ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

সৌদির পেছনে এত লাগলেন কেন এরদোয়ান?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৭:১২ পিএম, ২৭ অক্টোবর ২০১৮

জাতিসংঘ থেকে শুরু করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইসরায়েল, জার্মানি কিংবা ফরাসী বুদ্ধিজীবী- গত কয়েকবছরে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সমালোচনার শিকার হওয়া গোষ্ঠীর সংখ্যা গুণে শেষ করা যায় না।

এবার সেগুলোর সঙ্গে সৌদি আরব সম্পর্কে এরদোয়ানের মন্তব্য তুলনা করা যাক। সৌদি আরব তাদের তুর্কি দূতাবাসে সাংবাদিক জামাল খাশোগির নিহত হওয়ার ঘটনা স্বীকার করার পর এরদোয়ান বলেন, বাদশাহ সালমানের সত্যবাদিতা নিয়ে সন্দেহ করার কোনও কারণ নেই আমার কাছে।

এরদোয়ানের মুখপাত্র সৌদি আরবকে একটি 'বন্ধুত্বপূর্ণ, ভাতৃপ্রতিম দেশ' বলে মন্তব্য করেছেন। তা সত্ত্বেও তুরস্ক সরকারের সমর্থক গণমাধ্যম রিয়াদের ওপর চাপ তৈরি করার উদ্দেশ্যে খাশোগি হত্যার খবর প্রকাশ করছে, যেখানে এমন ইঙ্গিতও করা হয়েছে যে অত্যন্ত ক্ষমতাধর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের জ্ঞাতসারে বা তার আদেশে হত্যা করা হয়েছে খাশোগিকে।

কাজেই প্রশ্ন উঠতেই পারে, প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আসলে কী চাল চালছেন? তুরস্ক থেকে বিবিসির মার্ক লোয়েন লিখেছেন, তিনি যতটুকু জানতে পেরেছেন, এই বিষয়ে তার (এরদোয়ানের) সংযত কণ্ঠের কারণ সৌদি আরবকে এটা বোঝানো যে, বিষয়টি তুরস্ক ও সৌদি আরবের সম্পর্কে অবনতি ঘটাবে না।

দুই দেশের সম্পর্কে টানাপড়েন চলতে থাকলেও এই মুহূর্তে সম্পর্ক নষ্ট করার কোনও উদ্দেশ্য তুরস্কের নেই। বাদশাহ সালমানের ওপর সরাসরি দোষারোপ না করে এবিষয়ে তার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এরদোয়ান। এমনকি সংসদে এবিষয়ে বক্তব্য দেয়ার সময় যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নামও উল্লেখ করেননি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট।

যুবরাজকে নিজের সমকক্ষ হিসেবে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করতে চান না বলেই এরদোয়ান যুবরাজের নাম উল্লেখ করেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। আঙ্কারার উদ্দেশ্য, সৌদি বাদশাহ সালমান ও তার পুত্রের মধ্যে একটি বিভাজন তৈরি করা। কিন্তু এই উদ্দেশ্য সফল করতে পারে শুধুমাত্র ওয়াশিংটন।

যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের মিত্র ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যদি যুবরাজের বিরুদ্ধে যেতে প্ররোচিত করা যায় তাহলে হয়তো বাদশাহ সালমানের অবস্থান পরিবর্তন হতে পারে।

আঞ্চলিক রাজনীতির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীরা

তবে ৮২ বছর বয়সী বাদশাহ তার পুত্রকে ক্ষমতা থেকে দূরে সরিয়ে দেবেন, এমনটা মনে করার কোনও কারণ নেই। খাশোগি হত্যার পর বাদশাহর একটি পদক্ষেপ ছিল সৌদি গোয়েন্দা সংস্থার সংস্কারের ঘোষণা দেয়া; যেই সংস্কারটিও হবে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের তত্ত্বাবধানেই।

