ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

হত্যাকারী ফোনে বলে, বসকে জানাও কাজ শেষ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ১২:১৩ পিএম, ১৩ নভেম্বর ২০১৮

সৌদির প্রসিদ্ধ সাংবাদিক ও ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাশোগিকে হত্যায় ১৫ সদস্যের একটি স্কোয়াড অংশ নেয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দৈনিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, খাশোগিকে হত্যা শেষে ১৫ সদস্যের একজন সদস্য তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন দেন। এ সময় তিনি তাকে বলন, ‘আপনার বসকে বলেন, কাজ শেষ।’ কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

খাশোগির হত্যাকাণ্ডের অডিও ক্লিপের সঙ্গে জড়িত তিনজনের, যারা তুরস্কের গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে এ রেকর্ড সংগ্রহ করেছেন, উদ্ধৃতি দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে, এখানে ‘আপনার বস’ বলতে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিল সালমানকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, এতদিন ধরে এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল। তবে ওই কর্মকর্তার কথোপকথন এ সন্দেহকে আরও জোরালোভাবে প্রমাণ করল।

খাশোগিকে হত্যা করতে সৌদি ইস্তাম্বুলে ১৫ সদস্যের একটি স্কোয়াড পাঠায়। ওই ১৫ সদস্যের মধ্যে মেহের আব্দুলআজিজ মুতরেব অন্যতম। সূত্রের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, মুতরেবই এই ফোনটি করেন এবং তিনি আরবি ভাষায় কথা বলেন।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুতরেব একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তাকে প্রায়ই যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে দেশ-বিদেশে ঘুরতে দেখা যায়। সে হিসেবে, মুতরেবকে যুবরাজের অনেক কাছের মনে করা হয়।

তুরস্কের গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুর্কি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, তারা বিশ্বাস করেন যে, যে ব্যক্তি ওই ফোনটি করেছিলেন, তিনি অবশ্যই যুবরাজের কাছের কেউ হবেন।

সৌদির এই প্রসিদ্ধ সাংবাদিককে তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে হত্যা করা হয়। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, হত্যার পর তার মরদেহ টুকরো টুকরো করা হয় এবং দেহাবশেষ এসিড ও কেমিক্যাল দিয়ে ভষ্ম করে ফেলা হয়। কনস্যুলেটে এসিড ও কেমিক্যালের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, নিরাপত্তা কর্মকর্তা মুতরেব ফোনটি করেছেন আরবি ভাষায়। তিনি তার ঊর্ধ্বতন সহযোগীকে বলেছেন, ‘কাজ শেষ’। তার অনুবাদ-এটাই দাঁড়ায়, যদিও ইংরেজিতে এর সঠিক অনুবাদ একটু ভিন্ন হতে পারে।

তুর্কি কর্মকর্তারা বলছেন, যুবরাজ-ই যে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, অডিও ক্লিপটি তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে না। তবে বিশ্লেষকদের মতে, যুবরাজের সম্পৃকক্ততা প্রমাণ করার জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সূত্র।

ব্রুস রিডেল। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক এই কর্মকর্তা বর্তমানে ব্রুকিংস ইন্সটিটিউটে কর্মরত রয়েছেন। তিনি এই ফোনকল প্রসঙ্গে বলেন, ‘সিগারেটে আগুন ধরানোর জন্য লাইটারের যেমন সম্পৃকক্তরা রয়েছে, তেমনিভাবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ফোনকলের সম্পৃক্তরা রয়েছে।’ তার মতে, কাউকে দোষী প্রমাণ করার জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রমাণ।

তবে সৌদির কর্মকর্তারা বরাবরই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুবরাজের সম্পৃকক্ততাকে অস্বীকার করে আসছেন। তাদের মতে, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এই বিষয়টি মোটেও আগে থেকে অবহিত ছিলেন না।

‘আপনার বসকে বলেন’-ফোনে কথোপকথনের এই অংশটি সম্পর্কে সৌদির মতামত জানতে চেষ্টা করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। এ বিষয়ে সৌদি কর্মকর্তারা পত্রিকাটি বলেছেন, ‘তারা তুরস্কের দেয়া অডিও ক্লিপটি শুনেছেন। তবে এ-সংক্রান্ত কোনো মন্তব্য শুনতে পারেননি তারা।’

গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টের কলামনিস্ট ও সাংবাদিক জামাল খাশোগি নিখোঁজ হন। সেখান থেকে আর বেরিয়ে না আসায় সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে যে, কনস্যুলেটে খুন হয়েছেন সৌদি রাজপরিবারের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা এই সাংবাদিক। এরপর অভিযোগ আসে, এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে সৌদি যুবরাজের হাত রয়েছে।

এসআর/পিআর

আরও পড়ুন