আমার সম্পর্কে গদগদ হয়ে কেউ লিখলো না কেন : তসলিমা নাসরিন
বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে #মিটু আন্দোলন। সম্প্রতি বাংলা নাটকের শেকড়সন্ধানী নাট্যকার সেলিম আল দীন বিরুদ্ধেও ‘যৌন নিপীড়নের’ অভিযোগ উঠেছে। প্রয়াত এ নাট্যকারের বিরুদ্ধে ‘যৌন নিপীড়নের’ অভিযোগ তুলে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন মুশফিকা লাইজু। তিনি ৩১ বছর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ছাত্রী থাকাকালীন এ নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন।
এদিকে প্রয়াত নাট্যকার সেলিম আল দীনের বিরুদ্ধে #মিটু আন্দোলন উঠার পর তার পক্ষ নিয়েও অনেকে কথা বলছেন। এ আন্দোলনে মধ্যে এবার যুক্ত হলেন বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট দিয়েছেন তিনি।
তসলিমা নাসরিন তার পোস্টে লিখেন-
বাংলাদেশের এক লেখক নাট্যকার সেলিম আল দীনের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধা ভরে লিখেছেনঃ
“সেলিম আল দীন প্রেমিক পুরুষ ছিলেন। জীবনে একাধিক প্রেম করেছেন। সেসব প্রেমের কথা তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন। তাঁর প্রেমিকাদের সম্পর্কে জানতে আপনারা পড়ে নিতে পারেন তাঁর ‘ভাঙা প্রেম অশেষ বিশেষ’ বইটি। ঢাকার জাগৃতি প্রকাশনী থেকে বইটি প্রকাশিত হয়। ঢাকার দীপনপুরে বইটি পাওয়া যায়। এছাড়াও তাঁর জীবনের নানা কথা তিনি লিখেছেন তাঁর দিনলিপিতে। নারীদের প্রতি তিনি কতটা শ্রদ্ধাশীল ছিলেন, ছাত্রীদের তিনি কতটা স্নেহ করতেন, পিতার মতো কীভাবে আগলে রাখতেন, তা তাঁর ছাত্র-ছাত্রী, ভক্ত-শিষ্য সবার জানা।”
“ঋষিতুল এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে, বাংলা নাটকের এই প্রাণপুরুষের বিরুদ্ধে মুশফিকা লাইজু যে অভিযোগ তুলেছেন, তা সম্পূর্ণ কাল্পনিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছি। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আশা করি মুশফিকা লাউজু সাক্ষ-প্রমাণহীন তাঁর এই কাল্পনিক অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেবেন।”
বুঝি না আমার সম্পর্কে লিখতে গিয়ে কেউ আজ পর্যন্ত শ্রদ্ধায় গদগদ হয়ে এ রকম ভাবে লিখলো না কেন। যেমনঃ
“তসলিমা নাসরিন প্রেমিকা নারী ছিলেন। জীবনে একাধিক প্রেম করেছেন। সেসব প্রেমের কথা তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন। তাঁর প্রেমিকদের সম্পর্কে জানতে আপনারা পড়ে নিতে পারেন তাঁর ‘উতল হাওয়া' আর 'দ্বিখন্ডিত (ক)' বইদুটো। কলকাতার পিবিএস থেকে বইদুটো প্রকাশিত হয়। নীলক্ষেতের ফুটপাথে বইদুটোর পাইরেট এডিশন পাওয়া যায়। এছাড়াও তাঁর জীবনের নানা কথা তিনি লিখেছেন তাঁর আত্মজীবনীগুলোয়। পুরুষদের প্রতি তিনি কতটা শ্রদ্ধাশীল ছিলেন, জুনিয়রদের তিনি কতটা স্নেহ করতেন, মায়ের মতো কীভাবে আগলে রাখতেন, তা তাঁর পাঠক পাঠিকা, ভক্ত-শিষ্য সবার জানা।”
“দেবিতূল্য এই লেখিকার বিরুদ্ধে, বাংলা সাহিত্যের এই প্রাণনারীর বিরুদ্ধে সমাজের পুরুষগোষ্ঠী যে অভিযোগ তোলেন, তা সম্পূর্ণ কাল্পনিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছি। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আশা করি পুরুষগোষ্ঠী সাক্ষ-প্রমাণহীন তাঁদের কাল্পনিক অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেবেন।”
আমি কাউকে এ জীবনে যৌন হেনস্থা করিনি। তারপরও আমার পক্ষে চিৎকার করা দূরে থাক, মিনমিন করেও খুব বেশি কাউকে বলতে শুনিনা। বরং যত অশ্রাব্য গালি দুনিয়াতে আছে, সবই আমার ওপর বর্ষিত হয়।
পুরুষ এবং নারীকে ভিন্ন চোখে আর কতকাল দেখবে মানুষ?
আরএস/এমএস