যুক্তরাষ্ট্রও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিরোধী
আগামীকাল থেকেই শুরু হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি নিয়েছে মিয়ানমার। দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুই হাজার রোহিঙ্গা মুসলিমের প্রথম দলটির প্রত্যাবাসনে তারা প্রস্তুতি নিয়েছে।
গত মাসে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে হওয়া একটি চুক্তির আওতায় ৫ হাজার রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন শুরু হবে।আগামীকাল থেকে রোহিঙ্গাদের প্রথম গ্রুপটিকে ফেরত নেয়া শুরু করবে মিয়ানমার।
তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এবার এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্রও। কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন মানবাধিকার কর্মকর্তারা একে অপরিপক্ক পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন।
রোববার এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী এক ঘোষণায় জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে। দু’সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ১৫০ জন রোহিঙ্গাকে দেশে ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার।
গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছিল মিয়ানমার। কিন্তু এ প্রক্রিয়া শুরু হতেই এক বছরের মতো সময় লেগে গেছে।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, রাখাইনে সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় বৌদ্ধরা তাদের বাড়ি-ঘর আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে, নির্বিচারে গুলি করে বহু মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছে।
জাতিসংঘ ওই অঞ্চলে তদন্তের পর জানিয়েছে, সেখানে গণহত্যা এবং জাতিগত নিধন চালিয়েছে সেনাবাহিনী। কিন্তু মিয়ানমারের তরফ থেকে এমন অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
মিয়ানমার ও বাংলাদেশের যৌথ প্রচেষ্টায় ৮ হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার মধ্যে ২ হাজার ২৬০ জনের প্রথম দলটিকে প্রত্যাবাসনের জন্য বাছাই করা হয়েছে।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কশিশনার মিশেল ব্যাচলেট উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ করা। রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়াটা নিরাপদ নয় কারণ, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ করেছে মিয়ানমারের বৌদ্ধ সম্প্রদায়।
রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, যেখান থেকে তারা পালিয়ে এসেছে সেখানে আর ফিরে যাবে না। এদিকে, বাংলাদেশের তরফ থেকে বলা হয়েছে, তারা কাউকে জোর করে ফেরত পাঠাবে না। ২০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইনে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। গত বছরের আগস্টে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী অভিযান শুরুর পর সেখান থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জানিয়েছেন, আমরা দু’দেশের সরকারকেই আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি।
টিটিএন/আরআইপি