ইন্দোনেশিয়ার সেই বিমানের ভয়েস রেকর্ডার থেকে সংকেত পাওয়া যাচ্ছে না
ইন্দোনেশিয়ায় বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষে এখনও তল্লাশি চলছে। তবে দুর্ঘটনার এক সপ্তাহ পরেও ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর) খুঁজে পাওয়া যায়নি। শনিবার অনুসন্ধানকারীরা কিছু সময়ের জন্য সিভিআর থেকে সংকেত শুনতে পেলেও রোববার থেকে ওই সংকেত আর পাওয়া যাচ্ছে না। দেশটির অনুসন্ধান ও উদ্ধার সংস্থার প্রধানের উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা সিএনএন।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডুবুরিরা ওই ডিভাইসটি যা মূলত ব্ল্যাব বক্স নামে পরিচিত তার অবস্থান জানতে কাজ করে যাচ্ছেন। এটা উদ্ধার করা সম্ভব হলে বোয়িং৭৩৭ দুর্ঘটনার ঠিক আগ মুহূর্তে কী ঘটেছিল তা জানা যাবে।
ইন্দোনেশিয়ার অনুসন্ধান ও উদ্ধার সংস্থার প্রধান মুহাম্মদ সৌগি রোববার গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, উদ্ধার হওয়া ককপিট ভয়েস রেকর্ডার থেকে শনিবার এক ধরনের সুক্ষ শব্দ শোনা গিয়েছিল, তবে রোববার থেকে ওই শব্দ আর শোনা যাচ্ছে না।
‘আমরা ব্ল্যাক বক্স খুঁজে পাওয়ার আশপাশের ৫০ মিটারের মধ্যে তল্লাশি চালিয়েছি, তারপরও সিভিআর (ককপিট ভয়েস রেকর্ডার) খুঁজে পাইনি’, বলেন সৌগি।
ইতোমধ্যে বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) প্রথম ব্ল্যাক বক্স যা মূলত ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার নামে পরিচিত, তা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। এটির সাহায্যে জানা যায়, বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি এর আগে সর্বশেষ ফ্লাইটসহ ১৯টি ফ্লাইট সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।
বোয়িং৭৩৭ বিমানটিতে বিধ্বস্ত হওয়ার আগে সর্বশেষ মুহূর্তে কী ঘটেছিল তা জানতে চার দেশের ৬ জন ব্ল্যাক বক্স বিশেষজ্ঞ উদ্ধার হওয়া ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডারের তথ্য অনুসন্ধানে কাজ করে যাচ্ছেন।
এদিকে বুধবার পর্যন্ত অনুসন্ধান কাজ চলবে বলে জানিয়েছেন মুহাম্মদ সৌগি। তিনি বলেন, ‘এ অনুসন্ধানের প্রধান কাজই হবে কোনো মরদেহ রয়ে গেছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া এবং সিভিআরের অবস্থান জানা।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, সিভিআর খুঁজে পাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ যদি অনুসন্ধানকারীরা মনে করে থাকেন যে, এই বিমান দুর্ঘটনার সঙ্গে প্রতিদিন উড্ডয়মান হাজার হাজার বোয়িং৭৩৭ বিমানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
ডুবুরি দলের সদস্য হেনড্রা বলেছেন, কমলা রংয়ের ব্ল্যাক বক্সটি তারা অক্ষত অবস্থাতেই পেয়েছেন। তবে সেটি ককপিট ভয়েস রেকর্ডার নাকি ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি। কী কারণে প্রায় নতুন উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছিল, ব্ল্যাক বক্স পেলে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব হবে বলে এর আগে জানিয়েছিলেন ইন্দোনেশিয়ার কর্মকর্তারা।
