ওভাল অফিসের বাথরুমেই ক্লিনটনের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক : লিউনস্কি
মনিকা লিওনস্কি বিগত দুই দশকে অসংখ্য সাক্ষাৎকারের সম্মুখিন হয়েছেন। তবে সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে মুখ খুলেছেন তিনি। প্রণয়ের প্রস্তাব থেকে শারীরিক সম্পর্ক-সবই বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন হোয়াইট হাউজের সাবেক এই কর্মী। এমনকি ক্লিনটন কীভাবে তার নীল রঙের ফ্রক নোংরা করে দিয়েছিলেন তা-ও ফাঁস করে দিয়েছেন।
‘দ্য ক্লিনটন অ্যাফেয়ার্স’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে মনিকা লিওনস্কির এ সাক্ষাৎকার প্রচার করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এ অ্যান্ড ই টেলিভিশন চ্যানেল।
১৯৯৮ সালে ওভাল অফিসে ক্লিনটন-লিউনস্কি যৌন সম্পর্কের খবর বিশ্বজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলে। ওই সম্পর্ক নিয়ে মিথ্যা বলায় প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনকে সে সময় অভিসংশনের হুমকিতেও পড়তে হয়। মনিকা লিউনস্কি তখন ২২ বছর বয়সী একজন ইন্টার্ন। আর প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের বয়স তখন ৪৯।
তাদের সেই প্রেম ছিল ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমের সবচেয়ে বড় খবর। প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন শুরুতে অস্বীকার করলেও এক পর্যায়ে স্বীকার করে নেন যে হোয়াইট হাউজের একজন সাবেক ইন্টার্নের সঙ্গে তার ‘অন্তরঙ্গ সম্পর্ক’ হয়েছিল, যা উচিৎ হয়নি।
সাক্ষাৎকারের একটি পর্বের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিউনস্কি সাক্ষাৎকারে বলেন, তার নীল রঙের ফ্রকে একটি দাগ লেগে গিয়েছিল এবং তিনি বুঝতেই পারেননি এটা কীভাবে লাগল।
বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন নিয়ে ‘স্টার রিপোর্ট’ নামে একটি বই বের করেন কেনেথ স্টার। বইটি প্রকাশ হয় ১৯৯৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। ওই বইতে লেখা আছে, লিউনস্কি পরে মনে করেছিলেন স্পিনাকের (এক ধরনের শাক) রস হয়তো কোনোভাবে তার পোশাকে লেগে গেছে।
তবে সম্প্রতি এ অ্যান্ড ই চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে লিউনস্কি বলেন, আসলে ওই দাগটি লেগেছিল ওভাল অফিসের (যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়) বাথরুমে বিল ক্লিনটনের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের পর। অবশ্য শারীরিক সম্পর্কের আগে ক্লিনটন একটি হ্যাটপিন ও ওয়াল্ট হুয়িটম্যানের ‘লিভস অব গ্রাস’ বইয়ের একটি কপি তার হাতে তুলে দেন।
মনিকা লিওনস্কি বাম থেকে দ্বিতীয়
‘ফ্রকে দাগ নিয়েই আমি ওই রাতে ডিনারে যাই। তবে এ সময় আমাকে কেউ বলেনি যে, তোমার এখনই বাথরুমে যাওয়ার দরকার। কারণ, তোমার পোশাকে ময়লা লেগে আছে’-যোগ করেন লিউনস্কি।
লিউনস্কির দাবি, উপহার দেয়ার কথা বলে তাকে হোয়াইট হাউসে ডেকে আনা হয়েছিল। পরে ক্লিনটন ও তার সহকারীর (সেক্রেটারি) সঙ্গে তিনি ওভাল অফিসে প্রবেশ করেন। তবে ওভাল অফিসে প্রবেশের কিছুক্ষণ পরই ওই সহকারী ডাইনিং রুম থেকে দ্রুত সটকে পড়েন। তিনি বলেন, ‘সহকারীর যখন প্রয়োজন হতো ঠিক তখনই তিনি ওই রুমটিতে ঢুকতেন। যাতে করে তারা একান্তে থাকতে পারেন। এভাবে সেখানে দুই বছর চলে গেছে।’
ক্লিনটনের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ওভাল অফিসে ঢোকার পর তিনি আমার হাতে একটি হ্যাটপিন উপহার হিসেবে দিয়ে বলেন, ‘হ্যাট পরিহিত অবস্থায় তোমাকে সবসময়ই সুন্দর দেখায়।’ অথবা এ রকম বলেছিলেন, ‘তুমি ও তোমার হ্যাট-দুটোই সুন্দর।’ এরপর তিনি আমাকে ওয়াল্ট হুয়িটম্যানের ‘লিভস অব গ্রাস’’ বইয়ের একটি কপি দেন।
‘তারপর আমরা বাথরুমে চলে গেলাম। সেখানে আমরা দুজনই খুব অন্তরঙ্গ হলাম। তারপর তিনি যা করলেন আমিও তা-ই করলাম। এভাবে কিছুক্ষণ চলতে থাকল। একপর্যায়ে আমি উঠে দাঁড়ালাম এবং তাকে বললাম, আমি পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে চাই।’
‘অবশেষে তিনি বললেন, ঠিক আছে। এরপর আমরা অন্তরঙ্গ অবস্থা থেকে ফিরে আসলাম। অবশেষে আমি তাকে হাগ (কাঁধে কাঁধ মেলানো) করলাম এবং তিনিও আমাকে হাগ করলেন-’যোগ করেন লিউনস্কি।
এর আগে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই কেলেঙ্কারির পর পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে ভুগতে হয়েছিল বলে ওই নিবন্ধে জানিয়েছেন লিউনস্কি। যেভাবে ওই প্রেমের খবর সংবাদপত্র আর আদালতের শুনানিতে আসছিল, তাতে তাকে রীতিমত একঘরে হয়ে যেতে হয়েছিল।
হোয়াইট হাউজের সাবেক কর্মী মনিকা লিউনস্কি অবশ্য বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন যেভাবে তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন, তা ছিল ‘ক্ষমতার বড় ধরনের অপব্যবহার’।
যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে নারীদের ‘মি টু মুভমেন্টের’ প্রেক্ষাপটে ভ্যানিটি ফেয়ারে লেখা এক নিবন্ধে লিউনস্কি লিখেছেন, ‘তিনি ছিলেন আমার বস। তখন তিনিই ছিলেন এই পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি। আমার চেয়ে তিনি ২৭ বছরের বড়, জীবন সম্পর্কে যার অভিজ্ঞতা ছিল আমারে চেয়ে অনেক বেশি।’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির আরেক প্রতিবেদেন বলা হয়েছে, প্রেমের খবর প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর ঝঞ্ঝামুখর কয়েকটা বছর পেরিয়ে নিজেকে অনেকখানি অন্তরালে রেখেছিলেন মনিকা লিউনস্কি। ২০১৪ সালে আবার তিনি সামনে আসেন এবং ওই সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন।
সূত্র : ডেইলি মেইল
এসআর/এমএস