চালু হলো সুমদ্রের ওপর নির্মিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ ব্রিজ
আনুষ্ঠানিকভাবে সাগরের ওপর নির্মিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্রিজটি উন্মুক্ত করল চীন। মঙ্গলবার চীনের হংকং-ঝুহাই-ম্যাকাও সেতুর উদ্বোধন করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। নির্মাণকাজ শুরু করার নয় বছর পর চালু হলো এই সেতু।
চীনের মুল ভূখণ্ডের ঝুহাই শহরের সঙ্গে ৫৫ কিলোমিটার বা ৩৪ মাইল দীর্ঘ এ সেতুটি যুক্ত করবে হংকং ও ম্যাকাওকে। কর্তৃপক্ষ বলছে, এর ফলে আগে যেখানে এ পথ পাড়ি দিতে তিন ঘণ্টার মতো সময় ব্যয় হতো, সেক্ষেত্রে এখন সময় লাগবে মাত্র আধা ঘণ্টা।
সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার। সেতুটি নির্মাণে অনেক বেশি সময় ব্যয় করা হয়েছে। তবে প্রকৌশলী ও স্থাপত্যের দিক থেকে দুর্দান্ত হলেও সেতুটি নিয়ে অনেক সমালোচনা হচ্ছে। বুধবার থেকে সেতুটি স্বাভাবিক যাতায়াতের জন্য খুলে দেয়া হবে। এ সেতুটি দক্ষিণ চীনের গুরুত্বপূর্ণ উপকূলীয় শহর হংকং, ম্যাকাও এবং ঝুহাইয়ের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করবে।
ভূমিকম্প এবং টাইফুন প্রতিরোধী করে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে। এটি নির্মাণে প্রায় ৪ লাখ টন স্টীল ব্যবহার করা হয়েছে যা দিয়ে ৬০টি আইফেল টাওয়ার বানানো সম্ভব।
সেতুটির প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার পার্ল নদীর ওপর দিয়ে গেছে আর জাহাজ চলাচল অব্যাহত রাখার সুবিধার্থে ৬ দশমিক ৭ কিলোমিটার রাখা হয়েছে সাগরের নীচে টানেলে। এর দু অংশের মধ্যে সংযোগস্থলে তৈরি করা হয়েছে একটি কৃত্রিম দ্বীপ। আর বাকী অংশ সংযোগ সড়ক, ভায়াডাক্ট আর ভূমিতে টানেল যা ঝুহাই ও হংকংকে মূল সেতুর সঙ্গে যুক্ত করেছে।
হংকং, ম্যাকাও এবং আরও নয়টি শহরকে যুক্ত করে একটি বৃহত্তর সাগর এলাকা তৈরি প্রকল্পের অংশ হিসেবে এ সেতুটি নির্মাণ করেছে চীন। এর আগে ঝুহাই থেকে হংকং যেতে সময় লাগতো চার ঘণ্টার মতো। সেখানে নতুন এ সেতুর কারণে সেখানে লাগবে মাত্র আধা ঘণ্টা। এ এলাকায় এখন প্রায় ছয় কোটি আশি লাখ মানুষ বসবাস করে।
তবে যে কেউ চাইলেই সেতুটি অতিক্রম করতে পারবে না। যারা সেতু পাড়ি দিতে চান তাদের বিশেষ অনুমতি নিতে হবে আর সব যানবাহনকেই টোল দিতে হবে। এ সেতুতে কোন গণপরিবহণ থাকবেনা তবে যাত্রী ও পর্যটকদের জন্য শাটল বাস থাকবে। কর্তৃপক্ষ আশা করছে দিনে প্রায় ৯ হাজার ২শ যানবাহন এ সেতু দিয়ে চলাচল করবে।
সংযোগ সড়ক ও কৃত্রিম দ্বীপসহ সেতুটি নির্মাণে মোট খরচ হয়েছে দুই হাজার কোটি ডলার। এর মধ্যে শুধুমাত্র সেতুর মূল অংশ নির্মাণেই খরচ হয়েছে প্রায় সাত বিলিয়ন ডলার। কর্মকর্তারা বলছেন, দেশটির অর্থনীতিতে এটি প্রায় ১ দশমিক ৪৪ ট্রিলিয়ন ডলার যোগ করবে যদিও এ ব্যাখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। টোল থেকে বছরে আসবে মাত্র আট কোটি ৬০ লাখ ডলার। আর এ সব কারণেই সমালোচকরা এর নাম দিয়েছেন শ্বেতহস্তী।
টিটিএন/আরআইপি