এসবই ওই অঞ্চলের রাজনীতিকে প্রভাবিত করার কৌশল। ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র ভূমির রক্ষক হিসেবে সৌদি আরবকে সম্মান করে তুরস্ক; এরদোয়ানের ইসলামপন্থী সরকারও আন্তরিকভাবে এমনটাই মনে করে। কিন্তু মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বের প্রশ্ন যখন চলে আসে, তখন মোহাম্মদ বিন সালমানকে অন্যতম প্রধান একজন প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন এরদোয়ান।

মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্কের নিকটতম মিত্র কাতারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বাস্তবায়ন হয়েছে যুবরাজ সালমানের কৌশল অনুযায়ী। মুসলিম ব্রাদারহুডকে কঠোর হাতে দমন করার বিষয়টিও যুবরাজের নির্দেশনা অনুসারেই হয়েছে। এরদোয়ানের ক্ষমতাসীন দল একে পার্টি'র সাথে যুক্ত ছিল মুসলিম ব্রাদারহুড।

এবং এরদোয়ানের অপছন্দের ইসরায়েলের প্রতি সৌদি যুবরাজের মনোভাব এবং ইরানের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের কঠোর অবস্থানের কারণেও মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক রাজনীতিতে রিয়াদ এবং আঙ্কারা বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে।

এরদোয়ানের ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল

খাশোগি হত্যার ঘটনায় সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসর রিয়াদের পক্ষ নেয়ার পর দুই দেশের সঙ্গেই সম্পর্কে অবনতি হয়েছে আঙ্কারার। ২০১৬ সালে তুরস্কে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পেছনে আমিরাতের সমর্থন ছিল বলে তুরস্কের সরকার সন্দেহ করে আসছে।

আমিরাতের অধিবাসীদের সম্প্রতি 'দুর্দশাগ্রস্ত জনগণ' বলে কটাক্ষ করেন এরদোয়ান। মুসলিম ব্রাদারহুডকে উচ্ছেদ করায় মিশরের আব্দুল ফাত্তাহ আল-সিসিকেও কখনো ক্ষমা করবেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জামাল খাশোগির অভিযুক্ত হত্যাকারীদের বহন করা সৌদি বিমানটি জ্বালানী নিতে কায়রো আর দুবাইয়ে থামে - যে কারণে ওই ঘটনায় এই দুই দেশের সংশ্লিষ্টতার সন্দেহও উড়িয়ে দেয়া যায় না। এরদোয়ানের বর্তমান কৌশল যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ।

অত্যন্ত ক্ষমতাধর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে নিকট ভবিষ্যতে দীর্ঘসময়ের জন্য সৌদি আরবের শাসক হিসেবে দেখা যেতে পারে। তুরস্ক বিরোধিতা করায় তাদের বিরুদ্ধে যুবরাজের চাপা ক্ষোভ আঞ্চলিক রাজনীতিতে তুরস্ককে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।

জামাল খাশোগির ছেলে, সৌদি আরবের বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই যার, তার সঙ্গে যুবরাজের করমর্দনের ছবিটিই প্রকাশ করে কী পরিমাণ ক্ষমতার অধিকারী তিনি। বার্তাটা বেশ পরিষ্কার : আমরা নিজেদের মধ্যে সমস্যার সমাধান করেছি, কাজেই আপনারাও এ বিষয়ে আর বেশি মাথা ঘামাবেন না।

একই গল্পের সঙ্গে এতগুলো বিষয় জড়িত থাকার ঘটনা কিন্তু খুব একটা দেখা যায় না। একটি বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড, তা ধামাচাপা দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা, আঞ্চলিক রাজনীতির মোড় পরিবর্তন, ওয়াশিংটন ও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি আর শক্তিশালী তেল উৎপাদকের সাথে ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর সম্পর্কে টানাপড়েন; সব মিলিয়ে জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে খাশোগি হত্যা নিয়ে।

এসআইএস/জেআইএম

আরও পড়ুন