প্রাণশঙ্কা নিয়ে বন্দীই থাকতে হচ্ছে আসিয়াকে
পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার দায়ে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি পাওয়া খ্রিষ্টান নারী আসিয়া বিবিকে খালাস দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। তবে খালাসের রায়ের প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভের পরিপেক্ষিতে এখনই কারাগার থেকে মুক্তি মিলছে না আসিয়ার।
তিনি কারাগার থেকে ছাড়া পেলে প্রাণনাশের ঝুঁকি রয়েছে-এমন আশঙ্কা থেকেই আপাতত কারাগারেই থাকতে হচ্ছে তাকে। সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা সিএনএন।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুযোগ থাকলেও প্রাণনাশের আশঙ্কায় আপাতত দেশ ছেড়ে যেতে পারছেন না পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের পাঁচ সন্তানের জননী আসিয়া বিবি। আপাতত কারাগারকেই তার জন্য নিরাপদ মনে করা হচ্ছে। পরিস্থিতি অনুকূলে না আসা পর্যন্ত তাকে কারাগারে থাকতে হবে। এজন্য কারাগারকে সেইভাবেই প্রস্তুত করা হয়েছে।
সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে সিএনএন বলছে, আসিয়া যে কারাগারে রয়েছেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে ওই কারাগারের ওপর কর্তৃত্ব প্রয়োগের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তারাই আসিয়ার নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করবেন।
কারাগারে নজরদারি বাড়াতে অতিরিক্ত ক্যামেরা চালু রাখা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, আসিয়ার সঙ্গে যারা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন, তার কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন, তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
এদিকে আসিয়া বিবির আইনজীবী সাইফুল মালুক সাংবাদিকদের বলেছেন, জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইউ) তাকে দেশ ছেড়ে চলে নির্দেশ দিয়েছে। আদালত আসিয়ার মৃত্যুদণ্ড তুলে নিলে প্রাণশঙ্কায় পাকিস্তান থেকে পালিয়ে নেদারল্যান্ডে আশ্রয় তিনি। এর আগে ওই আইনজীবী সিএনএনকে বলেছিলেন, তিনি তার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।
হেগে সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী সাইফুল মালুক জানান, তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে নেদারল্যান্ড ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, সংস্থা দুইটির কাছে তিনি আবেদন করেছিলেন যাতে তাকে অন্তত এশিয়ার কোনো একটি দেশে না যাওয়া পর্যন্ত নেদারল্যান্ডে থাকার অনুমতি দেয়া হয়।
সম্প্রতি আসিয়া বিবির স্বামী আশিক মাসিহ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাতে তার পরিবারের জন্য আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন। এক ভিডিও বার্তায় এ আবেদন জানানো হয় বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে। তার এ আবেদনের পরই আইনজীবী সাইফুল মালুকের নেদারল্যান্ড ত্যাগ করার নির্দেশ আসল।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের জুনে আসিয়া বিবি একদল নারীর সঙ্গে কৃষি জমিতে কাজ করতেন। এসময় এক বালতি পানি নিয়ে দলের অন্য নারীদের সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। আসিয়া বিবি বালতি থেকে এক গ্লাস পানি নেন। এনিয়ে দলের অন্য নারীরা তার সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। তারা বলেন, আসিয়া বিবি মুসলিম নন, সেজন্য তিনি মুসলিমদের বালতির পানিতে গ্লাস ডুবিয়ে পানি তুলতে পারেন না।
বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালতে দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়, হযরত মুহাম্মদ (স.) কে নিয়ে তিনটি অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। ওই নারীরা আসিয়া বিবিকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের দাবি জানান।
নিজ বাড়িতে মারধরের শিকার হন আসিয়া বিবি। ব্লাসফেমির দায়ে তাকে মারপিট করেন অভিযোগকারীরা। পরে তদন্তের পর আসিয়া বিবিকে গ্রেফতার করে পাকিস্তান পুলিশ।
এসআর/এমএস