেও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী নারী হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাকে।
খালেদা জিয়া, বাংলাদেশ
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে প্রথম নারী হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন। প্রথমবারে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ও পরে আবার ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা এখন কারাগারে।
বেনজির ভুট্টো, পাকিস্তান
১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ ও ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া বেনজির ভুট্টো কোনো মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী এই নেত্রী ২০০৭ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার দল ‘পাকিস্তান পিপলস পার্টি’র নেতৃত্ব দেন। রাজনীতির প্রথম পাঠ তিনি তার পিতা, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর কাছে পেয়েছিলেন।
শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে, শ্রীলঙ্কা
বিশ্বের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন শ্রীলঙ্কার শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে। তিন দফায় (১৯৬০-৬৫, ১৯৭০-৭৭, ১৯৯৪-২০০০) দ্বীপ দেশটির দায়িত্বে ছিলেন তিনি। শ্রীলঙ্কার সরকারী ভাষাকে ইংরেজি থেকে বদলে সিনহালা করার ফলে তিনি দেশের তামিল সংখ্যালঘুদের রোষের মুখে পড়েন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ভারত
জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ রেল, কয়লা, যুব, নারী ও শিশু বিষয়ক একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন পশ্চিমবঙ্গে প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী।
সোনিয়া গান্ধী, ভারত
প্রধানমন্ত্রী না হলেও ভারতের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক একটি নাম সোনিয়া গান্ধী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বামী রাজীব গান্ধী প্রয়াত হবার পর কংগ্রেসের দায়িত্বে আসেন তার ইতালীয় বংশোদ্ভূত স্ত্রী সোনিয়া। ২০০৪ সালে সোনিয়ার নেতৃত্বেই কংগ্রেস দেশের ক্ষমতায় এলেও প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেন মনমোহন সিং-এর হাতে। প্রখর রাজনৈতিক বুদ্ধির কারণে তার নাম স্থান পেয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের তালিকায়।
জয়ললিতা, ভারত
পাঁচ দফায় দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে ভারতের তামিল নাড়ু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জয়ললিতা। জনসাধারণের কাছে ‘আম্মা’ বা মা নামে খ্যাত এই নেত্রী এককালে দক্ষিণী চলচ্চিত্রের নামকরা অভিনেত্রীও ছিলেন। গ্ল্যামার জগত থেকে রাজনীতিতে আসা এই নেত্রীর বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও তার প্রভাব জয়ললিতার রাজনৈতিক জয়যাত্রায় পড়েনি কখনো।
মায়াবতী, ভারত
উত্তর প্রদেশ-কেন্দ্রিক বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) মুখ্যত দলিত ও পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের পার্টি। ২০০১ সালে দলের ভার নেন মায়াবতী।বিভিন্ন দলের সমর্থনে চারবার উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হন মায়াবতী। রাজ্যের প্রথম দলিত মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর নাম ভারতের সর্বোচ্চ করদাতাদের তালিকায় বেশ কয়েকবার উঠে এসেছে।
চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা, শ্রীলঙ্কা
১৯৯৪ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি ছিলেন চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা। এ ছাড়া নির্বাচন চলাকালীন ১৯৯৪ সালে আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও তিনিই পালন করেন। দেশের প্রথম নারী রাষ্ট্রপতি ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মান ‘লিজোঁ অফ অনার’ পান ২০১৮ সালে। এই সম্মান পাওয়া প্রথম শ্রীলঙ্কার নাগরিক তিনিই।
হিনা রব্বানী খার, পাকিস্তান
২০১১- থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন হিনা রব্বানী খার। ৩৩ বছর বয়সী হিনা এই দায়িত্ব পেয়ে ইতিহাস গড়েন। পাকিস্তানে তিনিই প্রথম নারী হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী হয়ে দেশের সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হবারও রেকর্ড গড়েন। দেশে ও বিদেশে যুবপ্রজন্মের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বিষয়ে বক্তব্য রাখা এই নেত্রী বর্তমানে পাকিস্তানের সংসদ সদস্য।
সূত্র: ডিডাব্লিউ/এমআরএম/এমএস