তবে ব্ল্যাক বক্স নামে ডাকা হলেও এর আসল নাম হলো ফ্লাইট রেকর্ডার। যেটি বিমান চলাচলের সর্বশেষ সব তথ্য রেকর্ড করে রাখে। এভিয়েশন বা বিমান নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এটাকে ব্ল্যাক বক্স নামে ডাকেন না, তারা বলেন ফ্লাইট রেকর্ডার।
নামে ব্ল্যাক বক্স হলেও আসলে কালো কোন বস্তু নয় এটি। বরং এর রং অনেকটা কমলা ধরনের। এটি অত্যন্ত শক্ত ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি একটি বাক্স, যা পানি, আগুন, চাপ বা যেকোনো তাপমাত্রায় টিকে থাকে। এটি দুইটি অংশের সমন্বয়ে আসলে একটি ভয়েস রেকর্ডার। বিমান চলাচলের সময় সব ধরণের তথ্য এটি সংরক্ষণ করে রাখে।
এর মধ্যে দুই ধরনের তথ্য সংরক্ষিত থাকে। একটি হলো ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার বা এফডিআর, যেটি বিমানের ওড়া, ওঠানামা, বিমানের মধ্যের তাপমাত্রা, পরিবেশ, চাপ বা তাপের পরিবর্তন, সময়, শব্দ ইত্যাদি নানা বিষয় নিজের সিস্টেমের মধ্যে রেকর্ড করে রাখে।
ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর) নামের আরেকটি অংশে ককপিটের ভেতর পাইলদের নিজেদের মধ্যের কথাবার্তা, পাইলটদের সঙ্গে বিমানের অন্য ক্রুদের কথা, ককপিট এর সঙ্গে এয়ার কন্ট্রোল ট্রাফিক বা বিভিন্ন বিমান বন্দরের সঙ্গে রেডিও যোগাযোগের কথা রেকর্ড হতে থাকে।
ফলে কোন বিমান দুর্ঘটনায় পড়লে এই ব্ল্যাক বক্সটি খুঁজে বের করাই হয়ে পড়ে উদ্ধারকারীদের প্রধান লক্ষ্য। কারণ এটি পাওয়া গেলে সহজেই ওই দুর্ঘটনার কারণ বের করা সম্ভব হয়। বাক্সটির বক্স উজ্জ্বল কমলা হওয়ায় সেটি খুঁজে পাওয়া সহজ হয়। সমুদ্রের তলদেশেও ৩০ দিন পর্যন্ত ব্লাক বক্স অক্ষত থাকতে পারে।
এটি অত্যন্ত শক্ত ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি করা হয়। কয়েকটি লেয়ার দিয়ে এটি এমনভাবে তৈরি করা হয় যে, প্রচণ্ড উত্তাপ, ভাঙচুর, পানি বা প্রচণ্ড চাপের মধ্যেও সেটি টিকে থাকতে পারে। স্টেইনলেস স্টিল বা টাইটানিয়ামের খোলস দিয়ে বক্সের আবরণ তৈরি করা হয়। টিকে থাকার অনেকগুলো পরীক্ষায় পাস করার পরেই ব্ল্যাক বক্সগুলোকে বিমানে সংযোজন করা হয়।
আধুনিক ব্ল্যাক বক্সগুলোয় ২৫ ঘণ্টা পর্যন্ত বিমানের ফ্লাইট ডাটা ধারণ করে রাখতে পারে। এর ভেতর অনেকগুলো মেমরি চিপ পাশাপাশি সাজানো থাকে। এখানে তথ্য সরবরাহ করার জন্য বিমানের বিভিন্ন জায়গায় অনেক সেন্সর লাগানো থাকে।
প্রসঙ্গত, ২৯ অক্টোবর ১৮৯ জন যাত্রী নিয়ে লায়ন এয়ারের ওই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। জাকার্তা থেকে উড্ডয়নের ১৩ মিনিটের মধ্যে কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে বিমানটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং পরে দেখা যায় সেটি জাভা সাগরে বিধ্বস্ত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে যে, আরোহীদের সবাই হয়তো মারা গেছেন।
এসআর/জেআইএম